তামান্না তানভী
সৃষ্টিতে সুখলাভ করা যায় এমন কতগুলো কাজ আছে যেখানে মানুষ কম খেয়েপরেও সুখে থাকতে পারে, জীবনকে বৈচিত্র্যময় করে তুলতে পারে, তেমন একটি কাজ হচ্ছে ফটোগ্রাফি। কাজের আনন্দ থাকে বলেই অনেক ক্ষেত্রে উচ্চ শিক্ষিত তরুণ-তরুণীরা যুগোপযোগী পেশা ছেড়ে ফটোগ্রাফিতে ঝুঁকছে। শখ থেকে নেশা, নেশা থেকে পেশা। ফটোগ্রাফি একটি সৃজনশীল পেশা। নিজের মধ্যে সৃজনশীল মনোভাব থাকলে যে কেউই এ পেশায় সফলতা লাভ করতে পারে। মিডিয়া জগতে বর্তমানে এ পেশায় দক্ষ লোকের চাহিদা রয়েছে প্রচুর। আর এ পেশার ব্যাপ্তিও রয়েছে অনেক। তাই ফটোগ্রাফির বিভিন্ন বিষয় ক্যারিয়ার পাতায় তুলে ধরা হলো :
কাজের ধরন
একজন সৃজনশীল এবং দক্ষ ফটোগ্রাফারের কাজের ক্ষেত্রে ব্যাপ্তি অনেক বেশি। ফটো সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করে বর্তমানে সুপরিচিত এবং আর্থিকভাবে সচ্ছল অনেকেই।
একজন ফটো সাংবাদিকের প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেট্রনিক মিডিয়া, নিউজ এজেন্সি, ফটো এজেন্সিতে কাজের সুযোগ আছে। সাংবাদিকতা ছাড়াও গ্ল্যামার ফটোগ্রাফি, প্রোডাক্ট ফটোগ্রাফি, ওয়েডিং ফটোগ্রাফি, ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফি, চলচিত্রে স্টিল ফটোগ্রাফি করার সুযোগ রয়েছে। ফটো কম্পিটিশন এবং ফটো এক্সিবিশনে অংশগ্রহণ করতে পারেন। এ ছাড়া মহল্লা বা পাড়ায় স্টুডিও স্থাপন করেও প্রতিষ্ঠিত হওয়া যায় এই পেশায়।
কী কী কাজে লাগে
ফটোগ্রাফি মানুষের অনেক কাজেই ব্যবহার হয়ে থাকে। তবে তার ব্যবহারের ধরনও থাকে ভিন্ন ভিন্ন। শখ, পেশা, ব্যবসা, সত্য ইতিহাস রচনা, বিজ্ঞাপন, মুদ্রণ, সিনেমা, টেলিভিশন, গবেষণা, প্রশিক্ষণ, মানচিত্র প্রস্তুতকরণ, দুর্নীতি দমন, তথ্য সংরক্ষণ ও বিতরণ, আবহাওয়া পর্যালোচনা, পর্যটন, রোগ নির্ণয় তবে এ ক্ষেত্রে দুটি লেন্স ব্যবহৃত হয়। যেমনÑ মাইক্রো এবং স্যাইক্রো ইত্যাদি সব কাজে ফটোগ্রাফি কাজে লাগে।
সৃজনশীলতা এবং ধৈর্য
দক্ষ ফটোগ্রাফার হতে হলে সৃজনশীল মনোভাব থাকতে হবে। একটি দৃশ্য থেকে সাধারণ মানুষ যা না দেখে একজন ফটোগ্রাফারকে তার সৃজনশীলতার মাধ্যমে ওই দৃশ্য থেকে আলাদা কিছু বের করে আনার যোগ্যতা থাকতে হবে। এ পেশায় ধৈর্য থাকাটা জরুরি। আর প্রেস ফটোগ্রাফি করার জন্য শারীরিক সুস্থতা প্রয়োজন।
কেননা প্রেস ফটোগ্রাফারকে হরতাল, পিকেটিং, মারামারিসহ বিভিন্ন রকম রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও দায়িত্ব পালন করতে হয়। যেখানেই অ্যাসাইনমেন্ট দিক না কেন তা যথাসময়ে অফিসে জমা দিতে হয়। এরকম পরিস্থিতিতে শারীরিক অযোগ্য লোকের পক্ষে কাজ করা প্রায় অসম্ভব। কাজের ব্যাপারে যত বেশি আন্তরিক থাকবেন তত দ্রুত সাফল্য আসবে এ পেশায়।
কম্পিউটারে দক্ষতা
ফটোগ্রাফির সার্বিক দিকটাই এখন কম্পিউটারনির্ভর। তাই দক্ষ ফটোগ্রাফার হতে হলে বর্তমানে প্রযুক্তি জ্ঞান থাকাটা প্রয়োজন। ছবিতে বিভিন্ন ইফেক্ট এবং প্রাণবন্ত করে তুলতে ফটোশপের বিভিন্ন ভার্সনে কাজ করার দক্ষতা থাকতে হবে। যারা স্টুডিও ব্যবসায় ফটোগ্রাফি করতে চান তাদের জন্য আলাদাভাবে প্রিন্টারে ছবি প্রিন্ট, ছবির কালার কালেকশন, ছবিতে বিভিন্ন ইফেক্টের ব্যবহার করার জন্য কম্পিউটারে দক্ষতা জরুরি।
আয়
বিভিন্ন সেক্টরের ফটোগ্রাফারদের আয় বিভিন্ন রকম। একজন ফটোসাংবাদিকের বেতন ১০ থেকে ৫০ হাজার টাকার ওপরেও হয়ে থাকে। তবে বর্তমান মিডিয়ার প্রসারের ফলে একজন ফটোগ্রাফারের আয়ের কোনো নির্দিষ্ট পরিসীমা নেই।
প্রশিক্ষণ
ফটোগ্রাফি বর্তমানে কম্পিউটার নির্ভরশীল। এর বিভিন্ন টেকনিক এবং অন্যান্য কাজ সম্পূর্ণ জিজিটাল। তাই ফটোগ্রাফির কৌশল যথাযথভাবে রপ্ত করার জন্য প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। একনিষ্ঠভাবে ফটোগ্রাফিকে ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে চাইলে তার জন্য প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা প্রয়োজন। পেশা হিসেবে নিতে চাইলে ফটোগ্রাফির ওপর বেসিক জ্ঞান থাকাটা জরুরি। প্রশিক্ষণ শেষে যে যত বেশি কাজ করবে তার অভিজ্ঞতা তত দ্রুত বাড়তে। ফটোগ্রাফির জন্য যেসব কোর্স করতে পারবেন। যেমনÑ শর্ট কোর্স, এডভান্স ফটোগ্রাফি কোর্স এবং ডিপ্লোমাসহ বিভিন্ন কোর্স করে নিতে পারেন।
ফটোগ্রাফারের জন্য প্রয়োজন ক্যামেরা
ফটোগ্রাফিতে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে অবশ্যই তাকে ভালোমানের ক্যামেরা ব্যবহার করতে হবে। বাংলাদেশে বেশি জনপ্রিয় দুটি ক্যামেরা রয়েছে তা হলো ক্যানন ও মাইকন। এগুলো বেশ টেকসইও। ছোট থেকে বড় ক্যামেরার দাম পড়বে ৪০ হাজার থেকে ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত হয়। যেসব ক্যামেরা বেশি ব্যবহৃত হয়Ñ নাইকন, উ৯০, উ৭০, উ২০০, উ৫০০১, উ৫০০০, উ৭০০ এবং ক্যাননে রয়েছে ৫০উ, ৫৫০উ, ৫০০উ প্রভৃতি।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান
ঢাকা ইউনিভার্সিটি ফটোগ্রাফি ইনস্টিটিউট, জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট, পাঠশালা, চঞ্চল মাহমুদ স্কুল অব ফটোগ্রাফি, বেঙ্গল আর্ট ইনস্টিটিউট অব ফটোগ্রাফি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন