শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

ফুটপাত বানাতে হবে, দখলমুক্ত রাখতে হবে

প্রকাশের সময় : ২ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ঢাকা শহরের নানাবিধ নাগরিক বিড়ম্বনার মধ্যে সর্বাগ্রে আসে যানজট ও রাস্তার বেহাল অবস্থার কথা। অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে সৃষ্ট জটিলতা থেকে চার শতাধিক বছরের ঐতিহ্যম-িত এই শহরকে আধুনিক ও নাগরিক সুবিধাদায়ী শহরে পরিণত করা দুরূহ হয়ে পড়েছে। এর অপর্যাপ্ত রাস্তা, ফুটপাত এবং অপ্রতুল পরিবেশগত অবকাঠামোই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিগত কয়েক বছর ধরে ঢাকা নগরী বিশ্বের অন্যতম নোংরা ও বসবাসের অযোগ্য শহরের তালিকার প্রথম সারিতে স্থান পাচ্ছে। সরকার এবং নগরকর্তারা ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল ও এক্সপ্রেসওয়ের মতো হাজার হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্প গ্রহণের কথা বললেও শহরকে নাগরিকদের জন্য বাসযোগ্য ও স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচলের উপযোগী করে তোলার ন্যূনতম উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। সম্প্রতি একটি বেসরকারী সংস্থার পরিচালিত এক জরিপ রিপোর্ট থেকে জানা যায়, রাজধানী ঢাকা শহরের ৪৪ শতাংশ রাস্তায় কোনো ফুটপাত নেই। আর যেসব রাস্তায় নামমাত্র ফুটপাত আছে তার ৮২ শতাংশই পথচারীদের চলাচলের অনুপযোগী। অর্থাৎ ঢাকা শহরের প্রায় অর্ধেক রাস্তায় ফুটপাতই নেই, আর যেসব রাস্তায় ফুটপাত আছে তার সিংহভাগই নানাবিধ দখলবাজির কারণে চলাচলের অনুপযোগী। সিটি কর্পোরেশন ও সরকারী সংস্থাগুলো রাস্তা ও ফুটপাতগুলো দখল ও জঞ্জালমুক্ত করতে না পারলেও এতে তাদের আক্ষেপ নেই।
একটি আদর্শ শহরের আবাসন ও সামগ্রিক পরিকাঠামোর শতকরা ২৫ ভাগ রাস্তার জন্য বরাদ্দ রাখার কথা বলেছেন নগরবিদরা। সেখানে ঢাকা নগরীতে রাস্তার পরিমাণ শতকরা ১০ ভাগেরও কম। বেসরকারী সংস্থা ওয়ার্ক ফর বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের প্রকাশিত সাম্প্রতিক গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়েছে, সাধারণত আধুনিক নগর পরিকল্পনায় রাস্তা ও ফুটপাতগুলোকে পথচারীদের জন্য স্বাচ্ছন্দ্যে হেঁটে চলার উপযোগী করে গড়ে তোলার কথা বিবেচনা করা হলেও ঢাকা শহরের নগর পরিকল্পনায় পথচারী যাতায়াতের চেয়ে ব্যক্তিগত গাড়িকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। আবাসন ও নগর পরিকল্পনার এই মৌলিক ত্রুটির কারণেই ঢাকা শহর এখন যানজটের শহরে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে এই নগরীকে আধুনিক, পরিবেশবান্ধব ও নাগরিকবান্ধব করে তোলার নানা উদ্যোগের কথা বলা হলেও সরকারী ও বিভিন্ন সংস্থার জমিদখল থেকে শুরু করে প্রভাবশালী মহলের দ্বারা পার্ক, খেলার মাঠ, খাল, পুকুর জলাভূমির দখলবাজি কখনো বন্ধ হয়নি। একদিকে সরকার ও প্রশাসনের প্রত্যক্ষ ও প্রচ্ছন্ন মদতে চলছে দখলবাজি, অন্যদিকে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে মাঝেমধ্যেই অবৈধ স্থাপনা ও হকার উচ্ছেদের নামে চলছে এক প্রকার ইঁদুর-বিড়াল খেলা। অনেক প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি ছুটিয়ে বিগত মেয়র নির্বাচনের বৈতরণী পার হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের মেয়রদ্বয় অনেক আশার বাণী শুনিয়ে যাচ্ছেন। বাস্তবে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।
গত জানুয়ারি মাসে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সংবাদ সম্মেলন করে এপ্রিলের মধ্যে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর ফুটপাত হকারমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। মেয়রের প্রতিশ্রুতির পর আড়াই মাস পেরিয়ে এখন এপ্রিল মাস চলছে। রাস্তাগুলোর ফুটপাত পথচারীদের চলাচলের উপযোগী করার কোনো বাস্তব উদ্যোগ এখনো লক্ষণীয় হয়ে ওঠেনি। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত এক রিপোর্টে জানা যায়, ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন বলেছেন, পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত হকাররা ফুটপাতে ব্যবসা করতে পারবে। কিন্তু হকারদের কীভাবে, কতদিনের মধ্যে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে, এ ধরনের পরিকল্পনা বা উদ্যোগ সিটি কর্পোরেশনের আছে কিনা সে বিষয়ে সিটি কর্পোরেশন নীরব। এখানে হকার উচ্ছেদ ও ফুটপাত দখলমুক্ত করার ক্ষেত্রে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের নীতি ও কর্মপরিকল্পনায় ভিন্নতা বা সমন্বয়হীনতা লক্ষ করা যাচ্ছে। অন্যদিকে চট্টগ্রামের মেয়র পুনর্বাসনের বদলে হকারদের বাধ্যতামূলক পরিচয়পত্র গ্রহণের মাধ্যমে ফুটপাতে ব্যবসা করার সুযোগ নেয়ার কথা বলেছেন। রাস্তায়-ফুটপাতে হকার বসিয়ে একশ্রেণীর স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি যে প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজি করছে, তা এখন অনেকটা ওপেন সিক্রেট। এখন হকারদের পরিচয়পত্র প্রদান, পুনর্বাসন এবং ফুটপাতে দখরবাজি অব্যাহত রাখতে চাঁদাবাজির নতুন প্রতিযোগিতা শুরু হবে। নগরবাসী এসব চালবাজি আর দেখতে চায় না। সরকারী রাস্তা দখল করে গড়ে ওঠা সরকারী দলের স্থানীয় কার্যালয় ও বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের শত শত অফিস উচ্ছেদ করতে হবে। গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলো অবৈধ পার্কিংমুক্ত এবং ফুটপাতগুলো হকারমুক্ত করতে স্থায়ী ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। যেসব রাস্তায় ফুটপাত নেই সেখানে নিরাপদ ফুটপাত তৈরি করতে হবে। হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্পের চেয়ে নগরবাসীর কাছে এসব উদ্যোগই বেশি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন