ঐতিহাসিক ৭ মার্চ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করবে আওয়ামী লীগ। জনসভায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরকে দিক-নির্দেশনা মূলক বার্তা দিবেন দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিপুল জনসমাগমের মধ্যদিয়ে ‘নির্বাচনী মহড়ার’ এ সমাবেশ সফল করতে ইতোমধ্যেই প্রায় সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে আওয়ামী লীগ। ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে নেতাকর্মীরা বাস-ট্রাক ও ট্রেনযোগে জনসভায় যোগ দেবেন।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চ ভাষণের ইউনেস্কো স্বীকৃতির পর প্রথমবারের মত দিবসটি পালনে এই সমাবেশ করছে ক্ষমতাসীন দলটি। জনসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দিবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মূলত এবার জনসভার মাধ্যমে সরকারি দল নির্বাচনী মহড়া করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
দলের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, চলতি বছরের শেষ নাগাদ একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর ওই নির্বাচন টার্গেট করেই স্মরণকালে সর্ববৃহৎ গণজমায়েত করবে আওয়ামী লীগ। জনসভা থেকে একাদশ সংসদ নির্বাচনের বৈতরণী পারের গুরুত্বপূর্ণ বার্তা নেতাকর্মীদের মধ্য পৌঁছে দিবেন দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা। সমাবেশের মাধ্যমে সারাদেশে নির্বাচনী আমেজ সৃষ্টির পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দিবেন তিনি।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, জনসভা থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে দিক-নির্দেশনামূলক বক্তব্য দিবেন। তিনি বিএনপির রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের চিত্র এবং তা মোকাবেলার কৌশলও বাতলে দিবেন। তিনি জানান, সমাবেশ থেকে পাড়া-মহল্লা, জেলা-উপজেলা, পৌরসভাসহ তৃণমূল নেতাকর্মীদের জন্য গাইডলাইন দেয়া হবে। নির্বাচনে অসা¤প্রদায়িক, মুক্তিযুদ্ধ এবং একুশের স্বপক্ষের শক্তিকে কি করে আবারও বিজয়ী করা যায়, সে বিষয়গুলো প্রাধান্য পাবে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে। তিনি জানান, এবারের জনসভা হবে স্মরণকালে সর্ববৃহৎ। আমরা যে এখনও দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দল ওইদিনই প্রমাণ হয়ে যাবে। ইতোমধ্যে সমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে ছাত্রলীগের নেতারা ইউনিটভিত্তিক দায়িত্ব ভাগ করে রাজধানীর অলি-গলিতে মাইকিং করছে। পাড়া-মহল্লা, বাড়িতে, মার্কেটে হ্যান্ডবিল বিতরণ করা হচ্ছে।
সূত্রে জানা গেছে, এবারের জনসভায় ১৫ লাখ মানুষের উপস্থিতির লক্ষ্য নিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। সমাবেশ থেকে একটিই বার্তা পৌঁছে দেয়া হবে-দেশের সমৃদ্ধি ও উন্নয়নে আওয়ামী লীগের বিকল্প কেবল আওয়ামী লীগই।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৭ মার্চ তার ভাষণে সরকারের উন্নয়ন তুলে ধরবেন। আবারও নৌকাকে বিজয়ী করতে যা করণীয় তার নির্দেশনা দিবেন। আশা করছি, তার ভাষণে উজ্জীবিত হয়ে নেতাকর্মীরা তৃণমূল পর্যন্ত ভোটের কাজে নেমে পড়বেন।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম বলেন, ৭ মার্চের জনসভা সফল করতে ঢাকা ও এর আশপাশের জেলার নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী তারা প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। এদিকে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভাকে কেন্দ্র করে মাঠে নেমেছেন তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও। আগামী ৭ মার্চের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের জনসভা সফল করতে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা প্রতিদিনই নিজ নিজ ইউনিট-ওয়ার্ড এবং থানার উদ্যোগে কর্মীদের নিয়ে মতবিনিময় এবং পাড়ায়-পাড়ায় লিফলেট বিতরণ করছেন।
এদিকে, ৭ মার্চের সমাবেশে জনসমাগম বাড়াতে সমাবেশের দিন রাজধানীর বিভিন্ন অফিস, মার্কেট বন্ধ রেখে সমাবেশে যোগ দিতে নেতাকর্মীরা চাপ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া, রাজধানী ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন জেলা শহরের বাস, ট্রাক মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের প্রতি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে নেতাকর্মীদের পরিবহণের জন্য।
অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গতকাল সোমবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে মেয়র সাঈদ খোকনের সভাপতিত্বে ৭ মার্চের সমাবেশ সফল করার মতবিনিময় সভায় তিনি এ বিষয়ে কথা বলেন।
৭ই মার্চে দোকান পাট অফিস বন্ধ না করার নির্দেশনা দিয়ে সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ৭ই মার্চ, ১৭ই মার্চ, ২৬শে মার্চ, ১৬ই ডিসেম্বর এই দিবস গুলোর আনুষ্ঠানিকতা কি করে অন্য দিন করবো। এটা কমন সেন্সের ব্যপার। এই দিবস গুলোর মূল আনুষ্ঠানিকতা কি অন্য দিন সাঁজে? আসলে যারে দেখতে নারী তার চলন বাঁকা। তিনি বলেন, তার পরেও আমি বলবো আপনারা যারা অফিস করেন অফিস বন্ধ রাখবেন না। আপনারা যারা মার্কেটে আছেন মার্কেট বন্ধ রাখবেন না। মার্কেট বন্ধ করার যে অপপ্রচারটি হচ্ছে এরকম কোন সিদ্ধান্ত আমাদের নেই। অফিস বন্ধকরে মার্কেট বন্ধ করে যেতে হবে, সেটা আমরা কিন্তু বলিনি।
এদিকে, জনসভা সামনে রেখে গতকাল সোমবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ব্যাপক কর্মযজ্ঞ দেখা গেছে। মঞ্চ তৈরির কাজ তুমুল বেগে এগিয়ে চলেছে। বসানো হচ্ছে চেয়ার। সাজানো হচ্ছে প্যান্ডেল। রাতদিন এক করে কাজ করছেন ডেকোরেশনের দায়িত্বে থাকা কর্মীরা। সিসি ক্যামেরা বসানোসহ গোটা উদ্যান নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হচ্ছে। এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ইতোমধ্যে ব্যানার-ফেস্টুন সাটানো হয়েছে। এতে ৭ মার্চ ভাষণের ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং সরকারের উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন