প্রকৃতিতে এখন শীতের দাপট অনুভূত হচ্ছে। শৈত্যপ্রবাহে থমকে গেছে মানুষের জীবনযাত্রা। দিনে কুয়াশার চাদরে ঢাকা সূর্য, রাতে হালকা বৃষ্টির মতো কুয়াশাপাত। ইউএনডিপি-র তথ্যমতে, বাংলাদেশে ৬ কোটির বেশি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। এদের ৪০ শতাংশের নেই শীতবস্ত্র, ৩০ শতাংশের নেই দুটি জামা, ৯৬ শতাংশের নেই থাকার নিজস্ব ঘর। ভূমিহীন, খেতমজুর, ছিন্নমূল, বস্তিবাসী, ভবঘুরে, খোলা আকাশের নিচে বসবাসরত প্রায় ১৫ লাখ ভাসমান পরিবার শীতবস্ত্রের অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছে। অসহায় শীতার্ত মানুষ কাগজ, পাতা ও খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। প্রচÐ শীতের কারণে খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ কাজ করতে না পারায় আয়-রোজগার কমে গেছে। কৃষিকাজসহ দৈনন্দিন কাজ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ব্যাংক-বীমা, হাট-বাজার, রাস্তাঘাট, মোড় ও খেলার মাঠে মানুষের উপস্থিতি কম। শীতকালীন ভাইরাসজনিত সর্দিকাশি, গলাব্যথা, জ্বর, টাইফয়েড, ডায়রিয়া, কোল্ড ডায়রিয়া, রক্ত আমাশয়, নিউমোনিয়া, হাঁপানি, অ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট, মেনিনজাইটিস প্রভৃতি রোগে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। গৃহপালিত পশুপাখি শীতের প্রকোপে কাহিল। মাত্রাতিরিক্ত শীত ও লাগাতার ঘন কুয়াশা ও শৈত্যপ্রবাহের কারণে আলু, শাকসবজি ও ইরি-বোরো ধানের বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বীজ সহজে অঙ্গুরোদগম হচ্ছে না। কোল্ড ইনজুরি ও ছত্রাকে আক্রান্ত বীজতলার কচি চারাগুলো প্রথমে হলুদ ও পরে তামাটে বর্ণ ধারণ করছে। আলুখেতে মড়ক লেগেছে। ঘন কুয়াশায় আলুর পাতা কুঁচকে ফ্যাকাশে হলুদ দাগ দেখা দিয়েছে। প্রতিকূল ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে চাষাবাদে মন্দাভাব চলছে। বাংলাদেশে সাধারণত তিন মাত্রার শৈত্যপ্রবাহ হয়। তাপমাত্রা ১০ থেকে ৮ ডিগ্রি হলে শৈত্যপ্রবাহটি হয় মৃদু, ৮ থেকে ৬ ডিগ্রি হলে মাঝারি এবং ৬ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হয়। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। কনকনে হিমেল হাওয়া, ঝড়-বৃষ্টি ও শৈত্যপ্রবাহের কারণে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। অনেক সময় ছাত্রশূন্য স্কুলে শিক্ষকদের গালগল্প করে সময় কাটাতে হয়। বর্তমানে গুটিকয়েক শিক্ষার্থী নিয়ে স্কুলগুলো চলছে ঢিলেঢালাভাবে। শীতকবলিত দুর্গত এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ঘোষণা করা দরকার। প্রাথমিক স্তরে প্রায় মাসব্যাপী গ্রীষ্মকালীন অবকাশ থাকলেও শীতকালীন অবকাশ বলতে গেলে অনুপস্থিত। শীতের আগেই শেষ হয়ে যায় নামমাত্র শীতকালীন ছুটি। প্রতিবছর মধ্য ডিসেম্বর থেকে পুরো জানুয়ারি মাস (৪৫ দিন) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখা প্রয়োজন। প্রস্তাবিত শীতকালীন ছুটির সময় পাঠদান কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ রেখে সীমিত পরিসরে প্রশাসনিক কার্যক্রম চালু রাখা যেতে পারে।
প্রতিবছর শীত দুর্যোগ আকার ধারণ করে। শীতকবলিত দুর্গত এলাকায় জরুরিভিত্তিতে পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র এবং ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম জোরদার করা উচিত। মানবিক, সামাজিক এবং ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে অভাবী মানুষের শীতবস্ত্রের অভাব মোচনে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি বিত্তবান, ছাত্র-শিক্ষক, সাংবাদিক সকলের স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। সম্মিলিত উদ্যোগ আর প্রচেষ্টায় পরিত্রাণ পেতে পারে অগণিত শীতার্ত প্রাণ। আপনার ফেলে রাখা অব্যবহূত কাপড়টি একজন মানুষকে বাঁচাতে পারে শীতের মরণ ছোবল থেকে। আসুন আমরা শীতার্ত মানুষের জন্য সাহায্য-সহযোগিতার হাত প্রসারিত করি।
সতীর্থ রহমান,
দিনাজপুর
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন