মোহাম্মদ অংকন : শিক্ষামন্ত্রণালয় প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে বদ্ধ পরিকর। কিন্তু কোনো উদ্যোগ ও পদক্ষেপই কাজে আসছে না। বিগত সব বছরের মহামারীরূপে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ধারণা থেকে এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা সামনে রেখে সরকারের পক্ষ থেকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সরকারের নেয়া এসব সিদ্ধান্তের একটি হচ্ছে, পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার্থীদের আসন গ্রহণ করতে হবে। অন্যান্য সিদ্ধান্তের মধ্যে আছে, পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত সব কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে, সব শিক্ষা বোর্ডে অভিন্ন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেওয়া হবে, প্রশ্নফাঁসের প্রমাণ পাওয়া গেলে পরীক্ষা বাতিল করা হবে, শুধু কেন্দ্রসচিব একটি সাধারণ ফোন ব্যবহার করতে পারবেন ইত্যাদি। এছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে পরে ঘোষণা করা হয়েছে, প্রশ্নপত্র ফাঁসকারীকে ধরিয়ে দিতে পারলে নগদ ৫ লাখ টাকা পুরষ্কার দেওয়া হবে। মূলত প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ করতেই এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে পরীক্ষার হলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ঢুকছে। কিন্তু তাতে প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধ করা যায়নি। চলতি এসএসসি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে।
বর্তমান প্রশ্নপত্র ফাঁসের এ ঘটনা থেকে উপলব্ধি করা যাচ্ছে, প্রশ্নপত্র ফাঁসে ব্যবহার করা হচ্ছে ভার্চুয়াল মিডিয়া ও ইলেকট্রনিক ডিভাইস। ফেসবুকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিজ্ঞাপনই প্রচার হচ্ছে যেন সর্বত্র। বিভিন্ন আইডি থেকে প্রশ্ন আছে জানিয়ে পোস্ট দেওয়া হচ্ছে। ইনবক্সে যোগাযোগ করতে বলা হচ্ছে। দেওয়া হচ্ছে মোবাইল নম্বর ও যোগাযোগের ঠিকানা। ফেসবুকে পাওয়া এসব প্রশ্নের সঙ্গে এসএসসির বাংলা প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রের নৈর্ব্যক্তিক অংশের প্রশ্নের হুবহু মিলও পাওয়া গিয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত এসব পরীক্ষা বাতিলের কোনো ঘোষণা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে আসেনি। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, বাংলা দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা শুরুর আধ ঘণ্টা থেকে ৪৫ মিনিট আগে ফেসবুকের বিভিন্ন আইডি থেকে সমাধানসহ প্রশ্ন সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছিল। এর পর রাতে ‘বাংলা দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্ন আছে’ বলে জানানো হয়েছিল। নানা উপায়ে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত চাওয়া হয়েছিল। ফেসবুকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রসঙ্গটি বেশ পুরনো। এজন্য শিক্ষামন্ত্রী পরীক্ষা চলাকালীন ফেসবুক বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিতে চেয়েছিলেন। সামাজিক যোগযোগ মাধ্যেমে নানা ট্রোল সৃষ্টি করে তাকে এক প্রকার অপমান করা হয়েছে। পরে তিনি সিদ্ধান্ত বদলান।
সরকারের এত উদ্যোগ নেওয়ার পরও প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে। তাহলে কি আমাদের ধরেই নিতে হবে যে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের কাছে সরকার ও কর্তৃপক্ষ নিতান্তই অসহায়। প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে কর্তৃপক্ষের নিকট কিছু প্রস্তাব তুলে ধরা হলো:
ক) প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে উচ্চপর্যায়ে একটি কমিটি গঠন করা দরকার। জবাবদিহিমমূলক এই কমিটি বিস্তারিত পর্যবেক্ষণ করে দেখবে, কীভাবে প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে, এসব অপকর্মের সাথে কারা জড়িত, জড়িতদের উদ্দেশ্য কী ইত্যাদি নানা বিষয় উদঘাটন করা।
খ) প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় একেবারে গোড়ায় হাত না দিলে রোধ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। যে চক্রটি এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত, তাদের খুুঁজে বের করতে না পারলে প্রশ্নফাঁস রোধ করা সম্ভব হবে না। তাই যে কোনো মূল্যে তাদের হাতের নাগালে আনতে হবে। এক্ষেত্রে অপরাধীদের ধরিয়ে দিলে পুরষ্কার দেওয়া হবে, এমন ঘোষণার বাস্তবায়ন করতে হবে।
গ) প্রশ্নপ্রণয়ন, ছাপাখানা থেকে শুরু করে প্রশ্নপত্র পরীক্ষার হলে বিতরণের আগে পর্যন্ত কড়া নজরদারির ব্যবস্থা করতে হবে। না হলে সরকারকে প্রতিটি পরীক্ষাতেই বিব্রতকর পরিস্থিতে পড়তে হবে। আমরা আশা করব, প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে সরকার অবশ্যই একটি দ্রæত ও কার্যকর ব্যবস্থা নেবে।
লেখক: সম্পাদক, কাঁচাগোল্লা ম্যাগাজিন, ঢাকা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন