বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

মেগা ফ্লাইওভার উদ্বোধন : মেগা প্রজেক্টের দ্রুত বাস্তবায়ন কাম্য

প্রকাশের সময় : ১ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তার প্রথম মেয়াদী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যে শ্লোগানটি নির্বাচনী ইস্যু হিসাবে তুলে ধরেছিলেন সেটি হল, ণবং বি পধহ ফড়. অর্থাৎ ‘আমরাও পারি।’ এই শ্লোগান বা ক্যাচ্্ ওয়ার্ডটি মার্কিন জনগণ বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বিপুল উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছিল। অনেক মার্কিন বিশেষজ্ঞ বলেন, এই ক্যাচ্্ ওয়ার্ডটি প্রথমবারের নির্বাচনে হিলারী ক্লিন্টনের বিরুদ্ধে বারাক ওবামাকে জিতিয়েছিল। এই শ্লোগান বা ক্যাচ্ ওয়ার্ড গত বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কণ্ঠেও শোনা গেছে। মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের একাংশ উদ্বোধন করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ব দেখুক, আমরাও পারি। তিনি আরো বলেন, কারো কাছে হাত পেতে নয়, বরং বিশ্বে মাথা উঁচু করে আমরা চলতে চাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোনো ভিত্তিহীন কথা বলেননি। তার সরকারের আমলে বিগত ৭ বছরে অনেক মেগা প্রজেক্ট হাতে নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে এক বা একাধিক প্রজেক্ট সমাপ্তও হয়েছে। কুড়িল ফ্লাইওভারের কথা এখানে বিশেষভাবে উল্লেখের দাবীদার। একাধিক শাখা-প্রশাখা বিস্তৃত এই ফ্লাইওভারটির ফলে যান চলাচলে বিপুল সুবিধা হয়েছে। অন্যদিকে মহানগরীর ঐ অঞ্চলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে। এই সরকারের আমলে অনেকগুলো মেগা প্রজেক্ট হাতে নেয়া হয়েছে অথবা হাতের নেয়া চিন্তা-ভাবনা চলছে। এগুলো বাস্তবায়িত হলে ঢাকা মহানগরী বিশ্বের অনেক উন্নত মহানগরীর কাছাকাছি যেতে পারবে। ঢাকার কোনো কোনো রাস্তায় সাইনবোর্ড দেখে ধারণা করা যায় যে, মেট্রোরেলের কাজেই শীঘ্রই হাত দেয়া হবে। এখনকার ঢাকা আর ১০/১৫ বছর আগের ঢাকা নয়। মহাখালী ফ্লাইওভার দিয়ে বেশ কয়েক বছর আগেই যান চলাচল শুরু হয়েছে। গুলিস্তান-যাত্রবাড়ী ফ্লাইওভারও দু’বছর আগে চালু হয়েছে। কুড়িল ফ্লাইওভারের কথা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। গত বুধবার মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারেরও একটি অংশ চালু হলো। সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে যে, ফ্লাইওভারের ওপার অংশ চালু হতে আর খুব বেশী বিলম্ব হবে না। দু’কিলোমিটার লম্বা এই উড়াল সেতুতে গত বুধবার যানবাহনের চাপ থাকলেও সাতরাস্তায় তেমন বিরক্তিকর যানজট দেখা যায়নি। সাতরাস্তা হাতির ঝিল ইন্টারসেকশনে এর আগের দিনগুলোতে যানবাহন এবং মানুষের ভয়াবহ দীর্ঘ লাইন দেখা যেতো। গত বুধবার সেটা দেখা যায়নি। এই ফ্লাইওভারের একটি অংশ চালু হওয়ার ফলে জনগণ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে।  
এই ফ্লাইওভারটি উদ্বোধন করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, তার সরকার সারা দেশে সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে চায়। এর ফলে দেশের আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নতি হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন যে, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের অন্যতম পূর্বশর্ত হলো সারা দেশব্যাপী সড়ক যোগাযোগের সুবিন্যস্ত নেটওয়ার্ক। উল্লেখ করা যেতে পারে, বর্তমান সরকারের আমলে বেশ কিছু মেগা প্রজেক্ট গৃহীত হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক চার লেইন প্রকল্প, পদ্মা সেতু প্রকল্প ইত্যাদির কথা এখানে বিশেষভাবে বলা যায়। ঢাকা-চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, কর্ণফুলী টানেল, গভীর সমুদ্রবন্দর ইত্যাদি নির্মাণের উদ্যোগেও অগ্রসরমান। পত্র-পত্রিকায় এ খবরও এসেছে, একটি একটি চীনা কোম্পানীর সাথে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ঢাকা এবং যশোরের মধ্যে রেল যোগাযোগ নির্মাণের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এটিও একটি মেগা প্রজেক্ট। বর্তমান হিসাব মতে এই প্রকল্পে ব্যয় হবে ৩৩৩ কোটি মার্কিন ডলার। বাংলাদেশী মুদ্রায় এটি ২৬,৬৪০ কোটি টাকা। যেসব প্রকল্পের কথা বলা হলো সেগুলো অধিকাংশই যুগান্তকারী, সন্দেহ নেই। এসব প্রকল্প যখন বাস্তবায়িত হবে তখন দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে সেগুলো বিরাট প্রভাব ফেলবে।
এতো কিছু বলার পরেও দেশবাসী দুঃখের সাথে লক্ষ্য করছে যে, সবগুলো প্রকল্প উচ্চাভিলাসী হলেও এই গুলোর অধিকাংশের বাস্তবায়ন শম্বুক গতিতে হচ্ছে। অধিকাংশ প্রকল্পই নির্ধারিত সময়ের ৪/৫ এমনকি ৭/৮ বছর পরেও হচ্ছে। এই বিলম্বের কারণেই হোক বা অন্যকোনো কারণেই হোক, প্রকল্প বাস্তবায়নে অস্বাভাবিক বিলম্বের ফলে প্রকল্প ব্যয় বিপুলভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে সেখানে দুর্নীতি এবং লুটপাটের অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। পদ্মা সেতুর ব্যয় ইতোমধ্যেই একাধিক বার বৃদ্ধি পেয়েছে। যে প্রকল্পের ব্যয় শুরুতে ধরা হয়ে ছিলো ২৫/২৬ হাজার কোটি টাকা সেটি এখন ৩৪ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। মগবাজার মৌচাক ফ্লাইওভার প্রকল্প ব্যয় কিছুদিন আগেও ৫০০ কোটি টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এর আগেও নাকি কয়েক দফা ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়েছে। শুধু ব্যয় বৃদ্ধিই নয়, প্রকল্পের মান নিয়েও কথা উঠে। এর বড় উদাহরণ হলো যমুনা সেতু। শুধু বাংলাদেশের নয়, এশিয়ার অন্যতম দীর্ঘ সেতু হলো এই যমুনা সেতু। সেই সেতুতেও ইতোমধ্যে একাধিক স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। মহাখালী সেতু চালু হওয়ার পর সেতুটির জাহাঙ্গীর গেট প্রান্তে তীব্র যানজট দেখা যায়। এটিকে অনেকে অপরিণামদর্শী পরিকল্পনা বলে আখ্যায়িত করেছেন। এসব তিক্ত অভিজ্ঞতার নিরিখে অভিজ্ঞ মহলের অভিমত, মেগা প্রজেক্ট হাতে নেয়া যেমন গৌরবের বিষয় তেমনি তার সময় মতো এবং যথাযথ বাস্তবায়নও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যথাযথ বাস্তবায়ন বলতে আমরা প্রকল্পটির মান বোঝাতে চাচ্ছি। মান বজায় রেখে আগামীতে স্বল্পতম সময়ে মধ্যে এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে বলে দেশের মানুষ প্রত্যাশা করে।                      

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন