শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

মাহমুদউল্লাহ বীরত্বে ফাইনালে বাংলাদেশ

ইমামুল হাবীব বাপ্পি | প্রকাশের সময় : ১৭ মার্চ, ২০১৮, ১:৫০ এএম

//শ্রীলঙ্কা : ২০ ওভারে ১৫৯/৭

বাংলাদেশ : ১৯.৫ ওভারে ১৬০
ফল : বাংলাদেশ ২ উইকেটে জয়ী//

এমন ম্যাচ কতদিন দেখেনি ক্রিকেট বিশ্ব? নিকট অতিতে তো নয়-ই। ক্ষণে ক্ষণে ম্যাচের রূপ বদল, হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে দেয়া শ্বাসরুদ্ধকর মুহূর্ত, আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মাঠ থেকে বেরিয়ে আসার মত অখেলোয়াড়সুলভ আচরণের হুমকি, প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়দের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়- কি ছিল না এই ম্যাচে। এমনই উত্তেজনায় টাইটম্বুর ম্যাচ ২ উইকেটে জিতে কলম্বোর নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশ।
উদানার করা শেষ ওভারে জয়ের জন্য বাংলাদেশের দরকার ১২ রান। প্রথম দুই বলই উড়ে গেল মুস্তাফিজের ঘাড়ের উপর দিয়ে। দুটিই ডট। দ্বিতীয় বলে আবার রান আউট হয়ে গেলেন মুস্তাফিজ। বাংলাদেশের চোখে-মুখে তখন রাজ্যের হতাশা। ৪ বলে দরকার ১২ রান! পারবে তো বাংলাদেশ?
এরই মাঝে মাঠে শুরু হয়ে গেল হট্টগোল। সাকিবের যৌক্তিক দাবি- দ্বিতীয় বাউন্সারটা কেন নো হবে না? ওভারে তো একটির বেশি বাউন্সারের অনুমুতি নেই। আম্পায়ারের সঙ্গে বাক্য বিনিময়ে সাকিবের সাথে যোগ দেন তামিমও। ওদিকে শ্রীলঙ্কার এক ফিল্ডারের সঙ্গে লেগে যায় একাদশের বাইরের খেলোয়াড় সোহানের। এরই মাঝে উত্তেজিত সাকিব ক্রিজে থাকা মাহমুদউল্লাহকে ইঙ্গিত করেন মাঠ থেকে বেরিয়ে আসতে। কিন্তু শান্ত দৃড়প্রতিজ্ঞ ও আত্মবিশ্বাসে টাইটম্বুর মাহমুদউল্লাহ চাইলেন খেলা চালিয়ে যেতে। ফিরে এসে প্রথম বলেই হাঁকালেন বাউন্ডারি। দ্বিতীয় বলে জান-প্রাণ দিয়ে সিঙ্গেলকে বানালেন ডাবল। এরপরও হিসাবটা কঠিনই রয়ে গেল-দুই বলে ছয় রান।
নিস্তব্ধ গ্যালারি হঠাৎ গর্জে উঠলো ব্যগ্র কন্ঠে। মিড ও লেগের মাঝামঝি ধেয়ে আসা বলটি যে তখন আশ্রয় নিয়েছে গ্যালারিতে। কি নিপুণ ফ্লিক শটেই না স্কয়ার লেগ দিয়ে বলটি ফিল্ডারদের মাথার উপর দিয়ে ভাসিয়ে দিলেন মাহমুদউল্লাহ। বাকি মুহূর্তটা শব্দের গাঁথুনি দিয়ে প্রকাশ করা কঠিন।
স্বর্প-নাচন তখন আর মুশফিক-নাজমুলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। উল্লাসে ফেটে পড়া পুরো দল মিলে মাঠের মাঝে দিলেন স্বর্পনৃত্য। কোচ কোর্টনি ওয়ালশও নেমে এসেছেন মাঠে। কুসল মেন্ডিস ও সোহানের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় তখনও থামেনি। এবারো এসে পরিস্থিতির সামাল দিলেন ম্যাচের নায়ক মাহমুদউল্লাহ। নিজের ১৮ বলে ৪৩ রানের ইনিংসকে যিনি ‘ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা’র খেতাব দিয়েছেন।
অথচ ম্যাচ আরো সহজেই জিততে পারত বাংলাদেশ। স্লো উইকেটে ১৬০ রানের লক্ষ্য চ্যালেঞ্জিং হলেও ১২ ওভারে ২ উইকেটে ৯৫ রান তুলে জয় তখন হাতের মুঠোয়। কিন্তু ১২ রানের ব্যবধানে ৩ উইকেট হারিয়ে পরিস্থিতি নড়বড়ে হয়ে যায়। টানা দুই ওভারে ফেরেন ৬৪ রানের জুটিতে লিটন-সাব্বিরের ধাক্কা সামাল দেয়া মুশফিক ও তামিম। দুই বছর পর ফিফটি পূর্ণ করেই উইকেটের পিছনে ধরা পড়েন তামিম। এবার মুশফিকের ক্যামিও ইনিংসটি থামে ২৮ রানে। এমন পরিস্থিতিতে যখন উইকেটে থাকা খুব জরুরী তখন আবারো দৃষ্টিকটুভাবে আউট হন সৌম্য। এবার তার অবদান ১১ বলে ১০!
মাহমুদউল্লাস সঙ্গে ২৮ রানের জুটির পুরো সময়েই অস্বস্তিতে ছিলেন সাকিব। শেষ পর্যন্ত তিনিও আউট হন ৯ বলে ৭ রান করে। মাহমুদউল্লার ঘাড়ে তখন ১২ বলে ২৩ রানের বোঝা। সেই বোঝা কি নিপুনভাবেই না বইলেন দেশের ব্যাটিংয়ের অন্যতম আস্থার এই প্রতীক।
এর আগে বল হাতেও সফল ছিল বাংলাদেশ। কলম্বোর আর প্রেমাদাশ স্টেডিয়ামের স্লো উইকেটে টস জিতে বল বেছে নিতে দ্বিতীয়বার ভাবা লাগেনি দীর্ঘদিন পর দলে ফেরা সাকিবকে। ৪১ রানের ৫ উইকেট তুলেও নেন মুস্তাফিজ-সাকিব-মিরাজরা। কিন্তু দ্রুত উইকেট হারানোর পরও একটু একটু করে ম্যাচ কিভাবে ম্যাচ অনূকুলে আনতে সেটাই যেন বাংলাদেশকে শিখিয়ে দেয় শ্রীলঙ্কা। স্লগ ওভারে মুস্তাফিজ-রুবেলদের বেধড়ক পিটিয়ে আর মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে তারা তুলে ফেলে ১৫৯ রান। ষষ্ঠ উইকেটে দুই পেরেরা কুসল ও থিসারা মিলে গড়েন ৯৭ রানের দারুণ জুটি। ৪০ বলে ৬১ রান করেন কুসল। ৩৭ বলে ৩টি করে ছক্কা-চারে ৫৮ রান করেন থিসারা।
প্রথম দুই ওভারে এক মেডেনসহ ২ উইকেট নেয়া মুস্তাফিজ বাকি ২ ওভারে দেন ৩৫। রুবেলকে গুনতে হয় ৪ ওভারে ৪১ রান। তবে মিরাজের বোলিংটা ছিল দারুণ। ৪ ওভারে মাত্র ১৬ রানে নেন ১ উইকেট। আগের ম্যাচে ভারতের বিপক্ষেও স্লগ ওভারে বেশি রান দেয়ার খেসারত দিতে হযেছিল মাহমুদউল্লার দলকে।
বাংলাদেশ জিতেছে বলেই হয়ত এই ম্যাচের অনেক ভুলই চোখে পড়বে না। ২ওভারে ৯ রান দিয়ে ১ উইকেট নিয়েও বোলিং কোটা পূর্ণ না করার পর ব্যাট হাতে সাকিবের অস্বস্তি কি জানান দিচ্ছিল না যে তাকে একটু বেশি তাড়াতাইড়ই মাঠে ফেরানো হয়েছে। ম্যাচের পর ম্যাচ দৃষ্টিকটুভাবে আউট হয়েও যদি সৌম্য-সাব্বিরকে দলে রাখতে হয় তাহলে সোহান-ইমরুল ‘বোঝা’ সঙ্গে নিয়ে বয়ে বেড়ানো কেন। কিন্তু এসব নিয়ে ভাবতে এখন বাংলাদেশের বয়েই গেছে। ভাবনায় এখন কেবলই আগামীকালের ফাইনাল। যেখানে অপেক্ষা করছে ভারত।
আরো একটি ফাইনাল, আবারো ভারত। তামিম-সাকিবরা এবার কি পারবেন বেঙ্গালুরুর সেই বদলা নিতে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (11)
কে.আই সরকার ১৭ মার্চ, ২০১৮, ৩:৩৯ এএম says : 0
মাহমুদউল্লাহকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
Total Reply(0)
রিয়াজ ১৭ মার্চ, ২০১৮, ৩:৩৯ এএম says : 0
বাংলাদেশ দলকে অভিনন্দন।
Total Reply(0)
১৭ মার্চ, ২০১৮, ৭:৫২ এএম says : 0
বাংলাদেশ দলকে অভিনন্দন।
Total Reply(0)
md aiman ১৭ মার্চ, ২০১৮, ৭:৫৩ এএম says : 0
বাংলাদেশ দলকে অভিনন্দন।
Total Reply(0)
Swapna Rani Biswas ১৭ মার্চ, ২০১৮, ১:১৭ পিএম says : 0
আমি খুব খুব স্বস্তি পাব ভারত বনাম বাংলাদেশ খেলায় বাংলাদেশ জিতলে। গত বিশ্বকাপ থেকেই এমন পিপাসা মনে। আমি বুঝিনা আমাদের টাইগার্স সবার সাথে পারে অথচ ভারতের সাথে খেলতে গেলেই ভ্যাবাচ্যাকা খায়।
Total Reply(0)
Ali Azam ১৭ মার্চ, ২০১৮, ১:২১ পিএম says : 0
ছয় দিয়েই জয়. অভিনন্দন বাংলাদেশ.. অভিনন্দন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ...
Total Reply(0)
Sohanur Rahman ১৭ মার্চ, ২০১৮, ১:২২ পিএম says : 0
ওস্তাদের মার শেষ রাতে নাগিন ড্যান্স নাচোরে, দেখিয়ে দাও বীরের জাতি লড়াই করে বাঁচোরে!
Total Reply(0)
Md Ekram ১৭ মার্চ, ২০১৮, ১:২৩ পিএম says : 0
অভিনন্দন, বাংলাদেশ ক্রিকেট টীম। বেস্ট অফ লাক ফর ফাইনাল।
Total Reply(0)
Urmi Mahbub ১৭ মার্চ, ২০১৮, ১:২৬ পিএম says : 0
সাকিব জাস্ট বস, এরেই বলে ক্যাপ্টেন,,,আর এই মাহমুদুল্লারেই হাথুরিসিং বাদ দিতে চাইছিলো,,,সাবাস বাংলার বাঘ
Total Reply(0)
Abdullah Al Amin ১৭ মার্চ, ২০১৮, ১:২৭ পিএম says : 0
What a game. I guess the best one I have ever seen.
Total Reply(0)
মোহাম্মদ আসলাম হোসেন ১৭ মার্চ, ২০১৮, ২:৫৯ পিএম says : 0
েএমন সুন্দর একটি খেলা উপহার দেয়ার জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে এবং টিম মেনেজমেন্ট এবং সমস্ত শুভাকাংখীদের জানাই অন্তরের অন্তর থেকে মুবারকবাদ। এবং ধন্যবাদ এমন উপহার এনে দেয়ার জন্য আমাদের নয়নমণি মাহ্‌মুদুল্লাহ রিয়াদকে। ধন্যবাদ মাহ্‌মুদুল্লাহ্‌ >> মুশিফিকুর রহমান > তামিম লিটন দাস মুস্তাফিজুর রহমান সহ সমস্ত প্লোয়ারদের >>
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন