শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

আনসার সদস্যদের নামে ভাতা তুলে আত্মসাৎ: আনোয়ারায় ডিএপি সার কারখানায় অনিয়ম-দুর্নীতি

জাহেদুল হক, আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) থেকে | প্রকাশের সময় : ২৬ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

চট্টগ্রামের আনোয়ারার ডাই এ্যামোনিয়া ফসফেট (ডিএপি) সার কারখানায় চলছে অনিয়ম ও দুর্নীতির মহোৎসব। বিসিআইসির এ প্রতিষ্ঠানটিতে ছোট-বড় অনিয়ম দুর্নীতির পাশাপাশি পুকুর চুরির মতো ঘটনা ঘটলেও দেখার যেন কেউ নেই। কারখানার দুর্নীতিবাজচক্র প্রতিমাসে অন্তত ১০ আনসার সদস্যের ভূয়া নামে ভাতা উত্তোলন করে তা আত্মসাৎ করছে। এমন জালিয়াতির ঘটনায় কারখানাসহ সর্বত্র তোলপাড় শুরু হয়েছে।
জানা যায়, ডিএপি সার কারখানা এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করার লক্ষ্যে প্রতিদিন পালাক্রমে আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়। নিরাপত্তা শাখার দৈনিক কার্য তালিকা মতে ৫৯ জন আনসার সদস্য এ দায়িত্বে নিয়োজিত থাকলেও অনেকের নামই ভুয়া। তালিকায় থাকা শাহ আলম, নুর মোহাম্মদ, আহসান উল্লাহ, কালাম মিয়া, আবদুল করিম, মাহবুবুর রহমান, জয়নাল আবেদীন, মিজানুর রহমান, আরিফ হোসেন ও নাজমুল হাসান দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্ব পালন করছেন না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আনসার সদস্য শাহ আলম মুঠোফোনে জানান, তিনি গত ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে পারটেক্স গ্রুপে বদলি হয়ে সেখানে কর্মরত আছেন। আরেক সদস্য লক্ষীপুরের আহসান উল্লাহ ডিসেম্বর থেকে অবসরে গেছেন বলে জানা যায়। এভাবে তালিকায় থাকা অনেকে অন্যত্র বদলি আবার কেউ কেউ অবসরে আছেন। তারাও জানেন না এ তালিকায় তাদের নাম রয়েছে। কিন্তু তাদের নামে জাল স্বাক্ষর করে প্রতিমাসেই ভাতা উত্তোলন করে নেয় একটি সংঘবদ্ধ চক্র।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, কারখানায় কর্মরত প্রকৃত আনসার বাহিনীর সদস্য ছাড়াও ভুয়া নামে প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকার বেতন-ভাতা আত্মসাৎ করা হচ্ছে। অন্যত্র বদলি, চাকরিচ্যুত বা অবসরে আছেন এমন সদস্যদের কার্য তালিকায় স্বাক্ষর জাল করে বেতন-ভাতা উত্তোলন, নিয়মিত ভুয়া বিল ভাউচার তৈরি, স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্ব্যবহারসহ ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে কারখানার সহকারী নিরাপত্তা কর্মকর্তা মাসুদুর রহমানের বিরুদ্ধে। আর এ কাজে আনসার বাহিনীর প্লাটুন কমান্ডারসহ (পিসি) কারখানার বিভাগীয় কর্মকর্তারাও জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। এসব জালিয়াতির মাধ্যমে লুটপাটের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
তবে এসব অনিয়মের ব্যাপারে কারখানা কর্তৃপক্ষ অবগত রয়েছে জানিয়ে নিরাপত্তা শাখার প্রধান মাসুদুর রহমান বলেন, বিষয়টি সরাসরি আনসার-ভিডিপি নিয়ন্ত্রণ করে, তারা ভালো জানবেন। আনসার সদস্যের বদলি, ওভার টাইমসহ সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন সার্কেল এ্যাডজুটেন্ট। বিষয়টি আমার দায়িত্বে পড়ে না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, আনসার সদস্যদের ভাতা চেকের মাধ্যমে আনসার-ভিডিপির জেলা অফিসে প্রদান করা হয়। এখানে আমার কোন হাত নেই।
এদিকে বিষয়টি জানতে পেরে এ প্রতিবেদকের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করেন কারখানার মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) নিতাই চন্দ্র রায়। তিনি বারবার জানতে চান এসবে তার জড়িত থাকার কথা কেউ বলেছেন কিনা। এছাড়াও এ সংক্রান্ত বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ না করতে বারবার অনুরোধ করেন তিনি। এ ব্যাপারে ডিএপি সার কারখানার ব্যবস্থপনা পরিচালক (এমডি) মনিরুল ইসলাম ইনকিলাবকে জানান, এ ধরনের যদি কোন অনিয়ম হয়ে থাকে আর এটার সাথে যারাই জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রসঙ্গত: ত্রটিপূর্ণ ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণে অসতর্কতার কারণেই ২০১৬ সালের আগষ্টে এ কারখানার গ্যাস ট্যাঙ্ক বিস্ফোরণের মতো বড় দুর্ঘটনাও ঘটে। দায়িত্বহীনতার পরিচয় না দিলে এমন ঘটনা ঘটত না বলে মন্তব্য করেছিলেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন। এ দুর্ঘটনার কারণে পরিবেশের ক্ষয়ক্ষতি বাদ দিয়ে শুধুমাত্র কারখানাটির ক্ষতি হয়েছে শত কোটি টাকারও বেশি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন