সাংবাদিকতা জগতের অন্যতম দিকপাল বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ‘সংবাদ’ সম্পাদক প্রয়াত বজলুর রহমানের ১০ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০০৮ সালের ২৬ ফেব্রæয়ারি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। প্রয়াত বজলুর রহমান ১৯৪১ সালের ৩ আগস্ট ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর থানার চরনিয়ামতপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এমএ পাস করে ১৯৬১ সালে দৈনিক সংবাদে সহসম্পাদক হিসেবে সাংবাদিকতা শুরু করেন তিনি। পরে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক এবং সম্পাদক হন। সুস্থ ও সচেতন সমাজ নির্মাণে সাংবাদিকতাকে হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করেন তিনি। তিনি ছিলেন নির্লোভ, স্বপ্রতিভায় আলোকিত কৃতী মানুষ। বজলুর রহমান সাংবাদিকতা পেশার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে যেমন তেমনি জাতীয় ক্রান্তিকালেও তিনি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, গুরুত্বপূর্ণ এবং কার্যকর ভূমিকা পালন করেছেন। মহান মুক্তিযুদ্ধ, তারও আগে ৬২’র ছাত্র আন্দোলন, ’৬৬ সালে ৬ দফা আন্দোলন, ’৬৮-৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭৫-এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন। ২০০৭-৮’র তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সময়ে গণতন্ত্রবিরোধী কর্মকাÐের বিরুদ্ধেও দৃঢ় অবস্থান নিয়েছিলেন তিনি।
১৯৬২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকা কালে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নেন আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে। এছাড়াও ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ববাংলার মুক্তিসনদ ৬ দফা দাবি ঘোষণা করার পর বজলুর রহমান তা সক্রিয়ভাবে সমর্থন এবং এর পক্ষে সামগ্রিক জনমত গঠনে প্রচারাভিযান চালান। বজলুর রহমান তার দীর্ঘ সফল পেশাগত জীবনে সংবাদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদ অলঙ্কৃত করা ছাড়াও সাংবাদিকতা পেশার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পরিচালনাগত দায়িত্বও পালন করেছেন। তিনি বাসস’র পরিচালনা পরিষদের সদস্য ছিলেন। এছাড়াও প্রেস ইনস্টিটিউট, প্রেস কাউন্সিলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এসব প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালনের সময়ও তিনি তার আদর্শ এবং পেশার মর্যাদাকে সমুন্নত রেখেছেন। নিজ আদর্শকে সবার ঊর্ধ্বে স্থান দিলেও তিনি মেধা, জ্ঞান ও যুক্তির মাধ্যমেই সবকিছু বিবেচনা করতেন।
বজলুর রহমান সাংবাদিকতার আদর্শের প্রতি যেমন সত্যনিষ্ঠ ছিলেন তেমনি জীবনের সত্য, সুন্দর ও মার্জিত বৈশিষ্ট্যগুলোও তার কর্মপ্রবাহের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে পারঙ্গমতা দেখিয়েছেন। ‘সংবাদ’ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি সাপ্তাহিক একতারও সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। দৈনিক ইত্তেফাকেও কিছুদিন কাজ করেছেন। ’৭১-এ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বজলুর রহমানের সম্পাদনায় ‘মুক্তিযুদ্ধ’ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশিত হত। সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১২ সালে সরকার বজলুর রহমানকে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করেন।
কর্মসূচি :
‘সংবাদ’ পরিবার, বজলুর রহমানের সহধর্মিণী কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীসহ পরিবারের সদস্যবৃন্দ, বজলুর রহমান ফাউন্ডেশন এবং বিভিন্ন সংগঠন আজ সকাল ৮ টায় মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে বজলুর রহমানের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। অনান্য কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে কবর জিয়ারত ও মরহুমের রুহের আত্মার শান্তি কামনায় দোয়া মাহফিল।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন