থায়রয়েড হরমোনের কার্যকারীতা বেড়ে গেলে দৈহিক ও মানসিক কিছু পরিবর্তন লক্ষ্যনীয় হয়ে ওঠে, এ অবস্থাকে হাইপারথায়রয়েডিজম বলে।
লক্ষণ
ক) গয়টার যা সমস্ত গ্লান্ডে ছড়ানো সমভাবে বিস্তৃত (Difuse goiter) গোটা আকৃতির ডিফিউজ এবং গোটা গোটা আকৃতিবিশিষ্ট গয়টার (Nodular goiter) যাতে স্টেথোস্কোপ দিয়ে বিশেষ ধরনের শব্দ (Bruit) শোনা যেতেও পারে বা নাও যেতে পারে।
খ) পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা :
খাওয়ার রুচি স্বাভাবিক বা বেড়ে যাওয়ার পরও ওজন কমে যাওয়া, ঘন ঘন পায়খানা হওয়া, খাওয়ার অরুচি, বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
গ) হার্ট ও ফুসফুসীয় সমস্যা :
বুক ধড়ফড় , হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, অ্যাট্রিয়ার ফিব্রিলেশন , হার্ট ফেইলিওর, এনজাইনা বা বুক ব্যথা।
ঘ) স্নায়ু ও মাংসপেশির সমস্যা:
অবসন্নতা বা নার্ভাসনেস, উত্তেজনা, আবেগ প্রবণতা, সাইকোসিস বা মানসিক বিষাদগ্রস্থতা; হাত পা কাঁপা, মাংসপেশি ও চক্ষুপেশির দুর্বলতা, রিফ্লেক্স বেড়ে যাওয়া (এক ধরনের স্নায়ু রোগের পরীক্ষা)।
ঙ) ত্বকের সমস্যা:
ঘাম বেড়ে যাওয়া, চুলকানি, হাতের তালু লাল হওয়া, শ্বেতী, আঙ্গুলের ক্লাবিং (হাতের আঙ্গুলগুলোর মাথা ড্রাম স্টিকের মতো হয়ে যায়), প্রিটিভিয়াল মিক্সিডিমা (চৎবঃরনরধষ সুংড়বফবসধ) অর্থাৎ পায়ের সামনের অংশ হতে পাতা পর্যন্ত ত্বক মোটা বা নডিউলার গোলাপী বা বাদামী বর্ণের হয়।
চ) প্রজননতন্ত্রের সমস্যা:
অল্পরজস্রাব বা মাসিক বন্ধ হওয়া, বন্ধ্যাত্ব, গর্ভাবস্থায় বাচ্চা নষ্ট হওয়া, যৌনক্ষমতা হ্রাস পাওয়া।
ছ) চোখের সমস্যা:
এক্সোপথালমোস অর্থাৎ চক্ষুগোলক বড় হয়ে সামনের দিকে বের হওয়া, লিড রিট্রেকশন, লিড ল্যাগ বা চোখের পাতা পেছনে চলে যায়, চোখ লাল হওয়া, পানি পড়া, চোখের কর্নিয়ায় ঘা হওয়া, দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া অর্থাৎ কোনো জিনিস দুটি দেখা।
জ) অন্যান্য সমস্যা:
গরম সহ্য করতে না পারা, অবসন্নতা, দুর্বলতা, লিম্ফএডিনোপ্যাথি বা লসিকাগ্রন্থিসমূহ বড় হওয়া, অস্থিক্ষয় হওয়া।
হাইপারথাইরয়েডিজমের কারণ
(ক) গ্রেভস ডিজিজ (এক ধরনের অটোইমিউন প্রসেস);
(খ) মাল্টিনডিউলার গয়টার;
(গ) অটোনমাসলি ফ্যাংশনিং ছলিটারি থাইরয়েড নডিউল
(ঘ) থাইরয়েডাইটিজ বা থাইরয়েড গ্লান্ডের প্রদাহ
(ঙ) থাইরয়েড গ্লান্ড ছাড়া অন্য কোনো উৎসের কারণে থাইরয়েড হরমোনের আধিক্য
(চ) টিএসএইচ ইনডিউজ
(ছ) থাইরয়েড ক্যান্সার (প্রধানত ফলিকুলার ক্যান্সার)।
চিকিৎসা
যথাসময়ে যথাযথ রোগ নির্ণয় ও সময়োপযোগী সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে থাইরয়েডের রোগ হতে সম্পূর্ণ আরোগ্য লাভ সম্ভব। সাধারণ গয়টার বা গলগন্ড সাধারণত আয়োডিনের অভাবে হয়ে থাকে। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে এ রোগের প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি। এক্ষেত্রে আমাদের করণীয় হলো দৈনন্দিন খাবারের সাথে বেশি পরিমাণে আয়োডিনযুক্ত খাদ্য (শাকসবজি, ফলমূল এবং সামুদ্রিক মাছ) এবং আয়োডিনযুক্ত লবণ (আয়োডাইজড সল্ট) খাওয়া। এছাড়া বাজারে বিক্রয়কৃত সাধারণ আয়োডিন ক্যাপসুলও সেবন করা যেতে পারে।
-ডাঃ শাহজাদা সেলিম
সহকারী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ
কমফোর্ট ডক্টর’স চেম্বার
১৬৫-১৬৬, গ্রীনরোড, ঢাকা
মোবাঃ ০১৭৩১৯৫৬০৩৩, ০১৯১৯০০০০২২
Email: selimshahjada@gmail.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন