সকল অর্জন-আন্দোলনে শিল্পীরা অবদান রেখেছেন//
মাত্র সাড়ে তিন বছরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় নিয়ে গিয়েছিলেন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার (জাতির পিতার) পদাঙ্ক অনুসরন করেই বর্তমান সরকার বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উন্নীত করেছে। জাতির পিতার দেখানো পথে বাংলাদেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশের সকল অর্জন-আন্দোলন-সংগ্রামে সকল স্তুরের শিল্পীরা অবদান রেখেছেন। মার্শাল ল’র সময় যখন রাজনীতিবিদরা কথা বলতে পারছিলেন না; তখন শিল্পীরা তাদের নাটক, সঙ্গীত ও চিত্রকলায় কথা বলেছেন।
গতকাল সোমবার বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে এক চিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালার দুই নম্বর গ্যালারিতে শাহাবুদ্দিন আহমেদের ‘শান্তি’ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে গতকাল। শিল্পকলা একাডেমি ও ভারতের কলকাতার গ্যাঞ্জেস আর্ট গ্যালারি যৌথভাবে এ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। এ আয়োজনে শিল্পী হিসেবে অনুভ‚তি ব্যক্ত করেন শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ। সংস্কৃতি সচিব ইব্রাহীম হোসেন খানের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী ও গ্যাঞ্জেস আর্ট গ্যালারির পরিচালক স্মিতা বাজেরিয়া। অনুষ্ঠানে অন্যপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত শাহাবুদ্দিন আহমেদের লেখা ‘আমার মুক্তিযুদ্ধ’ গ্রন্থের মোড়ক উšে§াচন করেন অতিথিরা।
শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদের চিত্রে মূর্তমান হয়ে উঠে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ আর বঙ্গবন্ধু এমন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি মুক্তিযুদ্ধকে গর্ব আর বঙ্গবন্ধু আর্দশ মেনে চিত্রকলার চর্চার করে চলেছেন। শাহাবুদ্দিনকে নিজের ‘ছোট ভাই’ উল্লেখ করে তার দীর্ঘজীবন কামনা করে বলেছেন, রংতুলিতে সে যেন মুক্তিযুদ্ধের গৌরবের গাঁথা যেন গেয়ে চলেন। শাহাবুদ্দিন আহমেদের সঙ্গে নিজের সম্পর্কের কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাকে আমি ছোট থেকেই চিনি, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে জানতাম। আমরা থাকতাম পাশাপাশি। আমরা ধানমন্ডিতে আর ও কলাবাগানে। তার বহু চিত্রকর্ম আমার দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। সে বাংলাদেশের জন্য বিশাল সম্পদ। সবচেয়ে বড় কথা সে একজন মুক্তিযোদ্ধা। তার এই পরিচয় তুলির আঁচড়ে সে নিয়মিত প্রকাশ করে চলেছেন।
নিজের প্রবাস জীবনে শাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাতের বর্ননা দিয়ে বলেন, ১৯৮০ সালে আমি ও রেহানা (শেখ রেহানা) যখন লন্ডনে, তখন শাহাবুদ্দিন আমাকে ফোন করে দেখা করতে এসেছিলো। ওই সালের ১৬ আগস্ট বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে যুক্তরাজ্যের সর্বদলীয় একটি কমিটির সভায় আমি প্রথম রাজনৈতিক বক্তৃতা দেই। যে অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর একটি ছবি ছিল। কাঠ পুড়িয়ে কয়লা, কাগজ পুড়িয়ে ছাই এবং পেস্টের মিশেলে শাহাবুদ্দিন সেই ছবিটি এঁকেছিলো। এটাই প্রমাণ করে ও একজন প্রকৃত শিল্পী। যে কিনা যেকোন উপাদান দিয়ে ছবি আঁকতে পারে। ওকে ছোট ভাই হিসেবে আমি ও রেহানা সব সময় স্নেহ করি। নিজের রাজনৈতিক জীবনে জনগণকে পাশে পেয়েছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাবা-মা-ভাই-আত্মীয়স্বজন সবাইকে হারিয়ে নিঃস্ব অবস্থায় এদেশে এসেছিলাম। কিন্তু ধন্যবাদ সাধারণ জনগণকে। তাদের যে আদর-স্নেহ পেয়েছি, সেটাই আমাকে শক্তি জুগিয়েছে।
প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হয় শাহাবুদ্দিন আহমেদের জীবন নিয়ে অজয় রায় নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘কালার অফ ফ্রিডম’র অংশ বিশেষ। সে সঙ্গে ছিল শিল্পকলা একাডেমির অ্যাক্রোবেটিক দলের পরিবেশনায় অ্যাক্রোবেটিক প্রদর্শনী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী গ্যালারিতে প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন। সর্বমোট ৩২টি চিত্রকর্ম নিয়ে সাজানো মাসব্যাপী প্রদর্শনী আগামী ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এর আগে ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় কলকাতায় শাহাবুদ্দিন আহমেদের ‘শান্তি’ শিরোনামের এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেছিলেন। পরবর্তীতে ভারতের মুম্বাইতেও একই প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
অনুষ্ঠানে নিজের অনুভ‚তি ব্যক্ত করতে প্রথমেই শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ তিনি প্রধানমন্ত্রীকে আপা সম্বোধন করে বলেন, আপা জানতে চেয়েছিলেন, ফিগারেটিভ ও অ্যাবস্ট্রাক চিত্রকর্মের পার্থক্য কি? তার জবাবে আমি বলছি, আমি ছাড়া মঞ্চে কেউই শিল্পী নন, এটাই অ্যাবস্ট্রাক। তিনি আমাকে ভালোবেসেই আমাদের প্রদর্শনীর উদ্বোধন করতে এসেছেন। তিনি বলেন, আমার জীবনের তিনটি দিক আছে; ছবি আঁকা, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু। ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে প্যারিসে যাওয়ার আগে দেশে দুর্ভিক্ষ চলছিলো। সে সময় আমি ২৭ হাজার টাকা সংগ্রহ করে তার তহবিলে দেওয়ার জন্য চেক দিতে গিয়েছিলাম। তিনি বলেছিলেন, এ টাকা তোর বাবারে দে। আমি তাকে জোর করে চেকটা দেই। সে সময় তার চোখ দিয়ে পানি বেরিয়েছিল। সেটাই ছিল তার সঙ্গে আমার শেষ সাক্ষাত। তিনি রাজনীতিবিদ নন, কারণ, রাজনীতিবিদরা কাঁদতে পারেন না। তিনি ছিলেন মানুষ।
লিয়াকত আলী লাকী বলেন, বঙ্গবন্ধুর প্রেরণায় শিল্পী শাহাবুদ্দিন দেশের বাইরে গিয়েছিলেন। প্রবাসে থাকলেও, তার চেতনায় তার মাতৃভূমি।
স্মিতা বাজেরিয়া বলেন, বঙ্গবন্ধু ও মহাত্মা গান্ধী তার ছবিতে অমরত্ব পেয়েছে। ভারতের স্বাধীকার আদায়ের লড়াই ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে তিনি এক সুঁতোয় গেঁথেছেন।
সর্বমোট ৩২টি চিত্রকর্ম নিয়ে সাজানো হয়েছে এ প্রদর্শনী। গতকাল থেকে শুরু হওয়া মাসব্যাপী এ প্রদর্শনী আগামী ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
এর আগে ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় কলকাতায় শাহাবুদ্দিন আহমেদের ‘শান্তি’ শিরোনামের এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেছিলেন। পরবর্তীতে ভারতের মুম্বাইতেও একই প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন