সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

ঐতিহ্য হারাচ্ছে গ্রিন সিটি ক্লিন সিটি রাজশাহী

ইট-কাঠ-পাথরে

রেজাউল করিম রাজু | প্রকাশের সময় : ২৪ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ইট কাঠ পাথরে ঐতিহ্য হারাতে বসেছে গ্রীন সিটি রাজশাহী। এক সময়ের সবুজ শিক্ষানগরী হিসাবে খ্যাতি থাকলেও নগরায়নের থাবায় ক্ষত বিক্ষত সবুজ সিটি। বড় বড় ভবন বানাতে গিয়ে কেটে ফেলা হচ্ছে আমসহ বিভিন্ন গাছপালা। একটা সময় ছিল প্রায় বাড়িতে আম লিচু কাঠাল জাম ডাবসহ বিভিন্ন গাছ গাছালি দেখা যেত। এখন আর তেমনটি নেই। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস মতিহারের আম্রকাননের মধ্যে স্থাপিত হয় বলে সবুজ ক্যাম্পাস হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে। ছোট বড় আম লিচু গাছ তার কিছুটা স্বাক্ষ্যবহন করছে। পরবর্তী রুয়েটের চত্তরের আম লিচু সুস্বাদের জন্য এখন আম রসিকদের প্রাধান্যের তালিকায় থাকে। সেখানেও এখন ভবনের পর ভবন নির্মাণের ফলে গাছগুলো কর্তন করে ফেলা হয়েছে। বিপরীতে দু’চারটা গাছ লাগানো হলেও যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ হবার নয়। এইতো ক’বছর আগে আম বাগান কেটে বানানো হলো সার্ভে ইন্সটিটিউটের ভবন। নগরীর অভিজাত এলাকা উপশহর পুরোটাই ছিল আম বাগান। এখন সেখানে আমগাছ দেখতে পাওয়াটা সৌভাগ্যের ব্যাপার। আম বাগান সাফ করে গড়ে উঠেছে বড় বড় দালান কোঠার বাগান। নগরীর দক্ষিণে পদ্মা নদী বাদ দিয়ে উত্তর-পশ্চিম-পূর্ব সবদিকে গড়ে উঠছে বিশাল বিশাল ভবন। আর এসব ভবন তৈরীর জন্য জীবন দিতে হচ্ছে গাছ গাছালিকে। মধ্য শহরে ভবন আর ভবন। আগের সরু রাস্তা চওড়া কিংবা সরলীকরণ করার পর রাস্তার দু’ধারে গড়ে উঠছে বিশাল বিশাল ভবন। এসব ভবনে হচ্ছে দোকানপাটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অফিস। এখন আর কেউই তার বাড়ি সংলগ্ন কোন স্থান খালি রাখতে রাজী নন। গাছ পালা না লাগিয়ে ঘর বানিয়ে ভাড়া দিচ্ছেন বা নিজ প্রয়োজনে ব্যবহার করছেন। বিভাগীয় এ নগরীতে হামলে পড়েছে ডেভলাপার প্রতিষ্ঠানগুলো। মহল্লায় মহল্লায় এরা গড়ে তুলছেন বিশাল বিশাল ভবন। স্থানীয়দের পাশপাশি ঢাকা থেকেও আসছেন ফ্লাট ব্যবসায়ীরা। নগরীর উত্তরে বহরমপুর এলাকা ইট ভাটার জন্য এক সময় ছিল পরিত্যাক্ত এলাকা এখন সে অবস্থা আর নেই। রেল লাইন পার হলেই শুধু বাড়ি আর বাড়ি। রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বেশকটি আবাসন প্রকল্প গড়ে তুলেছে। সেগুলো ঘরবাড়িতে পূর্ণ হতে শুরু করেছে। পূর্বের রায়পাড়া আম বাগান এখন বিলুপ্তির পথে। সিটি কর্পোরেশন নতুন রাস্তা নির্মাণ কিংবা চওড়া করার পর রাস্তার দু’ধারে শুরু হচ্ছে স্থাপনা নির্মাণ। বিভাগীয় শিক্ষা নগরী হবার কারণে এখানে রয়েছে বহু সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠান। বিশেষ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এসব অফিস আর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের আবাসনের জন্যও নগরীতে জনসংখ্যা বেড়েছে। এদের আবাসনের জন্য প্রয়োজন পড়ছে ছোট বড় ঘর বাড়ি। তাছাড়া এখানে মেস ছাত্রাবাস ছাত্রীনিবাস করে বাড়ি ভাড়া এখন বেশ লাভজনক ব্যবসা হিসাবে রূপ লাভ করেছে। এক কথায় চারিদিকে নির্মাণের বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে। পরিকল্পিতভাবে নগর গড়ে তোলার জন্য বিষয়টা দেখভালের দায়িত্ব রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন রয়েছে। নগরীতে কোন পাকা স্থাপনা করতে গেলে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষর নিকট হতে নক্সা অনুমোদন ছাড়পত্র নিতে হয়। তাদের অনুমোদনকৃত নক্সা নিয়ে ঘরবাড়ি ভবন নির্মাণ করার বিধান রয়েছে। তা মেনে চলার জন্য হলফ নামাও দিতে হয়। এসব বিধান আরডিএর আবাসিক এলাকা ছাড়া তেমন কোথাও মানা হয়না। অন্যান্য এলাকায় নির্মাণকারীরা শুরুতে নিয়ম অনুযায়ী চারিদিকে তিন চার ফুট করে আশেপাশে কিছু ফাঁকা স্থান ছাড়ার বিষয়টা ঠিক রাখলেও নির্মাণ শেষে তা আর ঠিক রাখেন না। অনেকে প্লানই পাশ করেনা। নিয়ম বহির্ভূতভাবে ঘরবাড়ি বানিজ্যিক ভবন নির্মাণ করার ব্যাপারে আরডিএকর্তৃপক্ষের নিকট কেউ অভিযোগ করলে তারা প্রতিকার হিসাবে দু’একটা নোটিশের মাধ্যমে দায় সারেন। আবার বেশীরভাগ ক্ষেতে রহস্যজনক নিরবতা পালন করেন। ঘরবাড়ি তৈরী করার পরে নীরব হয়ে যান। পুরাতন পাড়া মহল্লায় অসংখ্য ঘরবাড়ি হচ্ছে অনুমোদনহীন ভাবে। যেভাবে যে পারছে ঘরবাড়ি বানাচ্ছে। রাস্তা ড্রেন দখল করা হচ্ছে। কেউ নক্সা অনুমোদনের ধার ধারছেনা। কারো কারো নক্সা অনুমোদন করিয়ে ঘরবাড়ি নির্মাণের ইচ্ছে থাকলেও অনুমোদন করাতে গিয়ে নানা ঝক্কি ঝামেলার কারনে আরডিএ অভিমুখি হয়না। তাছাড়া যখন দেখে নক্সা অনুমোদন ছাড়াই ঘরবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। এখন কে চাইবে ঝক্কি ঝামেলায় পড়তে। যারা ধরতে আসবে তাদের হাতে কিছু ধরিয়ে দিলে ল্যাঠা চুকে যায়। রাস্তার ধারের সামান্য খালি জায়গায় দোকান পাঠ হচ্ছে। শহররক্ষা বাধে উঠছে পাকা ঘরবাড়ি। সব হচ্ছে ফ্রি ষ্টাইলে। যেন দেখার কেউ নেই। জোর যার মুল্লুক তার অবস্থা বিরাজ করছে। বিশেষ করে শহর রক্ষা বাধের উপর ও কোলে পাকা অবৈধ স্থাপনা এমনকি দ্বিতল বাড়ি গড়ে তুলে শহরকে ঝুকির মধ্যে ফেললেও পানি উন্নয়ন বোর্ড রহস্যময় নীরবতা পালন করছে। চোর সব চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে আর আর ভানুর গল্পের মত দেখিনা ব্যাটা কি করে। এমন ভাব নিয়ে বসে আছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তাদের কথা হলো তালিকা করা হয়েছে। শিঘ্রই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে। এমনভাঙ্গা রেকর্ড ক’বছর ধরেই বাজাচ্ছে। মহল্লায় মহল্লায় রাস্তা পর্যন্ত দখল করে ঘরবাড়ি হচ্ছে। ফলে চলাচলের রাস্তা গুলো সংকীর্ন হয়ে পড়েছে। কোথাও অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে পাশাপাশি দু’জন চলতে পারছেনা। এদিকে বড় ছোট প্রায় সব ভবনের সেপটি ট্যাংকের লাইন সংযোগ দেয়া হচ্ছে পানি নিস্কাষনের ড্রেনের সাথে। ফলে পরিবেশ হয়ে উঠেছে দূর্গন্ধময়। সব ডাইরেক্ট হয়ে গেছে। দেখভালকারী প্রতিষ্ঠান সিটি কর্পোরেশন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিষেধের মাধ্যমে তাদের দায়িত্ব শেষ করেছে। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ দিলেও কোন প্রতিকার নেই। বরং অভিযোগ দেবার কারণে রয়েছে হুমকী ধামকি। অধিকাংশ বাড়ির মালিক নগর আইন না মানার কারণে গ্রীন সিটি ক্লিন সিটি রাজশাহী অপরিকল্পিত নগরীতে পরিণত হচ্ছে। সবুজ আর পরিচ্ছন্নতার গৌরব হারিয়ে যাচ্ছে। রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের এ ব্যাপারে তেমন তৎপরতা না থাকায় অপরিকল্পিতভাব গড়ে উঠছে নগরী। এসব ব্যাপারে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ তাদের দক্ষ জনবল সংকটের পাশপাশি জন সচেতনতার কথা বলেন। একজন প্রকৌশলী বলেন, নগরীর নব্বইভাগ মানুষ আইন অমান্য করে বাড়ি তৈরী করছে। দক্ষ জনবল সংকটের কারণে সবকিছু নজরদারী করা যায়না। তাছাড়া রাজনৈতিক প্রভাবেও ব্যবস্থা নেয়া যায়না। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে জনপ্রতিনিধিরা ভোটের রাজনীতির কারণে এসব ব্যাপারে খুব একটা উচ্চ-বাচ্য করেন না। নগর আইন থাকলেও কেউ তা মানতে নারাজ। অবৈধ বস্তী ফুটপাত সরাতে গেলেও বাধা হয়ে দাঁড়ায় ভোটের রাজনীতি। তাই সবকিছু চলছে ফ্রি ষ্টাইলে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন