আজকাল সমস্ত পৃথিবী জুড়েই ডায়াবেটিস রোগের প্রাদুর্ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একটা সমীক্ষাতে ধরা পড়েছে ২০২০ সালের ভিতরে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বাংলাদেশে ১ কোটি ২০ লক্ষে গিয়ে দাঁড়াবে। আমাদের দেশে এখন বিভিন্ন ধরনের বাজে অসুখ ছড়িয়ে গেছে। তারমধ্যে ডায়াবেটিস রোগটা অন্যতম। যারা ডায়াবেটিস রোগে ভুগছেন তারা আরও বিভিন্ন শারীরিক সমস্যাতে আক্রান্ত হতে পারেন। কিডনির রোগ হতে পারে, চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যেতে পারে, ¯œায়বিক সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারেন, দুর্বলতা বেড়ে যেতে পারে, শরীরে ঘা হলে সেটা তাড়াতাড়ি সারবে না, শরীরে রক্ত কমে যায়, যৌনক্ষমতা তথা যৌন উত্তেজনাও কমে যায়, রোগী উত্থানজনিত রোগেও আক্রান্ত হতে পারেন, পায়ে ছোট ছোট গোটার মতো হয়ে রক্ত জমা হতে পারে-এইসব সমস্যা ডায়াবেটিস রোগের প্রভাবে হতে পারে। সেজন্য চিকিৎসকেরা এই রোগের নিয়ন্ত্রণে রাখার উদ্দেশ্যে তেতো খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তেতো খেতে হলে আমাদের বেশিদূর যেতে হবে না। আমাদের চারপাশেই ছড়িয়ে আছে সেসব উপাদান যেখানে থেকে আমরা তেতো পেতে পারি। প্রথমেই উল্লেখ করা যায় করলার কথা। তারপরেই আসছে নিমপাতা, চিরতা, শিউলি ফুল, হেলেঞ্চা শাক, দ্রোণ শাক, তেতো ফুল ইত্যাদি। এই উপাদানগুলো সম্বন্ধে নীচে একটু আলোচনা করে দেখা যাক। * করলা- করলা ডায়াবেটিস রোগীর জন্যে খুব প্রয়োজনীয়। করলা সবজিকে ডায়াবেটিস রোগীর পথ্য হিসাবে ধরা যায়। করলার রস বের করে বা পানিতে ভিজিয়ে নিংড়ে নিয়ে খেলে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। কিন্তু করলা ভাজা করে খেলে উপকার পাওয়া যাবে না। অ্যাসিডিটির সমস্যা যাদের আছে তাদের করলা না খাওয়াই ভালো। বসন্ত কালে করলা খাওয়া খুব ভালা। *চিরতা- চিরতার স্বাদ খুব তিক্ত। শুকনো চিরতা পানিতে ভিজিয়ে খালি পেটে খেলে খুব ভালো হয়। চিরতা পিত্ত-কফ নাশ করে। চিরতা ডায়াবেটিস রোগীর রক্তে শর্করা কমিয়ে রাখে। চিরতা সন্নিপাত জ্বর, ক্রিমির সমস্যা এবং ডায়াবেটিসের জন্যে উত্তম ওষুধ। * নিমপাতা-নিমপাতা খুব উপকারী। সকালে বা বিকালে দুটো নিমপাতা খেলে ডায়াবেটিসের জন্য খুবই ফলদায়ক । নিমপাতা বিভিন্ন রোগের মহৌষধ। চর্মরোগের জন্যেও নিমপাতা খুব ভালো ওষুধ। ছোট একটা-দুটো বেগুনের সঙ্গে চার পাঁচটা নিমপাতা রান্না করে নিয়ে খেলে খুব ভালো হয়। অনেকে তেলে ভেজেও নিমপাতা খেতে পছন্দ করেন। সর্বোপরি নিমপাতা স্বাস্থ্যের জন্যে খুব উপকারী। * হেলাঞ্চা শাক-হেলেঞ্চা একপ্রকার তেতো শাক। হেলেঞ্চা আবার দু’ধরনের হয়। এক প্রকার হেলেঞ্চার পাতায় তিক্ততা কম থাকে। অপরটিতে তিক্ততা বেশি থাকে। তেতো হেলেঞ্চা ডায়াবেটিস, কুষ্ঠ, জ্বর, কাশি, পিত্ত রোগ কমিয়ে দেয়। *শিউলি ফুল- শিউলি ফুলের কোমল পাতা খুব তেতো। শিউলি ফুলের পাতা বেসনের সঙ্গে ভেজে নিয়ে খেতে খুব ভালো। কাঁচা শিউলি ফুল দারকিনা মাছ, পুঁটি মাছ ইত্যাদির সঙ্গে রেঁধে খেলে খুব স্বাদ লাগে। অনেকে শিউলি ফুল ভাতের সঙ্গে মিশিয়ে খায়। শুকনো শিউলি ফুল মাছের সঙ্গে খার দিয়ে রেঁধে খেলেও স্বাদ লাগে। *দ্রোণ শাক ঃ দ্রোণ শাক খুব তিক্ত। দ্রোণ শাকের কোমল পাতা রস করে তার সঙ্গে মুরগির ডিমের কুসুম মিশিয়ে খেলে ব্রংকাইটিস রোগ নিরাময় হয়। *তেতো ফুল ঃ তেতো ফুল মানুষের ঘরের পাশে কিংবা বস্তিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে হয়। তিক্ত ফুল দুই ধরনের আছে। একটা তেতো ফুলের রঙ লাল এবং অপরটি হলুদ। এই ফুলের রঙ লাল এবং অপরটি হলুদ। এই ফুলটিকে এনে রোদে শুকিয়ে খাওয়া যায়। সে যা-ই হোক, একজন ডায়াবেটিস রোগীর পক্ষে সপ্তাহে অন্তত একদিন তেতো খাওয়া জরুরি। বিভিন্ন তিক্ত স্বাদবিশিষ্ট শাকসবজিগুলোর ওষুধি গুণ প্রচুর আছে। সেই শাক সবজি খেলে আমাদের অসুস্থতা কমে এবং স্বাস্থ্য রক্ষা হয়। বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীর রক্তে শর্করার পরিমাণ কমাতে হলে তেতো খাওয়া খুব জরুরি। পুরুষ পেঁপে গাছের ফুল থেকেও তেতো উপাদান পাওয়া যায়। সেই ফুলকে ধুয়ে তারপরে ভেজে শুটকি মাছ দিয়েও খাওয়া যায়। এভাবে তেতো খেতে পারলে শুধু ডায়াবেটিস নয় আরও বিভিন্ন অসুস্থতা থেকে রক্ষা পাওয়া যেতে পারে।
ষ আফতাব চৌধুরী
সাংবাদিক-কলামিস্ট।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন