রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

মাঠে তৎপর আ’লীগ নেতৃত্ব শূন্য বিএনপি নেতাকর্মীরা

প্রকাশের সময় : ২৯ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মামুনুর রশীদ মামুন/ আবুল কালাম আজাদ, বিশ্বনাথ ও বালাগঞ্জ (সিলেট) থেকে : বিশ্বনাথ, বালাগঞ্জ ও ওসমানী নগর উপজেলা নিয়ে জাতীয় সংসদের সিলেট-২ আসনটি বিএনপির ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত। কিন্তু কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সাবেক এমপি ইলিহাস আলী নিখোঁজের পর বিএনপির ঘাঁটি এখন নড়বড়ে।
ইলিয়াস বিহীন বিএনপি এখন অনেকটা দিশেহারা। দলীয় নেতা কর্মীরাও সঠিক নেতৃত্বের অভাবে এখন অনেকটা পথহারা। অথচ এ আসনের ২২টি ইউনিয়নের মধ্যে একসময় মাত্র ৫টি ইউপিতে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যন নির্বাচিত হয়ে ছিল। কিন্ত এখন দিন বদলে গেছে। বিএনপির নেতৃত্বের অভাবে আসন্ন ইউপি নির্বাচনে বিশ্বনাথ বালাগঞ্জ এবং ওসমানী নগরের চিত্র এবার পরিবর্তন হতে পারে। তবে স্থানীয় বিএনপির নেতারা বলছেন, ইলিয়াস আলীর স্ত্রী বিএনপি নেত্রী তাহমিনা রুশদি লুনার সঠিক দিক নিদের্শনা পেলে এবং নির্বাচন যথাযথ হলে এবারও ইউপি নির্বাচনে বিএনপির পাল্লাই ভারী হবে। তৃণমূল নেতা কর্মীদের মতামতকে মূল্যায়ন করে ত্যাগী এবং সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন দিলে আবারও বিএনপির জয় জয়াকার হবে। এমন আশবাদ ব্যক্ত করছেন স্থানীয় নেতা কর্মীরা।
ইউপি নির্বাচনের দিনক্ষণ যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই ব্যস্ততা বাড়ছে প্রার্থী-সমর্থকদের। বিগত দিনের সকল নির্বাচনী পরাজয়, ব্যর্থতা ও নানা দুর্নাম ঘুচিয়ে সঠিক নেতৃত্বের মাধ্যমে ভোট বিপ্লব ঘটিয়ে নিজেদের বিজয় সুনিশ্চিত করতে চান তারা। এদিকে আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা বলছেন, দলীয় আভ্যন্তরীণ কোন্দল, দুর্বল নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতা না থাকায় বিগত ইউনিয়ন ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের ভরাডুবি হয়। সিলেট-২ আসনে মোট ২২টি ইউনিয়নের মধ্যে বিগত নির্বাচনে মাত্র ৫টি ইউপিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা বিজয়ী হন। বাকি ১৭টির মধ্যে ১৫টি বিএনপি এবং ২টিতে জামায়াত সমর্থিতরা জয় লাভ করেন। এর মধ্যে আ’লীগের সাবেক এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরীর জন্ম স্থান বিশ্বনাথ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের ৭টিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু এর সব ক’টিতেই আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের ভরাডুবি ঘটিয়ে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিতদের গলায় বিজয় মাল্য পরিয়ে দিয়েছিল নেতা কর্মীরা। অনেকে এটাকে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনি সম্পাদক এম ইলয়াস আলীর ‘নিখোঁজ’ ঘটনার ফসল বলে মনে করেন। সরকারি দলের প্রতি এলাকাবাসীর ক্ষোভই আ’লীগের ভরাডুবি হয়েছিল বলে অনেকে মনে করছেন।
এছাড়া বিগত বিশ্বনাথ এবং বালাগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ সমর্থিতদের পরাজিত করে বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান-ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা ফলাফল ঘরে তুলেন।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আ’লীগের এমপির পরিবর্তে জাতীয় পার্টির নেতা ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া হওয়ায় আওয়ামী লীগের অবস্থান আগের মত আর তেমনটা নেই। জানা গেছে, ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৎকালীন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নেতা, বর্তমান জেলা আ’লীগ সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরী বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এম. ইলিয়াস আলীকে পরাজিত করে সিলেট-২ আসনে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। নির্বাচিত হওয়ার পর কতিপয় সুবিধাভোগী নেতা তাকে তুরোপের তাস বানিয়ে নিজেদের আখের ঘোচাতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন। এতে উপেক্ষিত হন দলের অনেক পরীক্ষিত ত্যাগী নেতা-কর্মী। ধীরে ধীরে দানাবাধে বিভক্তির। এরপর শফিকুর রহমান ও আনোয়ারুজ্জামান দুটি গ্রæপ সৃষ্টি হয়। এতে অনেক সময় এ দুটি গ্রæপের মধ্যে হাতাহাতি ও সংঘর্ষের ঘটেছে। বর্তমানে সিলেট-২ আসনে আওয়ামী পরিবারের কাÐারী হিসেবে ইতোমধ্যে নিজেকে জানান দিয়েছেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক, বঙ্গবন্ধু পরিবারের ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। তিনি বিশ্বনাথ, বালাগঞ্জ ও ওসমানীনগরে একাধিক জনসভা করে আগামী সংসদ নির্বাচনে নিজের প্রার্থীতার কথা জানান দিয়েছেন। আর তাই সিলেট-২ আসনের স্থানীয় আওয়ামী পরিবারের দ্বিধাবিভক্ত তৃণমূল নেতা-কর্মীরা উচ্ছ¡াসিত হয়ে একত্রিত হতে শুরু করেছেন। তারা আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর নেতৃত্বে সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি করে আসন্ন ইউপি নির্বাচনে সঠিক প্রার্থী বাচাই পূর্বক অতীতের সকল ব্যর্থতাকে জয় করে ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে নির্বাচনে শতভাগ সাফল্য অর্জন করতে চান। এজন্য আসন্ন ইউপি নির্বাচনের পূর্বেই সিলেট-২ আসনে আওয়ামী পরিবারে নতুন নেতৃত্ব নির্ধারণের কোন বিকল্প নেই। চলমান নেতৃত্ব বিগত ইউপি নির্বাচন ও উপজেলা নির্বাচনে সঠিক প্রার্থী নির্বাচনে ভুল, আভ্যন্তরীন কোন্দল এবং বিএনপি-জামায়াত প্রীতির কারণেই ভরাডুবি হয়েছিলো বলে নেতা-কর্মীরা মনে করেন।
তবে এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান চৌধুরী বলছেন অন্য কথা। গত ইউনিয়ন নির্বাচন দলীয় ছিল না। এবার আ’লীগের দলীয় ত্যাগীদের মনোনয়ন দেয়া হবে। বিজয় আ’লীগের হবে বলে মন্তব্য করেন। আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হতে তিন উপজেলার ২২টি ইউনিয়নে বিভিন্ন দল থেকে প্রায় দু’শতাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। তবে অন্যান্য দলের তুলনায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তৎপরতা বেশ চোখে পড়ার মতো। এসুযোগে মনোনয়ন বাণিজ্যের আশায় আগামী ইউপি নির্বাচনে ‘বসন্তের কোকিলদের’ মনোনয়ন দেয়ার পায়তারা চলছে বলে অভিযোগ তৃণমূূূূূূূূূূূূূল নেতা-কর্মীদের। এছাড়াও কৌশলে অযোগ্য, দুর্বল আর জনবিচ্ছিন্ন নেতাদের প্রার্থী দাঁড় করিয়ে বিএনপি-জামায়াত প্রার্থীদের জয়ের পথ সুগম করার অপচেষ্টা হচ্ছে বলেও অভিযোগ তুলছেন অনেকে।
এ বিষয়ে কথা হলে বিশ্বনাথ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক এ এইচ.এম. ফিরোজ আলী ইনকিলাবকে বলেন, শফিকুর রহমান চৌধুরী উড়ে এসে জুড়ে বসে রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবে সুবিধাভোগীদের সাথে নিয়ে নিজেদের আখের ঘোঁচাতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ায় উপেক্ষিত হন দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীরা। নির্বাচনে ধারাবাহিক ভরাডুবি ঠেকাতে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব থেকে তাকে অপসারণ করে নতুন নেতৃত্ব নির্ধারণের কোন বিকল্প নেই বলেও তিনি দাবি করেন।
এ বিষয়ে ওসমানীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদাল মিয়া বলেন, দলীয় কোন্দল রয়েছে এটা সত্য। যদি সে কোন্দল সামাধান না করা হয় তাহলে ইউনিয়ন নির্বাচনে সিলেট-২ আসনের তিন উপজেলায় আওয়ামী লীগের ভরাডুবি হবে।
এবিষয়ে কথা হলে সিলেট জেলা আ’লীগ সাধারণ সম্পাদক, সিলেট-২ আসনের সাবেক এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, গত ইউনিয়ন নির্বাচন দলীয় ছিল না। এবার দলীয়ভাবে নৌকা প্রতীকে ত্যাগী নেতাদের মনেনয়ন দেয়া হবে। যারা দল মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিবে তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন