শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

কোন দোষে বেগম খালেদা জিয়া আজ কারাগারে

| প্রকাশের সময় : ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

 শামসুল আলম

(পূর্বে প্রকাশিতের পর)
কুয়েত থেকে আসা এই ফান্ড কি বেগম জিয়া চেয়ে এনেছিলেন? না। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোস্তাফিজ সাহেবের ব্যক্তিগত উদ্যোগে এই ফান্ড আসে। পরে হয়ত প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মৌখিক নির্দেশে প্রধানমন্ত্রীর সচিব কামাল সিদ্দিকী ঐ বেসরকারি ফান্ডের দেখভাল করতেন। রাষ্ট্রীয় টাকা না হওয়া স্বত্তে¡ও তিনি সেটা হিসাব রাখতেন। আর কামাল সিদ্দিকীর কাজ সহজ করার জন্য তার পিএস জগলুল পাশা (১২/০৯/১৯৯২ থেকে) বা তা পূর্বসুরি ড. সিদ্দিকীকে সহায়তা করতেন। এখানে উল্লেখ্য, ১৯৯১ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে সর্বদলীয় সম্মতিক্রমে দেশে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা পরিবর্তন করে সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা চালু হয়। নতুন সরকার ব্যবস্থায় বেগম খালেদা জিয়া সরকারের নির্বাহী প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর পুনঃশপথ নেন ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৯১। প্রধানমন্ত্রীর অফিসের নতুন অর্গানোগ্রাম হয়, তাতে প্রধানমন্ত্রী সানুগ্রহ হয়ে আমাকে তাঁর প্রটোকল অফিসার হিসেবে নিয়োগ করেন। বাংলাদেশ সচিবালয় ছেড়ে আমরা পুরাতন সংসদ ভবনস্থ (সাবেক রাষ্ট্রপতির সচিবালয়ে) অফিস শুরু করি। সেখানে রাষ্ট্রপতির অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারী সমেত বিশাল জনবল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নতুন অর্গানোগ্রামে অন্তর্ভুক্ত হয়। সরকারের নির্বাহী প্রধান হিসেবে নভেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দু’টি তহবিল আসে- এর একটি ‘প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল’, অন্যটি ‘প্রধানমন্ত্রীর স্বেচ্ছাধীন তহবিল’। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে হিসাব দু’টি সচিব ড. কামাল সিদ্দিকী মেনটেইন করতেন এবং তার পিএস হিসাবপত্র রাখতেন। উক্ত দু’টি তহবিলই সরকারি নিয়ম মোতাবেক গঠন করা হয়। প্রতিবছর রাষ্ট্রীয় বাজেট থেকে এ দু’টি তহবিলে বরাদ্দ আসে। এখনও প্রধানমন্ত্রীর এ দু’টি তহবিল আছে। অন্যদিকে তথাকথিত ‘প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিল’ নামে কোনো সরকারি ফান্ডের অস্তিত্ব তখনও ছিল না, এখনও নাই। মাঝখানে ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হন, তখনও এতিম তহবিলের কিছু দেখা যায়নি। এ বিষয়টা হঠাৎ উদয় হয় ২০০৮ সালে ১/১১র পরে!
মূলত, কামাল সিদ্দিকীর হাতেই এই বিতর্কের জন্ম। ১৯৯১ সালে যখন ফান্ডটি আসে ভুল নামে, এটা সংশোধনের পরামর্শ দেয়ার দায়িত্ব ছিল কামাল সিদ্দিকীর। তিনি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর সচিব। প্রধানমন্ত্রী বা মন্ত্রি পর্যায়ের পদাধিকারীর সাথে সচিব/একান্ত সচিব নামে কিছু সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেয়ার বিধান রয়েছে এই কারণে যে, তাদের সরকারি আইন ও বিধি সম্পর্কে পারদর্শী। তারা পেশাদার লোক। রাজনৈতিক ব্যক্তিরা প্রধানমন্ত্রী/ মন্ত্রী পদে বসলেও তারা সরকারি আইন কানুন সম্পর্কে জানা থাকার কথা নয়। সরকারি কর্মকর্তারা মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতিকে আইনী সেফগার্ড দিয়ে থাকেন। সচিবরা সাচিবিক সহায়তা দিয়ে তাদেরকে আইনানুযায়ী চলতে সাহায্য করবেন, এটাই তাদের কাজ। প্রধানমন্ত্রী/মন্ত্রিরা যদি কোনো বেআইনী কাজ বা ভুল কাজ করে, তবে তার দায় সচিবের ওপরও বর্তায়। আলোচ্য কুয়েতি ফান্ডের ক্ষেত্রে কামাল সিদ্দিকীর পরামর্শ হতে পারত- ‘ডিডি ফেরত পাঠিয়ে অরফানেজ ট্রাস্টের নামে সংশোধন করে আনুন’, ‘প্রধানমন্ত্রীর’ শব্দটি থাকলে এটা নিয়ে ভবিষ্যতে প্রশ্ন উঠতে পারে। কিন্তু সেটা তিনি করেননি। হয় তিনি আইন জানতেন না, অথবা ‘অতিভক্তি’র কারণে তা করতে পারেননি। সঠিক পরমর্শ না দিয়ে তিনি নিজেই ব্যাংক একাউন্ট খুলে ডিডি ভাঙান। এটি একটি ভুল বা প্রমাদ ছিল বটে, তবে কোনো অবস্থাতেই ঐ ফান্ড সরকারি ছিল না। সেটা হলে অবশ্যই বছর বছর অডিট হতো এবং হিসাব থাকত মহাহিসাব নিরীক্ষকের দপ্তরে। কামাল সিদ্দিকীর এই ভুলের দায়ে বেগম খালেদা জিয়ার শাস্তি হতে পারে না। এটা অন্যায়।
কামাল সিদ্দিকী পরবর্তীতে তার কৃত ভুলের দায় থেকে বাঁচার জন্য নাকি দুদকে লিখিত চিঠি পাঠিয়েছেন। তাতে দাবি করেছেন, যা কিছু করেছেন সব প্রধানমন্ত্রী জানতেন! আর তার পিএস জগলুল পাশাও লিখেছেন, তিনি প্রধানমন্ত্রীর স্বেচ্ছাধীন এবং ত্রাণ তহবিল মেনটেইন করতেন। পাশাপাশি কথিত ‘এতিম ফান্ডে’ টাকার হিসাবও রাখতেন আলাদাভাবে। কিন্তু তিনি কোনো নথি দেখাতে পারেননি, বা কোনো নোটশীটে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন খুঁজে পাননি। আসলে সরকারি ফান্ডের পাশাপাশি বেসরকারি ঐ হিসাব তিনি দেখভাল করতেই পারেন। এটা পিএসরা হরহামেশা করে থাকেন। কামাল সিদ্দিকীর ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাব, তার লেখা বইপত্রের বেচা বিক্রি, আয় ব্যয়, ট্যুর থেকে আয়, বিদেশি গ্রান্ট এগুলার হিসাবও পাশা সাহেব রাখতেন। তবে কি ঐ গুলাও সরকারি হিসাব ছিল? ড. সিদ্দিকী এবং তাঁর পিএসের স্টেটমেন্ট-এর খবর মিডিয়াতে পড়ে একজন শিক্ষক আমাকে প্রশ্ন করেছেন, ‘কোথায় সেই বেইমান সিদ্দিকী এবং তার পিএস পাশা? ম্যাডাম কি পান এদের মধ্যে যে, খুঁজে খুঁজে এদেরকেই তাঁর অফিসে বার বার বসান।’ এর মধ্যে ’৮২ ব্যাচের এক অফিসার আমাকে বলেন, ‘পাশা যে সময় এই সাক্ষ্য দেয় তখন তার খুব দুর্দিন, সামনে রিটায়ারমেন্ট অথচ প্রমোশন মিলছে না, হয়ত সেটা হাসিল করতেই পাশা এমন মতলবি সাক্ষ্য দিয়েছিলেন! কিন্তু শেষ অবধি সেটাও হয়নি।’
একটি উদাহরণ দেই। প্রধানমন্ত্রীর অফিসে কর্মকালে নিজেদের বেতন ভাতার হিসাব রাখার জন্য আমি নিজেই একটি প্রোফর্মা বানিয়ে রেজিস্ট্রার তৈরি করি এবং ১০০ বই মুদ্রণ করে অফিসারদের দেই। এখন যদি কোনো অফিসারের কাছে ঐ হিসাবের বই পাওয়া যায়, তবে দুদক কি বলতে পারবে, এটা সরকারি ফান্ড, হিসাব দাও? এভাবে সব কিছুই রাষ্ট্রীয় হিসাব নয়, কিছু বেসরকারি বা ব্যক্তিগত বিষয়ও থাকে।
আলোচ্য অরফানেজ ঘটনায় কোনো দুর্নীতির ঘটনা তো ঘটেইনি, উপরন্তু সরকারি তহবিলকে বেসরকারি ট্রাস্টকে প্রদান করে কোনো ক্ষমতার অপব্যবহার করার ঘটনাও ঘটেনি। লক্ষ করুন, কুয়েতি ফান্ডের অর্ধেক ২.৩৩ কোটি টাকা যায় বাগেরহাটে। এই অংশ নিয়ে দুদক বা সরকারের কোনো আপত্তি অভিযোগ নাই। সরকারি ফান্ড বেসকারি ট্রাস্টে দেয়ার অপরাধ ঘটলে সেটা বাগেরহাটের ২.৩৩ কোটি টাকার জন্যও মামলা হতো। তা হয়নি। কেবল বেগম জিয়া এবং তাঁর পুত্রকে রাজনৈতিকভাবে হয়রানির অসৎ উদ্দেশ্যে বগুড়ার অংশের ২.১০ কোটি টাকা নিয়ে দুদকের এই মামলা। একটি ফান্ডের অর্ধেক সরকারি, আর অর্ধেক বেসরকারি, তা তো হতে পারে না। তাছাড়া, যদি তর্কের খাতিরে বলা হয় যে, এটা প্রধানমন্ত্রীর স্বেচ্ছাধীন তহবিলের টাকা (যদিও আসলে তা নয়), তবুও প্রধানমন্ত্রী যেকোনো প্রতিষ্ঠানকে যত ইচ্ছা ফান্ড দিতে পারেন (মপবি-৩/৬/৯১/বিধি-১১২, তারিখ ৮/৬/৯২)। কাজেই, কুয়েতের আমিরের থেকে পাওয়া বেসরকারি ফান্ড দু’টি এতিমখানাকে ভাগ করে দিয়ে কোনো বিশ্বাসভঙ্গ, ক্ষমতার অপব্যবহার বা আইনের ব্যত্যয় বা সরকারি তহবিল তছরুপের কোনো ঘটনা ঘটেনি। ওখানে নাম সংক্রান্ত যা কিছু ব্যত্যয় হয়েছে, তা ছিল অর্থ প্রেরকের একটি ভুল মাত্র। কুয়েতের আমিরের ফান্ড যে শহীদ জিয়ার নামে এতিমখানা নির্মাণের জন্য দেয়া হয়েছিল, তা পরবর্তীতে কুয়েতের দূতাবাস চিঠি দিয়ে জানিয়েছে। তবুও এসব বিষয় কোর্ট উপেক্ষা করে রায়টি দিয়েছে। আমার কাছে মামলার ৭’শ পাতা ডকুমেন্ট আছে। কাজেই তথ্যভিত্তিক ছাড়া কোনো কথা এখানে বলিনি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, উচ্চ আদালত থেকে খালেদা জিয়া বেকসুর খালাস পাবেন।
(সমাপ্ত)

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
rakib hasan ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১১:২৭ এএম says : 0
er jobab akdin thik e dite hobe !! khomota r jonne take jail e pathano hoese, desher manush ondho na
Total Reply(0)
Bongo Raj ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ৪:৫৫ পিএম says : 1
Dear Ginius Why don't you go and stand as a law year for Khaleda Zia. In your article you didn't mentioned anything about the money being transferred from the fund and never come back.
Total Reply(0)
২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ২:৩৩ পিএম says : 0
Everybody try to explain this money put to bank and it is so increased, my question this money came for orphanages boy or put to bank?
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন