রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ০৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

জনজীবন নিয়ে ছিনিমিনি

ফার্মাসিস্ট ছাড়াই চলছে রমরমা ফার্মেসি ব্যবসা

মুন্সী কামাল আতাতুর্ক মিসেল, চান্দিনা থেকে | প্রকাশের সময় : ৮ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

[প্রেসক্রিপশন ব্যতীত অবাধে বিক্রি হচ্ছে হাই অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ]
ভেজাল ওষুধে বাজার সয়লাব। কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না ভেজাল, মানহীন ও নকল ওষুধ। কুমিল্লা শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল সবখানেই ভেজাল ওষুধের দৌরাত্ম্য। এসব ওষুধ সেবনে ক্যান্সার, স্ট্রোক ও কিডনি বিকল হয়েছে অনেকেরই। আবার কেউ কেউ মৃত্যুও হয়েছে ভেজাল ওষুধের কারণে। অলিতে-গলিতে ব্যাঙের ছাতার মতো কুমিল্লায় গড়ে উঠেছে সহস্রাধিক ওষুধের দোকান। ওষুধ প্রশাসনের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই শুধু ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে এবং প্রশিক্ষণ ছাড়াই ফার্মেসি দিয়ে বসে পড়েছেন ওষুধ ব্যবসায়। এসব ফার্মেসি ব্যবসায়ীরা চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই হায়ার অ্যান্টিবায়োটিক, নিষিদ্ধ, ভেজাল, মেয়াদোত্তীর্ণ ও বিভিন্ন নিম্নমানের যৌন উত্তেজক ওষুধ অবাধে বিক্রি করছে।
কুমিল্লায় সহস্রাধিক ওষুধের দোকান বা ফার্মেসি রয়েছে। ওষুধের দোকান বা ফার্মেসির সংখ্যা কত এ নিয়ে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর, ড্রাগ লাইসেন্স প্রদানকারী সংস্থা, কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতি কারও কাছেই সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। তবে ওষুধ প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী কুমিল্লা জেলায় লাইসেন্সপ্রাপ্ত ফার্মেসির সংখ্যা ১৬৭৯টি। কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির তথ্য অনুযায়ী ধারণা অনুযায়ী ওষুধ ব্যবসায়ীর সংখ্যা ৪ হাজার।
তবে নামে-বেনামে পাড়া-মহল্লায় ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠা এসব ফার্মেসির সংখ্যা ৬ হাজারের বেশি। যার বেশির ভাগেরই নেই ড্রাগ লাইসেন্স, ট্রেড লাইসেন্স বা প্রশিক্ষিত ফার্মাসিস্ট। অথচ ড্রাগ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ, ১৯৮২-এর ৪ নম্বরের ১৩ নাম্বার ধারার ‘ফার্মাসিস্টদের নিয়োগ’ শিরোনামের ২ নাম্বার উপ-ধারায় উল্লেখ আছে কোনো খুচরা বিক্রেতা বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিলের কোনো রেজিস্ট্রারের রেজিস্ট্রিভুক্ত ফার্মাসিস্টদের তত্ত¡াবধান ব্যতিরেকে কোনো ড্রাগ বিক্রি করতে পারবে না। কিন্তু এ সকল বিধি-বিধানকে তোয়াক্কা না করে নগরীর অধিকাংশ ফার্মেসি চলছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চান্দিনা এলাকার এক ওষুধ ব্যবসায়ী বলেন, লাইসেন্স পাওয়ার জন্য মোটা অংকের ঘুষ দিয়েও ওষুধ প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও দালালদের দ্বারা নানা প্রকার হয়রানির শিকার হতে হয়। তাছাড়া একটি লাইসেন্স নিতে হলে সব শর্ত মানার পরেও ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়ে যায়। ফলে মানহীন ভুল ওষুধ যেমন বিক্রি হয়, তেমনি এসব ওষুধ কিনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ক্রেতারা। মাধ্যমিক পার হননি এমন অনেকেই ফার্মেসিতে চাকরি করছেন। কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে অন্তত দশটি ফার্মেসিতে যারা চাকরি করেন অনেকেই মাধ্যমিকের গন্ডি পার হননি। বয়স আঠারোর নিচে। অনেকে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রও পড়তে পারেন না। ওষুধের নামের আধ্যাক্ষর দেখে অনুমান করে ওষুধ বিক্রি করার অভিযোগও আছে। এ ক্ষেত্রে অনেক সময় ভুল ওষুধও বিক্রি হয়ে যায়।
কোন রেজিস্ট্রার্ড ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ব্যতীত সিপ্রোফ্লোক্সাসিলিন, এজিথ্রোমাইসনসহ অনেক হাই অ্যান্টিবায়োটিক, ঘুমের বড়ি, ব্যথা নাশক ও নিম্নমানের যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট অবলীলায় বিক্রি করছে। এছাড়াও প্রকাশ্যে মজুদ রেখে বিক্রি করা হচ্ছে আমদানি নিষিদ্ধ ওষুধ।
জানা যায়, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ বিক্রির ক্ষেত্রে ভালোমানের ওষুধের চেয়ে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বেশি কমিশন দেয়া হচ্ছে। এতে করে বেশি লাভের আশায় ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ বিক্রিতে বেশি আগ্রহী হচ্ছে এসব ওষুধ ব্যবসায়ীরা। শহরের অবৈধ ফার্মেসিগুলো সাধারণ মানুষের অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে অপেক্ষাকৃত কমমূল্যের ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বেশি মূল্যে বিক্রি করছে, যা রোগ নিরাময়ের পরিবর্তে উল্টো নানা উপসর্গের সৃষ্টি করছে। কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির কুমিল্লার সভাপতি মো. এনায়েত উল্লাহ বলেন, এই সংগঠনের সদস্য হতে হলে ড্রাগ লাইসেন্স ট্রেড লাইসেন্স, আয়কর দাখিলের সনদসহ ফার্মেসির সার্টিফিকেট প্রয়োজন হয়। সংগঠনের বাইরে ৬ গুণ ওষুধের দোকান রয়েছে যাদের ওষুধ প্রশাসনের নির্ধারিত নিয়মে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নেই। এরাই ভেজাল নিম্নমানের মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের সাথে জড়িত। সরকারি হাসপাতালের বিক্রয় নিষিদ্ধ ওষুধ এসব দোকানের মাধ্যমেই বিভিন্ন এলাকায় মানুষের হাতে চলে যায়। প্রশাসনে এসব অবৈধ ওষুধের দোকানের বিরুদ্ধে জনস্বার্থে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা উচিত। চান্দিনা উপজেলার বিভিন্ন ওষুধের দোকানে নিষিদ্ধ ওষুধ দেদারছে বিক্রি হচ্ছে। অথচ এ ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রশাসন। গ্রাম-গঞ্জের হাতুরে ডাক্তাররা এসব ওষুধ প্রয়োগ ও বিপণন চালিয়ে যাচ্ছেন। এসকল কোম্পানীর স্থানীয় প্রতিনিধি ও কর্মকর্তাসহ ওষুধ ব্যবসায়ীরা এনিয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর কুমিল্লার ড্রাগ সুপার বলেন, ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ নিম্নমানের ওষুধ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। বিভিন্ন স্থানে অলিগলিতে এসব ব্যবসায়ীরা যাতে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করতে না পারে সে জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম আরো বেশি করে পরিচালিত হচ্ছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন