সায়ীদ আবদুল মালিক : রাজধানীর দুই সিটির ছোটবড় সাত শতাধিক সড়কে তিন মাস ধরে একযোগে চলছে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে নেই কোন সঠিক তদারকি। ঠিকাদাররেরা যে যেমন খেয়াল-খুশি মত কাজ করছে। এতে নগরবাসী পড়েছে চরম উন্নয়ন ভোগান্তিতে। একটু বৃষ্টিতেই কাদা-পানিতে একাকার হয়ে সড়কে চলাচলের উপায় থাকে না। এ অবস্থায় সড়কে প্রতিনিয়তই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। আবার রোদ উঠলে বাতাসে ধুলাবালি উড়ে চোখ-মুখ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। নিঃশ্বাসের সাথে এ ধুলাবালি নাক দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে শ্বাসকষ্ট ও এজমাসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে নগরবাসী। বিভিন্ন সেবাসংস্থার মধ্যে সমন্বয়হীনতার অভাবে প্রতিবছর একই সড়ক একাধিকবার কাটা হচ্ছে। বাড়ছে নাগরিক দুর্ভোগ, অপচয় হচ্ছে সরকারি অর্থ। প্রকৃতিতে এখন কালবৈশাখীর মওসুম। বর্ষা শুরু হতেও আর বেশিদিন বাকি নাই। বর্ষার আগে এ কাজ শেষ হওয়ারও কোন সুযোগ নেই। যদিও বর্ষা মৌসুমে সড়ক খোঁড়ার সরকারি অনুমতি নাই। তাই এ বর্ষা মৌসুমে নগরবাসীর উন্নয়ন ভোগান্তি আরও কয়েকগুণ বাড়ার আশঙ্কা করছেন নগর পরিকল্পাবিদরা।
জানা গেছে, সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি কাজের জন্য সরকারের সুনির্দিষ্ট নিয়মনীতি থাকলেও তা কেউ মানছে না। বরং সরকারের এক বিভাগের সাথে আরেক বিভাগের সমন্বয়হীনতা কাজের গতিকে আরও মন্থর করে দিচ্ছে। বিশেষ করে অনেক রাস্তার কাজ আটকে আছে মামলা, বৈদ্যুতিক খুঁটি, ওয়াসার পাম্প, টেলিফোন লাইনের খুঁটি এবং গ্যাস পাইপ লাইন সময় মত না সরানোর কারণে। এতে একদিকে যেমন রাস্তার উন্নয়ন কাজের প্রকল্প ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে; অন্যদিকে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থের অপচয় হচ্ছে। বাড়ছে যানজট। অনেক ক্ষেত্রে এসব বড় বড় গর্ত দুর্ঘটনার কারণ হয়েও দেখা দিচ্ছে।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকার বিভিন্ন রাস্তায়ই দেখা গেছে এ বেহাল দশা। এ ব্যাপারে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় বলছে, সরকার বৃষ্টির আগেই অধিকাংশ এলাকার রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কাজ শেষ করার নির্দেশ দিয়েছে। তবে দীর্ঘ মেয়াদি কাজগুলোর গতি যাতে শ্লথ না হয়; সে ব্যাপারেও সজাগ দৃষ্টি রাখা হচ্ছে।
রাজধানী ঘুরে দেখা গেছে, ঢাকার মগবাজার, মালিবাগ, খিলগাঁও, তালতলা, শাহজাহানপুর, মুগদাপাড়া, মিরপুর, যাত্রাবাড়ি, নিউমার্কেট, মহাখালী, উত্তরাসহ প্রায় সব এলকাতেই চলছে রাস্তা মেরামতের কাজসহ ডিসিসি’র নানা উন্নয়নমূলক কাজ। ফলে রাজধানীর অনেক রাস্তাই এখন চলাচলের অনুপযুক্ত। নগরীর পূর্ব-পশ্চিম, উত্তর-দক্ষিণের প্রায় সব এলাকার পাড়া-মহল্লার রাস্তার বেহাল দশা। একটু বৃষ্টিতেই কাদা-পানি মিলে একাকার হয়ে গেছে। খানাখন্দ বুঝার উপায় নেই। এ অবস্থায় প্রতিনিয়তই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটে।
রাজধানী ঢাকার ছোটবড় সাত শতাধিক সড়কে একযোগে চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। ধুলোবালি ও যানজটে দুর্বিষহ ভোগান্তি পোহাচ্ছেন নগরবাসী। এ ভোগান্তির জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বর্ষার আগেই কাজ শেষ করার আশ্বাস দিলেন ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন।
তবে সেবাসংস্থাগুলো সমন্বিতভাবে কাজ করলে জনদুর্ভোগের পাশাপাশি উন্নয়ন খরচও কমানো সম্ভব বলে মনে করছেন নগর বিশেষজ্ঞরা।
বিক্ষিপ্তভাবে ঢাকার ছোট বড় বিভিন্ন সড়কে সেবাসংস্থাগুলোর সমন্বয়হীন কর্মযজ্ঞে উন্নয়নের সুফল ভোগ করার চেয়ে বিড়ম্বনাই যেনো বেশি। একেকটি রাস্তায় দীর্ঘ দিন ধরে কেটে রাখায় যানজট ও ধুলোবালিতে অতিষ্ঠ নগরবাসী।
এদিকে সমন্বয়হীনতার কথা স্বীকার করে বর্ষার আগেই কাজ শেষ করার কথা জানান দক্ষিণের মেয়র। তবে সিটি কর্পোরেশনের সাথে সমন্বয় করে অন্যান্য সেবা সংস্থাগুলো একযোগে কাজ করলে দীর্ঘ মেয়াদে সমস্যার সমাধান সম্ভব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনস্বার্থেই সিটি কর্পোরেশনের কাছে সেবাসংস্থাগুলোর জবাবদিহিতার ব্যবস্থা করা জরুরি।
ঢাকা ওয়াসার স্যুয়ারেজ লাইন, টিঅ্যান্ডটি অথবা গ্যাসলাইন একটা না একটা সংস্থার খোঁড়াখুঁড়ির কাজ লেগেই আছে। কোনো কোনো রাস্তার ফুটপাত দিয়ে হাঁটা যায় না। এসব সংস্থার উন্নয়ন কাজের সমন্বয় নেই বলে ঢাকার খোঁড়াখুঁড়ি দীর্ঘস্থায়ী হয়ে থাকে।
অন্যদিকে ডিসিসি’র রাস্তাঘাটের সংস্কার, নতুন রাস্তার কাজ তো সারা বছরই লেগে আছে। রাস্তার পাশ দিয়ে খোঁড়াখুড়ি করার কারণে রাস্তাগুলো ছোট হয়ে যায়।
কখনো কখনো বৃষ্টি হয়ে ড্রেনের পানি ও খোঁড়াখুঁড়ির কাদা মাটিতে রাস্তাঘাট চলাচলের অযোগ্য হয়ে যায়। দেখা গেছে, বাংলামটর থেকে মালিবাগ পর্যন্ত রাস্তার মাঝখান দিয়ে চলছে ফ্লাইওভারের কাজ, অন্যদিকে রাস্তার পাশ দিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের খোঁড়াখুঁড়িতে একদিকে তীব্র যানজট অন্যদিকে পথচারীদের দুর্ভোগ। স্কুলগামী ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের আরও সীমাহীন কষ্ট। স্কুলে যাওয়ার পথে এসব খোঁড়াখুঁড়ির কাদা মাটি থেকে সতর্ক থাকলেও অনেক সময় কাদা লেগে ড্রেস নষ্ট হয়ে যায়, এমন দৃশ্যও চোখে পড়ে। মগবাজার চৌরাস্তা থেকে মৌচাক-মালিবাগ রাস্তায় এমনই বেহাল অবস্থা। সাতরাস্তা থেকে মৌচাক আসতে যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় লেগে যায় এই একই কারণে। এছাড়াও রাজধানীর মিরপুর, গাবতলী, মোহাম্মদপুর, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, আজিমপুর, মনিকনগর, বাসাবো, খিলগাঁও, শাহজাহানপুর, গোপিবাগ, গোলাপবাগ, যাত্রাবাড়ি, খিলক্ষেতসহ অনেক এলাকায় খোঁড়াখুঁড়ির দৃশ্য চোখে পড়ে।
বড় মগবাজারের বাসিন্দা রিফাত মামুন বলেন, রাস্তার খোঁড়াখুঁড়ির কাজ দ্রæত শেষ করার দায়িত্ব স্থানীয় এমপি, কমিশনার এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগের। এখন দেশের যে অবস্থা তাতে নগরবাসী কার কাছে এর প্রতিকার চাইবে তারই কোন ঠিক ঠিকানা নাই। উন্নয়ন কাজগুলো দ্রæত শেষ না হওয়ার কারণে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সেবা সংস্থার ঠিকাদাররা দ্রæত কাজ শেষ করতে না পারায় উন্নয়ন কাজের জন্য সময় বাড়িয়ে দেয়া হয়। আবার অনেক সংস্থা তাদের উন্নয়ন কাজ করতে গিয়ে খোঁড়াখুঁড়ি করে রাস্তা সঠিকভাবে কার্পেটিং করা হয় না। এতে অনেক সময় রাস্তার অনেকাংশ ভেঙে যায়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন