বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার : বছর ঘুরে আবার দোরগোড়ায় হাজির হচ্ছে পহেলা বৈশাখ। প্রতিবারের মতো বাঙালি ব্যস্ত নিজেদের সেরাটা সাজিয়ে নিতে এবং হাজার রঙে সাজাতে প্রিয় বাংলাকে। বাংলা বর্ষবরণের মূল কেন্দ্রস্থল চারুকলায়ও শুরু হয়েছে বর্ষবরণের উৎসব। চলছে পুরোদমে। নানা উৎসাহ-উদ্দীপনা, উচ্ছ¡াস আর আবেগ ও উল্লাসের মধ্যদিয়ে দিনটিকে বরণ করে নেওয়ার জন্য চারুকলার সব শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে শুরু হয়েছে এক উৎসবমুখর যাত্রা।
‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’ রবীন্দ্রনাথের এই গানের সঙ্গে চির নতুনের ডাকে পহেলা বৈশাখ বরণ করতে প্রতিবছর ১৪ এপ্রিল বাঙালিরা মহাধুমধামে বাংলা নববর্ষ পালন করে থাকেন। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, ‘অন্তর মম বিকশিত করো, অন্তরতর হে’-এটিকেই নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪২৩ বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য হিসেবে।
নতুন বছরের প্রথম দিনটিকে ঘিরে উৎসবে মেতে উঠে পুরো বাঙালি জাতি। বিশে^র যেখানেই বাঙালি আছেন, সেখান থেকেই তারা নতুন বছরটিকে নানা আয়োজনের মধ্যদিয়ে বরণ করে নেন।
নানা উৎসাহ, উদ্দীপনা, উচ্ছ¡াস, আবেগ আর উল্লাসে ওইদিন ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সমগ্র বাঙালি জাতি মেতে উঠবে এক আনন্দ উৎসবে। ভোরে জেগে উঠবে নগর-গ্রাম-মফস্বল। বাঙালির এই অসাম্প্রদায়িক উৎসবে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ সব ধর্মের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ বাংলা নববর্ষ বরণে জেগে উঠবে প্রাণের আনন্দে আর আবেগের উচ্ছ¡লতায়।
২৭ বছর আগে শুরু হয়েছিল বৈশাখী শোভাযাত্রা, কয়েকজন উদ্যমী তরুণ আর শিক্ষকের হাত ধরে। সেই শোভাযাত্রাই আজ দেশের আনাচে-কানাচে মানুষের প্রধানতম উৎসবে পরিণত হয়েছে। রমনার বটমূলে ছায়ানটের গানের আসরেই শেষ নয়, সেখানে আরো বড় কিছুই যোগ করেছে চারুকলা অনুষদের এই উদ্যোগ।
চরুকলায় গিয়ে দেখা যায়, নানা সাজ সজ্জার কাজে ব্যস্ত রয়েছে শিক্ষার্থীরা। বাংলার লোকজ প্রতীক হিসেবে বিশাল কোনো কিছুর কাঠামো ছাড়াও মা ও শিশুর প্রতীক, বাহারি নকশার সরা, মাটির পুতুল, পেপার ম্যাশ, কাটিং মাক্স, ওয়াটার কালার, বিভিন্ন রকম কারুপণ্য, তুহিন পাখিসহ নানা মোটিভ তৈরিতে ব্যস্ত চারুকলার শিক্ষার্থীরা।
প্রতিবারই চারুকলার সিনিয়র শিক্ষার্থীরা এ মহাযজ্ঞের আঞ্জাম দিয়ে থাকে। এবারের আয়োজনে রয়েছে চারুকলার ১৭তম ব্যাচ। তাদের সাথে বরাবরই একই উদ্যোমে কাজ করে যাচ্ছেন প্রথম আর দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা।
শুধু বৈশাখ নয়, এই আয়োজনটি একই সাথে চারুকলার নতুন-পুরোনো সবার পুনর্মিলণীও বটে। সবাই ছুটে আসছেন কাজের তালে। অফিস শেষে বাড়ি না ফিরে তাঁদের ঠিকানা হয় চারুকলা। পহেলা বৈশাখের এই শোভাযাত্রা এখন সব মানুষের আগ্রহের মূল কেন্দ্রবিন্দু। পহেলা বৈশাখের মূল প্রস্তুতি পর্ব শুরু গত সপ্তাহ থেকেই শুরু হয়েছে চারুকলায় বিভিন্ন মোটিভ তৈরির কাজ।
অন্য কারো অনুদান নয়, কাজের অর্থের জোগানের ব্যবস্থা করে শিক্ষার্থীরা নিজেই। প্রথম ধাপে তাই বড় বড় কাঠামো নয়, সামনের স্টলে বিক্রি শুরু হয় শিক্ষার্থীদের তৈরি বিভিন্ন কারুকর্ম।
চারুকলায় ঢুকতেই চোখে পড়বে সরার স্টল। ডান পাশে চলছে সরা অঙ্কনের কাজ। এখানে দেখা যায়, সিনিয়রদের আনাগোনাই বেশি। কাজের মান অনুযায়ী ছবিগুলোর দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
স্টলে থাকা চারুকলা শিক্ষার্থী ইয়াছিন জানান, গত সপ্তাহ থেকে আমাদের কাজ শুরু হয়েছে। আমাদের কাজের সার্বক্ষণিক তত্ত¡াবধান করছেন চারুকলার শিক্ষক প্রখ্যাত কার্টুনিস্ট অধ্যাপক শিশির কুমার ভট্টাচার্য। এবার বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে ৮-৯টি মোটিভ প্রদর্শিত হবে। ইতোমধ্যে প্রায় সব ক’টি মোটিভের কাজ শুরু হয়েছে। এবার সামনে থাকবে বিশাল আকৃতির মা ও শিশু।
চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. নিসার হোসেন বলেন, ‘পহেলা বৈশাখে নববর্ষকে বরণ করে নিতে ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়ে গেছে। ১৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা এর কাজ করছে।’ তিনি বলেন, আমরা ঐতিহ্যগতভাবে এ আয়োজনে কোন স্পন্সর নেই না। সে হিসেবে এবারো নেই নি। শিক্ষার্থীদের তৈরি বিভিন্ন মোটিভ বিক্রি করে এ আয়োজনের ব্যবস্থা করা হয়। এবারো তার ব্যতিক্রম হবে না। সে জন্য কোন প্রতিষ্ঠান থেকে কোন ধরণের স্পন্সর নেয়া হচ্ছে না। তবে এ বছর থেকে সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয় আমাদের কিছু অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করবেন।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন