দৈনিক ইনকিলাবের পটিয়া উপজেলা সংবাদদাতা জানিয়েছেন, চট্টগ্রামের পটিয়া পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডে সুচক্রদন্ডী এলাকায় ১০ মাস পূর্বে গণধর্ষণের শিকার বুদ্ধি প্রতিবন্ধী কিশোরী ৮ মার্চ একটি কন্যাসন্তান প্রসব করেছে। বর্তমানে চামেক হাসপাতালের ৩৩ নং ওয়ার্ডে প্রসূতি বিভাগে কিশোরীসহ তার সন্তানটি চিকিৎসাধীন রয়েছে। ঘটনার বিবরণে বলা হয়েছে, বর্বোচিত ঘটনাটি কিশোরির মা জানার পর স্থানীয় কাউন্সিলর রূপক সেনকে অবহিত করেন। প্রথমে সে ঘটনাটির বিচারের কথা বললেও পরে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে। এরপর ধর্ষিতার মা বাদী হয়ে চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালে ৬ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মামলাটি পটিয়া থানায় তদন্তের জন্য দেয়া হলে তদন্তকারী কর্মকর্তা ঘটনার সত্যতা পেয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। আদালত আসামীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারি করেন। বিচার দাবি করে এলাকায় মানববন্ধন, মিছিল, সমাবেশসহ নানা ধরনের কর্মসূচী পালিত হলে স্থানীয় কাউন্সিলর ক্ষুব্ধ হয়ে আক্রান্ত পরিবারটিকে হত্যার হুমকি দেয়। অন্য একটি ইংরেজি দৈনিকের খবরে বলা হয়েছে, বিবাহ পরবর্তী যৌতুকের টাকা না পাওয়ায় এক বেকার যুবক তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে অগ্নিদগ্ধ হয়ে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করায় সে মৃত্যুবরণ করেছে। পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা শিল্পীর সাথে মাত্র সাত মাস আগেই আলী হাসানের বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের সময় সে নিজেকে একজন দর্জী বলে পরিচয় দিলেও কার্যত সে ছিল বেকার। শিল্পীর মা জানিয়েছেন, বিয়ের পর তাকে ৫০ হাজার টাকা যৌতুক হিসেবে দেয়াও হয়েছিল। এরপর গত কদিনে নতুন করে আবার ২ লাখ টাকা দাবি করে যা দেয়ার সামর্থ পরিবারটির নেই। তার মা জানিয়েছেন, প্রতারক স্বামী যৌতুকের টাকা না পেয়ে গায়ে কেরেশিন ঢেলে আত্মহত্যার জন্য ২০ টাকা দিয়ে গিয়েছিল।
একথা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই যে গতকয়েক বছর ধরে সমাজে ধর্ষণ, যৌন হয়রানি উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। নির্যাতকরা অনেকটাই যেন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সারাদেশে এধরনের ন্যাক্করজনক ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে। বাসে, পথেঘাটে কোথাও যেন নারীরা এখন আর নিরাপদ নয়। এমনকি বুদ্ধি প্রতিবন্ধীরাও রেহাই পাচ্ছে না। ধর্ষণসহ সামাজিক ব্যভিচারে নানা ঘটনায় শাসকদলের অনেক নেতা-কর্মীদের সম্পৃক্ততার খবরও ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। বিষয়টি গভীর উদ্বেগের। আলোচ্য ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, বুদ্ধি প্রতিবন্ধী মেয়েটির মা স্থানীয় মুরুব্বির কাছে বিচার চাইতে গেলে উল্টো হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন। মেয়েটি যে ধর্ষিত হয়েছে সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। ইতোমধ্যে তার সন্তানও ভূমিষ্ট হয়েছে। সুতরাং কেবা কারা এধরনের অপকর্মের সাথে যুক্ত তা প্রমাণে কার্যত কোন সমস্যা নেই। যাদেরকে আসামি করা হয়েছে এবং যাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে তারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। আমাদের সংবাদদাতা জানিয়েছেন, এদের গ্রেপ্তারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোন উদ্যোগই নেই। বিশেষ মহল আসামিদের বাঁচাবার তদবিরে রয়েছে। সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে তাহলে মামলা করেই কি লাভ হলো? আর এই প্রতিবন্ধীরইবা কি হবে? আলোচ্য অন্য ঘটনাটিও মর্মন্তুদ। প্রতারণার মাধ্যমে বিয়ে করে সামাজিক অভিশাপ যৌতুকের জন্য চাপ দেয়া এবং তা না পেয়ে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করার মধ্য দিয়ে একইসাথে দু’টি অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। প্রথমত: যৌতুক দাবি করা, দ্বিতীয়ত: আত্মহত্যায় প্ররোচিত করা। নীতি-নৈতিকতা ও ধর্মীয় উভয়দিক থেকেই আলোচ্য ঘটনা দু’টি গর্হিত অপরাধের পর্যায়ভুক্ত।
ঘটমান এ ধরনের অসংখ্য ঘটনার মধ্যে আলোচ্য ঘটনা দুটি প্রমাণ করে সমাজে মূল্যবোধের অবক্ষয় কত বড় আকার ধারণ করেছে। সমাজ যেন ভেতরে ভেতরে ক্ষয়ে যাচ্ছে। নৈতিক মূল্যবোধ নিঃশেষ হতে চলেছে। এর মাশুল দিচ্ছে সমাজের অসহায় শ্রেণী। অনভিপ্রেত ও অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা বৃদ্ধি কোনোভাবেই চলতে দেয়া যায় না। এসব ঘটনা থেকে জাতিকে মুক্তি পেতে হলে অপরাধীদের সাজার ব্যাপারে কঠোর হওয়া প্রয়োজন। এধরনের ঘটনার সাথে সম্পৃক্তদের কেবলমাত্র আইনগত সাজাই নয় তাদের স্থাবর-অস্থারব সম্পত্তি ক্রোক করে আদালতের মাধ্যমে আক্রান্তদের মধ্যে বণ্টন করা জরুরি। যৌতুকের মত সামাজিক অপরাধরোধে আইনগত ব্যবস্থার পাশাপাশি ধর্মীয় অনুশাসনের প্রবর্তন ও মূল্যবোধের চর্চার বিকল্প নেই। তা নাহলে নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ঠেকানো যাবে না। এসব ক্ষেত্রে রাষ্ট্রকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। অপরাধীকে কঠোর সাজা প্রদানের পাশাপাশি সচেতনতা সৃষ্টিতেও বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন