যেদিন রাতে মা আফসানা খানম টপি স্ট্রোক করেন সে সময় মায়ের পাশেই ঘুমিয়েছিল ছেলে তানজিব বিন সুলতান মাহি (১৪)। অনেকক্ষণ মায়ের কোনো সাড়া না পেয়ে চিৎকার করে মাহি। এরপর উত্তরায় বাংলাদেশ মেডিকেল হাসপাতালে নেয়া হয় টপিকে। সেখান থেকে নেয়া হয় শেরে বাংলা নগরের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড হাসপাতালে। গত রোববার থেকে ৫ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর নেপালে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত পাইলট আবিদ সুলতানের স্ত্রী আফসানা খানম শুক্রবার (২৩ মার্চ) সকাল সাড়ে নয়টার দিকে মারা যান। মাত্র ১০ দিনের মধ্যে বাবা মায়ের মৃত্যুতে একমাত্র ছেলে তানজিদ সুলতান মাহি (১৪) স্তব্ধ, নির্বাক।
প্রথমে বাবা আবিদ সুলতানের মৃত্যুর খবরে দিশেহারা মাহিকে নিয়েই ছিল আত্মীয়-স্বজনদের দুশ্চিন্তা। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে স্বামীর কাছে চলে গেলেন টপি। তার মৃত্যুতে দুশ্চিন্তা আরও বেড়েছে স্বজনদের। তবে মায়ের মৃত্যুর খবর জানানো হলেও কাছে নেয়া হয়নি মাহিকে। হাসপাতালের তৃতীয় তলায় আইসিইউ বিভাগের নিচে ডাক্তারের চেম্বারে রাখা হয়েছে তাকে।
টপির ফুফাতো ভাই ইঞ্জিনিয়ার শাহিনুর রহমান শাহিন জানান, বৃহস্পতিবার রাতেও হাসপাতালে ছিলো মাহি। মায়ের খোঁজ খবর রেখেছে। ভোরে বাসায় চলে যায়। কিন্তু সাড়ে ৯টার দিকে মৃত্যু হয় মা টপির। সাড়ে ১০টায় দুঃসংবাদটি জানানো হয় মাহিকে। কান্নায় ভেঙে পড়েছে মাহি। কোনোভাবে বোঝানো যাচ্ছে না। বারবার মায়ের কাছে যেতে চাইছে।
শাহিন বলেন, একটা ছেলে যার বাবার পর মাও মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে মারা গেল তার মনের অবস্থাটা বুঝুন। আমরা সবাই ওকে সহযোগিতা করবো। আপনারা ওর জন্য দোয়া করবেন। দেশবাসীর কাছে অনুরোধ আবিদ-টপির জান্নাত কামনায় দোয়া করবেন। মাহি যেন শোক কাটিয়ে শক্ত হতে পারে সেজন্য দোয়া কামনা করছি।
আফসানার ফুফাতো ভাই খন্দকার রেজাউল করিম জানান, ‘মাহি এখন চুপ করে আছে। আর কাঁদছে না। কাঁদলে মন হালকা হতো।’ তিনি জানান, আবিদের মৃত্যুসংবাদ পেয়েও তাঁর স্ত্রী আফসানা কাঁদেননি। শক্ত হয়ে ছিলেন। মায়ের স্ট্রোকের সময় মাহি পাশে ছিল। এখন ছেলেকে নিয়েই তাঁদের যত চিন্তা।
আবিদ সুলতানের ছোট ভাই ডাক্তার খুরশিদ মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, ‘সবার প্রতি অনুরোধ মাহিকে একা থাকতে দিন, ওর উপর দিয়ে ঝড় যাচ্ছে। আমাদের স্বপ্ন ও দুশ্চিন্তা সব এখন ওকে ঘিরেই’।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন