চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনায় প্রায় দেড়কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ৫ তলা ভবন নির্মাণে রডের পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহারের খবর প্রকাশিত হওয়ার পর এবার জানা গেছে ঐ ভবনে সিমেন্টে মাটি মেশান হয়েছে। অন্যদিকে গাইবান্ধা সদর উপজেলার মেঘডুমুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শৌচাগার নির্মাণেও লোহার রডের পরিবর্তে চিকন বাঁশ ও স্কুলের বেঞ্চের পুরাতন ফ্রেমের রড ব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সহযোগী দৈনিকের খবরে আরো বলা হয়েছে, গাইবান্ধার ২৭৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নির্মিত ওয়াশ ব্লক নির্মাণেও এধরনের অভিযোগ উঠেছে এবং সে বিষয়গুলো খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি উঠেছে। এদিকে গত রোববার আরেকটি দৈনিকের খবরে বলা হয়েছিল মেয়াদোত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডারের প্রতিটি গাড়ীই একটি বোমা। এর পরদিনই চট্টগ্রামে সিএনজি ফিলিং স্টেশনে গ্যাস নেয়ার সময় সিলিন্ডার বিস্ফোরণে দুটি প্রাইভেট কার ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। বিস্ফোরণে উড়ে গেছে স্টেশনটির ছাদও মূল্যবান সরঞ্জাম। ফাটল দেখা দিয়েছে পাশের দুটি ভবনের দেয়ালে। ঘটনায় তিনজন আহত হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিস্ফোরণে ক্ষতির পরিমাণ অর্ধকোটি টাকার বেশি হবে।
চুয়াডাঙ্গার দর্শনার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রকল্পের আলোচিত ভবনের প্রসঙ্গ আন্তর্জাতিক মাধ্যমেও উঠে এসেছে। রডের পরিবর্তে বাঁশের ব্যবহার তদন্তে যে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছিল তারা নাকি ঘটনাস্থলে গিয়ে কোন বাঁশ খুঁজে পাননি। তবে তা পুননির্মাণের কথা বলা হয়েছে। এখন সেই ভবন নিয়ে প্রকাশিত নতুন খবরে বলা হয়েছে, ভবনটিতে সিমেন্টের সাথে মাটি ও খোয়ার সঙ্গে রাবিশ মেশানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, অত্যন্ত নিম্নমানের ইট ও বালু দিয়ে কাজ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা পরিষদ প্রশাসক। আলোচ্য এই ভবনটির ঠিকাদার ঢাকার এক আওয়ামী লীগ নেতা। যে ধরনের অভিযোগ এক্ষেত্রে উঠেছে এটি কার্যত নতুন কিছু নয় এবং এটিই একমাত্র তা মনে করার কোন কারণ নেই। এ ধরনের ঘটনা হয়তো আরও ঘটেছে। এর অগেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরকারী বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষা ভবন নির্মাণে রডের পরিবর্তে শেওলা ব্যবহারের সচিত্র খবরও প্রকাশিত হয়েছে। ২০১২ সালে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লোহার রডের পরিবর্তে বাঁশের কঞ্চি এবং নিম্নমানের ইট ও সঠিক পরিমাণের সিমেন্ট ব্যবহার না করার প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। ২০১১ সালেও আইলঝাড়ায় নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ও রডের পরিবর্তে বাঁশ দিয়ে কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণের খবর প্রকাশিত হয়েছে। খোদ রাজধানীতে নির্মাণে রডের পরিবর্তে পাইপের ব্যবহারের কারণে ফ্লাইওভার ভেঙ্গে পড়ে মানুষের মৃত্যু হওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। দেখা গেছে, ঘটনা ঘটলেই কেবল সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তৎপর হয়ে উঠে। অথচ প্রতিটি নির্মাণ শুরু থেকে যথাযথ তদারকির নির্দেশনা রয়েছে। এজন্য দায়িত্বপ্রাপ্তরাও রয়েছেন। সঙ্গত ও বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে, তাহলে কেন এমন হচ্ছে? এর একটাই জবাবÑ একদিকে ক্ষমতার প্রভাব অন্যদিকে অবৈধ অর্থের বিলিবণ্টন। গ্যাস সিলিন্ডারে বিস্ফোরণের ঘটনাও নতুন কিছু নয়। এনিয়ে ইতোপূর্বেও বহুবার লেখা হয়েছে। কেন কাজের কাজ কিছুই হয় না। নির্দিষ্ট সময়ের পর প্রতিটি গ্যাস সিলিন্ডার পরীক্ষা করার বিধান রয়েছে। অনেক পাম্পে প্রয়োজনীয় সতর্কবাণী লেখাও রয়েছে। এসব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা কেউই যথাযথভাবে আমলে নিচ্ছে না। গাড়ীর ফিটনেস পরীক্ষার সময়ে এব্যাপারে তদারকির ব্যবস্থা থাকলে হয়ত দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব হতো। সেটাই ভাবনার মূল বিষয়।
ইতোপূর্বে বিদ্যালয় বা এধরনের অনেক নির্মাণাধীন প্রতিষ্ঠানের ছাদ ধসে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। আলোচ্য ক্ষেত্রগুলো পর্যালোচনা করলেও বলা যায়, রডের পরিবর্তে বাঁশ, সিমেন্টর পরিবর্তে মাটি দিয়ে ভবন নির্মাণ আর খেলা ঘর নির্মাণে কোন পার্থক্য নেই। নির্মাণের কদিন পরেই হয়ত এসব ভবন ধসে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। এধরনের অসংখ্য ঘটনাই হয়ত রয়েছে যেসব ক্ষেত্রে কেবলমাত্র যথাযথ তদারকির অভাবে মানুষের জীবন মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। একইভাবে অপরীক্ষিত গ্যাস সিলিন্ডারের কারণে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় প্রাণহানির আশঙ্কা উদ্বেগ সৃষ্টি না করে পারে না। এ ধরনের অচেতনতা ও উদাসীনতা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলকে সচেতন হতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন