কারাদন্ড দেওয়া হয়েছিল পাঁচ বছরের। কিন্তু, ৪৮ ঘণ্টা জেলে কাটিয়েই বাড়ি ফিরেছেন বলিউডের ‘ভাইজান’। গতকাল শনিবার ৫০ হাজার টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে কৃষ্ণসার হরিণ হত্যা মামলায় জামিন পেয়েছেন সালমান খান। সূত্রের খবর, সন্ধ্যায়ই তিনি জেল থেকে বেরিয়ে মুম্বাই রওনা দেন। তবে তিনি দেশ ছেড়ে যেতে পারবেন না। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ যোধপুর দায়রা আদালতে শেষ হয় সালমানের জামিনের শুনানি। তারপরই বিচারক যোশী জানান, দুপুরে এ বিষয়ে রায় শোনাবেন তিনি। সেই মতো দুপুর ৩টা নাগাদ সালমানকে জামিন দেন যোধপুর দায়রা আদালতের বিচারক রবীন্দ্রকুমার যোশী। মামলার পরবর্তী শুনানি ৭ মে। ওই দিন ফের আদালতে হাজিরা দিতে হবে সালমানকে।
জামিনের খবর ছড়িয়ে পড়তেই আনন্দে মেতে ওঠেন সালমানের ভক্তরা। রীতিমতো বাজি ফাটিয়ে উৎসবে মাতেন তারা। পাশাপাশি, সালমানের জামিনের রায়ে স্বস্তিতে বলিউডও। কারণ, সলমনের পিছনে ম্ম্বুাইয়ে এই মুহূর্তে লগ্নির পরিমাণ ৪০০ থেকে ৬০০ কোটি টাকা। তিনি জেলে থাকলে অনেক ছবিই আটকে যেত।
যদিও এদিন সকাল থেকে সালমানের জামিন সংক্রান্ত মামলা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছিল। কারণ, শুক্রবার বিচারক রবীন্দ্রকুমার যোশীসহ ৭২ জনকে বদলির নির্দেশ দেয় প্রশাসন। তবে, বিচারক বদলির এই প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ করতে সাত দিন সময় লাগে। সে জন্য এ দিন যোশীর এজলাসেই হয় সালমানের জামিন সংক্রান্ত মামলার শুনানি।
২০ বছর আগেকার কৃষ্ণসার হরিণ হত্যা মামলায় পাঁচ বছরের কারাবাসের সাজা পাওয়ার পর থেকেই সালমানকে রাখা হয় যোধপুর সেন্ট্রাল জেলে। শুক্রবার রাতে তাকে ডাল, রুটি, তরকারি খেতে দেওয়া হয়। জেল সূত্রে খবর, বিচারক বদলির খবর পেয়ে তিনি নাকি অস্থির হয়ে পড়েছিলেন। রাতে দু’চোখের পাতা এক করতে পারেননি।
যোধপুর দায়রা আদালতের জামিনের আবেদন জানিয়ে সালমানের তরফ থেকে বলা হয়, যে সাক্ষীদের কথার উপর ভিত্তি করে এই মামলার সাজা ঘোষণা করা হয়েছে, তাদের মন্তব্য মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। শুক্রবার বেশ কিছুক্ষণ শুনানির পর রায়দান স্থগিত রেখেছিলেন বিচারক রবীন্দ্রকুমার যোশী।
১৯৯৮ সালে যোধপুরের কাছে কানকানি গ্রামে ‘হাম সাথ সাথ হ্যায়’ ছবির শুটিংয়ের জন্য গিয়ে দুটি বিরল প্রজাতির হরিণ শিকারের অভিযোগ উঠেছিল সালমান খানের বিরুদ্ধে। স্থানীয় বিষ্ণোই সমপ্রদায় ওই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। কৃষ্ণসার হরিণকে অত্যন্ত পবিত্র বলে বিবেচনা করে ওই সমপ্রদায়। গত বৃহস্পতিবার তাদের দায়ের করা মামলায় অভিযোগ প্রমাণিত হলে যোধপুরের আদালত সালমান খানকে ৫ বছরের কারাদন্ড ও দশ হাজার রুপির জরিমানার রায় দেয়। রায়ের পর যোধপুরের কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয় ৫২ বছর বয়সী এই সুপারস্টারকে। সেখানে দুই রাত কাটাতে হয় তাকে।
শুনানীতে আইনজীবীরা ওই মামলার প্রত্যক্ষদর্শীদের স্বাক্ষ্য ও হরিণ দুটির পোস্ট মর্টেম রিপোর্টের বিশ্বস্ততা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছিল, মারা যাওয়া হরিণ দুটির দেহে বন্দুকের গুলির চিহ্ন ছিল। সালমানের আইনজীবীরা বলেন, পরীক্ষার জন্য শুধু হরিণগুলোর হাড় পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তার চামড়া এবং গোশতও পরীক্ষার ভালো ফলাফলের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
আনুষ্ঠানিক কাগজপত্র কারাগারে পৌঁছানোর পর সন্ধ্যায় তাকে মুক্তি দেয়া হয়। মোট এক লাখ রুপির বন্ডে জামিন পেয়েছেন তিনি। এছাড়া দেশের বাইরে যাবার জন্যও আদালতের কাছে আবেদন করেছেন সালমান খান। এ বিষয়ে শুনানীর জন্য আগামী ৭ মে দিন ধার্য করেছে আদালত।
আদালত এলাকায় সকাল থেকে সালমান ভক্তদের আনাগোনা বাড়তে থাকায় সেখানে নিরাপত্তা জোরদার করা হয় বলে জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো। তবে জামিন ঘোষণার খবর পেয়ে ভক্তদের যোধপুর, মুম্বাইসহ বিভিন্ন স্থানে বাজি ফাটিয়ে আনন্দ উল্লাস করতে দেখা গেছে।
টাইগার খাঁচায় ভরে জঙ্গলের সন্তানদের উৎসব
এদিকে দুই দশকের লড়াই শেষে জয় পেয়ে আনন্দে মেতে উঠেছিল যোধপুরের বিষ্ণোই সমপ্রদায়। টাইগারকে খাঁচায় ভরতে পেরেছিল বলেই খুশি তারা। এটিই তাদের জন্য উৎসব। তাদের আফসোসও আছে, প্রমাণের অভাবে সালমান খানের সহঅভিনেতাদের বেকসুর খালাসের নির্দেশ দেয় আদালত। কৃষ্ণসার ও চিঙ্কারা হরিণ মারার মামলায় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে একটানা লড়াই চালিয়ে গেছেন বিষ্ণোই টাইগার ফোর্সের সাধারণ সম্পাদক ওমপ্রকাশ বিষ্ণোই। তিনি বলেন, সবাই গাড়িতেই ছিলেন। চিৎকার করে তাকে উৎসাহিত করছিলেন। তারপরও আদালত তাদের ছাড় দেওয়ায় আমরা অবাক।
চিঙ্কারা হরিণ মারার অন্য একটি মামলায় ২০০৬-এ নিম্নআদালত সালমান খানকে দোষী সাব্যস্ত করে পাঁচ বছর কারাবাসের সাজা দেওয়ার পরও এভাবেই মেতে উঠেছিলেন জঙ্গলের সন্তান হিসেবে পরিচিত বিষ্ণোই স¤প্রদায়। ১৭৩০ সালে জঙ্গল বাঁচাতে মারওয়া রাজা অভয় সিংহের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মরণপণ লড়াই করেছিলেন বিষ্ণোইরা। জঙ্গল কেটে সেখানে নতুন প্রাসাদ গড়তে চেয়েছিলেন রাজা। অমৃতা দেবীর নেতৃত্বে বিষ্ণোইরা বাধা দিলে সেনারা তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। তখন ৩৬৩ জন বিশনয় প্রাণ দেন। শেষ পর্যন্ত প্রাসাদ নির্মাণের পরিকল্পনা বাতিলই করতে হয় রাজাকে। এবারেও কোমর বেঁধেছেন বিষ্ণোইরা। তাদের কথায়, সময় লাগলে লাগুক। শেষ দেখে ছাড়বেন। গতকাল যোথপুরের আদালতে তার জামিন হওয়ার পর এ সম্পদ্রায়ের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, জামিন বাতিলের আবেদন জানিয়ে তারা হাইকোর্টে যাবেন। সূত্র : বিবিসি, ইকোনোমিক টাইমস, এনডিটিভি ও আনন্দবাজার অনলাইন।
আলোচনায় শেরা
কথায় আছে, প্রতিটি সফল পুরুষের পেছনে একজন নারীর অবদান থাকে। কিন্তু বলিউড সুপারস্টার সালমান খানের বেলায় বিষয়টি একটু ভিন্ন। কেননা তার পেছনে কোনও নারী নয়, সবসময় থাকেন দেহরক্ষী শেরা। তাকে ছাড়া এককদমও ফেলতে পারেন না সল্লু। শেরাকে না চিনে থাকলে আপনি সালমানের ভক্তই নন! ‘বজরঙ্গি ভাইজান’ তারকার দেহরক্ষী হিসেবে ২০ বছর ধরে কাজ করে আসছেন গুরমিত সিং জলি ওরফে শেরা। সহজভাবে বললে তিনি সালমানের হৃদয়ে ভাই, বন্ধু ও অভিভাবকের মতো জায়গা দখল করে আছেন। এমনকি সালমান ‘বডিগার্ড’ ছবিটিও উৎসর্গ করেছিলেন শেরাকে।
এদিকে শেরাও সবসময় তৎপর থাকেন যাতে ‘ভাই’-এর কাছে কোনও বিপদ ঘেষতেও না পারে। একবার তো কয়েকশ’ ভক্ত সালমানের গাড়ি ঘিরে ধরেছিলো। পরে ভক্তদের ভিড় ঠেলে রাস্তা তৈরি করে দিয়েছিলেন শেরা। এটি করতে গিয়ে গাড়ির সামনে প্রায় আট কিলোমিটার দৌড়াতে হয়েছিলো তাকে।
এখানেই শেষ নয়, সালমান খান যদি কোথাও যাওয়ার পরিকল্পনা করেন তাহলে সেই জায়গায় একদিন আগে গিয়ে প্রতিটি কোণ ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করেন শেরা। বৃহস্পতিবার কৃষ্ণসার হরিণ হত্যা মামলায় সালমানকে ৫ বছরের কারাদন্ড ও ১০ হাজার রুপি অর্থদন্ড দেওয়া হয়েছে। আদালতে উপস্থিত হওয়া থেকে শুরু করে তিনি কারাগারে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তার পাশে ছায়ার মতো ছিলেন শেরা।
সালমান কারাগারে যাওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে যেমন তাকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, ঠিক তেমনটাই হচ্ছে দেহরক্ষী শেরাকে নিয়েও।
সমপ্রতি একটি ঘনিষ্টসূত্র জানান, সালমানকে সুরক্ষিত রাখার জন্য প্রতি বছর ২ কোটি রুপি পান শেরা। জানা গেছে, আগের মতোই প্রতি মাসে ১৬ লাখ রুপি পারিশ্রমিক দেওয়া হবে তাকে। সালমান খানের সঙ্গে শেরা নব্বই দশক থেকেই বলিউড তারকাদের দেহরক্ষী হিসেবে কাজ করে আসছেন শেরা। সালমানের সঙ্গে তার প্রথম আলাপ হয় ১৯৯৫ সালে। একই বছর হলিউড তারকা কিয়ানু রিভস এসেছিলেন ভারতে। তার সম্মানে একটি পার্টির আয়োজন করা হয়েছিলো। সেখানেই সালমানের সঙ্গে কয়েক মিনিট কথা বলার সুযোগ পান শেরা। তখনই বলিউডের এই সুপারস্টারের জন্য কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি। তখন অবশ্য সালমানের দেহরক্ষী ছিলেন অন্য একজন, তাই সুযোগ মেলেনি। পরবর্তী সময়ে চন্ডিগড়ে শো করতে গিয়ে ভক্তদের সমুদ্রে পড়েন সালমান। কিন্তু দেহরক্ষীরা তাকে ওই পরিস্থিতির মধ্য থেকে বের করতে পারেনি। ফলে চাকরি চলে যায় তাদের। পরে শেরাকে নিযুক্ত করার কথা ভাবেন সালমানের ভাই সোহেল খান। তখন থেকেই সালমানের ছায়াসঙ্গী তিনি।
সালমানের ওপর রেগে আসারাম বাপু যা বললেন
কৃষ্ণসার হরিণ হত্যা মামলায় জামিনে মুক্তি পেলেন বলিউড সুপারস্টার সালমান খান। কিন্তু সূত্রের খবর, যোধপুর সেন্ট্রাল জেলের ভিতর আসারাম বাপুর রোষে পড়েছিলেন ‘বাজরঙ্গি ভাইজান’। ভারতীয় এক সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী, সালমান খান বৃহস্পতিবার জেলে পৌঁছানোর পর সিগারেট খেয়েছিলেন। জেলের পোষাকও পরেননি। এমনকি জেলের দেওয়া খাবারও খেতে অস্বীকার করেন তিনি। এর মধ্যে শুক্রবার ৩০ মিনিট ধরে প্রীতি জিনতা ও নিজের বোনেদের সঙ্গে সময় কাটান সালমান। জেলের কর্মীদের ছেলে-মেয়েরাও নাকি সালমানের দর্শন পেয়েছেন।
ধর্ম গুরু আসারাম বাপু সালমানের এমন বিশেষ সুবিধা পাওয়াতেই নাকি ক্ষোভ ব্যক্ত করেছেন। তিনি জেলকর্মীদের বলেছেন, আমার সঙ্গে দেখা করতে তো কেউ আসে না। সালমান সুপারস্টার বলে ওর সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছে সবাই।
তার ওপর সালমান জেলের খাবার খাচ্ছেন না দেখে আসারাম নাকি তার জন্য কাছের এক আশ্রম থেকে আসা খাবারও সালমানকে খাওয়াতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সালমান সেই খাবারও খেতে চাননি। এতে আরও চটেছিলেন আসারাম বাপু।
তবে বৃহস্পতিবার যখন জেলে পৌঁছান, তখন আসারাম বাপুর সাথে দেখা হয় সালমানের। দু’জনে তখন ভালোভাবেই কথা বলেছেন বলে জানিয়েছেন জেল কর্মকর্তারা।
উল্লেখ্য, ধর্ষণের মামলায় অভিযুক্ত হয়ে এখন যোধপুর জেলেই রয়েছেন স্বঘোষিত ধর্মগুরু আসারাম বাপু। ২০১৩ সালে তার আশ্রমে এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ করার অপরাধে তিনি জেল খাটছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন