আজ মুসলিম বিশ্ব নিয়ে চলছে মহা তামাশা। সাম্রাজ্যবাদীদের নগ্ন আগ্রাসনে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হচ্ছে প্রাচীন মুসলিম সভ্যতার দেশ ইরাক, সিরিয়া, মিশর, ফিলিস্তিন, ইয়েমেন। মুসলিম সত্তা নির্মূলে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমারের সুচি বাহিনী। ফিলিস্তিনের নিষ্পাপ শিশুর আর্তনাদ, নিরীহ অসহায় নারীর আহাজারি ও নিরস্ত্র ফিলিস্তিনি যুবকদের রক্তে রঞ্জিত হচ্ছে পুণ্যভূমি জেরুজালেম। মুসলমানদের প্রথম ক্বিবলা বাইতুল মুকাদ্দাস নিয়ে চলছে গভীর ষড়যন্ত্র। মানবতা আজ বিপন্ন, মুসলিম বিশ্ব নির্যাতিত, নিপীড়িত, অত্যাচারিত।
এমন ক্রান্তিকালে মুসলিম বিশ্বের জন্য আবশ্যক কুরআন-সুন্নাহ্র আলোকে জীবন গঠন করা। বাহুবলে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়নি এবং হবেও না। ইসলাম ও মানবতাবিরোধী কাজের মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা যায় না। শান্তিময় বিশ্ব গড়তে হলে নবীজির আদর্শ অনুসরণ-অনুকরণের মাধ্যমেই করতে হবে। আর এর জন্য প্রয়োজন একজন মহান পথপ্রদর্শক। যিনি হবেন আখলাকে মোস্তফাতে রঞ্জিত, যাঁর হৃদয় হুব্বে মোস্তফাতে ভরপুর, যাঁর জবান থাকবে শান্তির বাণীতে সিক্ত। হিজরি চৌদ্দ শতকে ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দের ২ মে, ১৭ রমজান ঐতিহাসিক বদর দিনে তেমনি এক মহামনীষী জন্মলাভ করেছিলেন চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলাতে। তিনি হলেন কাগতিয়া আলীয়া গাউছুল আজম দরবার শরীফের প্রতিষ্ঠাতা, খলিলুল্লাহ, আওলাদে মোস্তফা, খলিফায়ে রাসূল (দঃ) হযরত শায়খ ছৈয়্যদ গাউছুল আজম রাদ্বিয়াল্লাহু আন্হু। ইলম, আমল ও আখলাকে অনন্য এ মহামনীষী মুসলিম যুব সমাজকে ইসলামের শাশ্বত পথে ডাক দেন, হে যুবক! নামাজ পড়, রোজা রাখ, নবী কারিম (দঃ)’র উপর দরুদ পড়, মাতৃভূমি শান্ত কর। তিনি যুবকদের সাংগঠনিকভাবে ইসলামি তাহযিব-তামাদ্দুন শিক্ষা দিতে গঠন করেন আধ্যাত্মিক সংগঠন ‘মুনিরীয়া যুব তবলীগ কমিটি বাংলাদেশ’। এ সংগঠন যেন আল্লাহর নির্দেশ “ওয়াতাসিমু বিহাবলিল্লাহি জামি‘য়া” অর্থাৎ তোমরা আল্লাহর রশিকে আঁকড়ে ধর - এ কুদরাতি বাণীর বাস্তবায়ন ও হিলফুল ফুযুলের প্রতিফলন। যিনি মুসলিম জাতিকে ইসলামী হুকুম-আহকাম তালিম দিতে প্রতিষ্ঠা করেন ‘কাগতিয়া আলীয়া গাউছুল আজম দরবার শরীফ’, রাউজান, চট্টগ্রাম। এ মহামনীষীর ছোহবত গ্রহণ করে তাঁর প্রবর্তিত তরিক্বতের দীক্ষা নিয়ে সৎপথে এসেছে হাজার হাজার মুসলিম জনতা ও যুবক-যুবতি। যিনি নবীজির নূরে বাতিন ও কুরআনের ফয়েজ দিয়ে অনুসারীদের হৃদয় করেছেন আলোকিত। পৃথিবীর যে কোন স্থানে পর্দা সহকারে অবস্থানকারী তাঁর অনুসারী মহিলাদের আপন দরবারে বসে সবক দেওয়ার ক্ষমতা রাখতেন এ মহামনীষী। দেশ, জাতি ও মুসলিম মিল্লাতের কল্যাণে তিনি প্রতিষ্ঠা ও পৃষ্ঠপোষকতা করেন অনেক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। নিজের সহায় সম্বল ব্যয় করে কুরআন-সুন্নাহ্র দিকে মুসলমানদের ধাবিত করতে প্রবর্তন করেন দেশ-বিদেশে ধর্মীয় মাহফিল এবং নবীজির আদর্শের বাস্তবায়নে সংগ্রাম করেছেন আজীবন। তাইতো প্রিয়নবী (দঃ) তাঁকে সত্যস্বপ্নে দান করেছেন গাউছিয়্যতের তাজ এবং অলৌকিকভাবে জাগ্রত অবস্থায় ভূষিত করেছেন ‘খলিফায়ে রাসূল’ এর মত রূহানী পদবিতে। এ মহামনীষীর লক্ষ্য ছিল - মুসলিম জাতি রূহানীশক্তিতে বলীয়ান হয়ে পৃথিবীতে উন্নত বীরের জাতি হিসেবে জীবনযাপন করবে এবং পরকালে আল্লাহর দয়া ও তাঁর হাবিব (দঃ)’র সুপারিশে জান্নাতি হবে। এ মহামনীষী ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের ৪ মে, ১৪৩৭ হিজরির ২৬ রজব, পবিত্র মি‘রাজন্নবী (দঃ)’র বরকতময় সময়ে স্মরণকালের বিস্ময়কর ইতিহাস রচনা করে বিদায় নেন এ পৃথিবী থেকে, আর রেখে যান তাঁর একমাত্র খলিফা কাগতিয়া কামিল এম.এ. মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও কাগতিয়া দরবারের বর্তমান কর্ণধার মোর্শেদে আজম মাদ্দাজিল্লুহুল আলীকে। যিনি দক্ষ হাতে এবং রূহানীশক্তিতে গাউছুল আজমের অর্পিত সকল দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
কালজয়ী এ মহামনীষীর আদর্শকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে আগামি ১৪ এপ্রিল ২০১৮ শনিবার দিন-রাত ব্যাপী কাগতিয়া আলীয়া গাউছুল আজম দরবার শরীফে অনুষ্ঠিত হবে ৬৫তম পবিত্র মি‘রাজন্নবী (দঃ) মাহফিল ও সালানা ওরছে হযরত গাউছুল আজম রাদ্বিয়াল্লাহু আন্হু উপলক্ষে ঈছালে ছাওয়াব মাহফিল। যাকে কেন্দ্র করে নেওয়া হয়েছে কুরআন-সুন্নাহ্ ভিত্তিক বরকতময় অনেক কর্মসূচি। এতে শরীক হওয়ার জন্য মুসলিম মিল্লাতকে দ্বীনি দাওয়াত জানাচ্ছি।
আল্লামা মুহাম্মাদ আশেকুর রাহমান
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন