শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহানগর

ইউনেস্কো প্রতিনিধিদের সাথে সাক্ষাৎ করতে না দেয়ার অভিযোগ পরিবেশবাদীদের

প্রকাশের সময় : ৩০ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : রামপাল পরিদর্শন করতে আসা ইউনেস্কো প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারেননি পরিবেশ নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। সরকারের পক্ষ থেকে পরিবেশবাদীদেরকে সাক্ষাতের সুযোগ করে দেয়া হয়নি বলেও অভিযোগ করেছেন তারা।
ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য কেন্দ্রের তিন সদস্যের প্রতিনিধিদল রামপাল, সুন্দরবন পরিদর্শনের পর সোমবার সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে রাতেই ফিরে গেছেন। সফরকালে তারা রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং পশুর ও শ্যালা নদ-নদী দিয়ে নৌ চলাচলের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন এবং এসব বিষয়ে জানতে চেয়েছেন বলে জানা গেছে।
প্রতিনিধিদলের সফরসূচিতে সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি, তেল-গ্যাস ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির খুলনা শাখা, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) এবং রামপাল এলাকার পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর সঙ্গে বৈঠক করার কথা ছিলো। সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটি বৈঠক করতে চেয়ে মন্ত্রণালয় ও ইউনেস্কোকে চিঠিও দিয়েছিল বলে জানা গেছে।
সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির আহŸায়ক সুলতানা কামাল বলেন, ইউনেস্কোর সঙ্গে আমরা বৈঠক করতে চেয়ে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু বৈঠক হলো না। আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।
জানতে চাইলে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব কামালউদ্দিন আহমেদ বলেন, ইউনেস্কো যেভাবে চেয়েছে, আমরা সেভাবে বৈঠকের আয়োজন করেছি। এ ছাড়া তারা স্থানীয় জনগণের সঙ্গেও বৈঠক করেছে। সেটিও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, ইউনেস্কোর প্রতিনিধিদল যেসব তথ্য-উপাত্ত চেয়েছিল, আমরা সবকিছুই দিয়েছি। তারা সুন্দরবনের ব্যাপারে সরকারকে কিছু পরামর্শ দেবে বলে জানিয়েছে। তারা যে প্রতিবেদন দেবে, আমরা তার ভিত্তিতে পরবর্তী সময়ে আরও কী করা যায়, সেই পদক্ষেপ নেব।
ইউনেস্কো প্রতিনিধিদলের তিন সদস্য ফানি এডলফাইন ডাউভিরি, নাওমি ক্লেয়ার ও মিজুকি মুরাই সোমবার দুপুরে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে আটটি মন্ত্রণালয়ের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভা করেন। সভায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, নৌপরিবহন, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় উপস্থিত একাধিক সূত্র বলেছে, সভায় ইউনেস্কো প্রতিনিধিদল পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের কাছে জানতে চায়, রামপাল প্রকল্প চালু হওয়ার পর এর পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়নের মতো সাংগঠনিক ও কারিগরি কাঠামো রয়েছে কি না। জবাবে মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, প্রকল্পের প্রতিবেশগত পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সার্ভিসেসকে (সিইজিআইএস) দেওয়া হয়েছে। ওই সংস্থা প্রতি তিন মাস পর পর রামপাল প্রকল্পের ওয়েবসাইটে ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করবে।
প্রতিনিধিদল নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের কাছে জানতে চায়, খুলনা ও সুন্দরবনকে ঘিরে মন্ত্রণালয়ের কী কী পরিকল্পনা রয়েছে? মন্ত্রণালয় জানায়, তাদের মংলা বন্দর স¤প্রসারণ, পায়রা বন্দর নির্মাণ, নদী খননের পরিকল্পনা রয়েছে। প্রকল্প সুন্দরবনের ওপর কী প্রভাব ফেলবে, তার মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে কি না? উত্তরে মন্ত্রণালয় জানায়, তারা প্রতিটি প্রকল্পের জন্য আলাদা পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি করছে।
২৪ ও ২৫ মার্চ ইউনেস্কোর রি-অ্যাকটিভ মনিটরিং মিশন নামের প্রতিনিধিদলটি রামপাল প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে এবং প্রকল্প এলাকার স্থানীয় জনগণের সঙ্গে কথা বলে। স্থানীয় জনগণের সঙ্গে বৈঠক রামপাল প্রকল্প ও সরকারি সংস্থাগুলোর মাধ্যমে আয়োজন করা হয়। সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে গত এক বছরে যে চারটি তেল ও কয়লাবাহী জাহাজডুবি হয়েছে, সেসব দুর্ঘটনাস্থল তারা পরিদর্শন করে। পশুর নদ দিয়ে জাহাজ চলাচলের ব্যাপারেও খোঁজ নেয় তারা।
ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক উজ্জ্বল কান্তি ভট্টাচার্য বলেন, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে যে সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি হবে না, সে বিষয়টি আমরা তুলে ধরেছি। প্রকল্পটি সুন্দরবনের ভেতরকে ক্ষতিগ্রস্থ করবে বলে ভুল তথ্য প্রতিনিধিদলকে দেওয়া হয়েছিল। তারা সরেজমিনে দেখায় সেই ভুল ভেঙেছে। এ ছাড়া সুন্দরবন এলাকার মানুষের বিকল্প জীবিকা সংস্থানের জন্য আমরা কী উদ্যোগ নেব, তা তাদের জানিয়েছি। এতে সুন্দরবনের ওপর স্থানীয়দের চাপ কমবে, উল্টো সুন্দরবনকে আরও সুসংহত করা যাবে।
ইউনেস্কোর সঙ্গে বৈঠক না হওয়া প্রসঙ্গে তেল-গ্যাস ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব আনু মুহাম্মদ বলেন, সুন্দরবন নিয়ে অন্য যে মত ও ব্যাখ্যাগুলো রয়েছে, তা না জেনে সুন্দরবন নিয়ে ইউনেস্কো প্রতিবেদন দিলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।
এদিকে বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ইউনেস্কো এই সফরটিকে আমার মনে হয়েছে সরকারি কর্মকর্তাদের তত্ত¡াবধানে পরিচালিত সফর। ফলে তারা সুন্দরবন নিয়ে যে তথ্য-উপাত্ত পাবে তা হবে আংশিক। ইউনেস্কোর উচিত সুন্দরবন সম্পর্কে একটি বস্তুনিষ্ঠ ও পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়নের জন্য সব মতামত নেয়া। না হলে সুন্দরবন রক্ষা পাবে না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন