সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

দারিদ্র্য বিমোচনে বায়তুলমাল

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান | প্রকাশের সময় : ১৫ জুন, ২০১৮, ১২:০০ এএম

চার
যা সমাজের সকল ব্যক্তিকে একই লক্ষ্যে সম্পৃক্ত করে। অতঃপর এক লক্ষ্যের অভিসারী হওয়ার কারণে তাদের আকীদা-বিশ্বাস, ধ্যান-ধারণা, আবেগ-অনুভূতি এবং শুরু ও শেষের এক গভীর ঐক্য সৃষ্টি হয়। এ জন্য ইসলাম সমাজকে একটি শরীর হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। ইসলামী রাষ্ট্রের যিনি প্রধান তিনি হলেন শরীররূপী সমাজের মাথা। শরীরের প্রত্যেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ন্যায় এরা পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত। একে অপরের সাহায্যকারী, সাহায্যের হকদার।
দারিদ্র্য ও অভাব সমস্যা সমাধানে উদাহরণ স্বরূপ অনেক পন্থার মধ্যে শুধু একটি পন্থার কথা উল্লেখ করা যায়, যেটা ‘উমর রা. অবলম্বন করেছিলেন। তিনি মদিনার নিকটবর্তী ‘রাবযাহ’ নামক এক খন্ড জমি সরকারি মালিকানায় আনলেন, যাতে মুসলিমদের গবাদি পশু চরতে পারে। কিন্তু তিনি সরকারি মালিকানায় আনাই যথেষ্ট মনে করলেন না। বরং তিনি দরিদ্র অসহায়দের এবং কম আয়ের মুসলিমদের অধিকারকে অগ্রাধিকার দিলেন। যাতে তারা বিনা ব্যয়ে চারণভূমিকে নিজেদের গবাদি সম্পদ ও আয় বৃদ্ধির মাধ্যম বানিয়ে নিতে পারেন এবং সরকারের কাছে কোন ধরনের সাহায্য সহযোগিতা না চান। এ উদ্দেশ্যে তিনি চারণভূমিটির তত্তাবধায়ক হুনাই-এর প্রতি নির্দেশ দিয়ে বলেছিলেন, হে হুনাই, মানুষের সাথে নরম ব্যবহার এবং মযলুমের দুআকে ভয় কর। কেননা, তাদের দুআ কবুল করা হয়। কম উট এবং কম বকরীর মালিকদেরকে চারণভূমিতে প্রবেশের অনুমতি দেবে। ইব্ন ‘আফফান ও ইব্ন ‘আওয়াফের গবাদিপশু ধ্বংস হয়ে গেলে তারা নিজেদের অন্য ক্ষেত এবং খেজুরের বাগানের দিকে ফিরিয়ে নেবে। অর্থাৎ তাদের নিকট অন্য সম্পদ এবং জীবিকার অন্যান্য মাধ্যম রয়েছে। আর এ সব মিসকিনের (কম উট এবং বকরীর মালিক) গবাদি পশু ধ্বংস হয়ে গেলে নিজের সন্তান-সন্তুতি নিয়ে আমার কাছে এসে চিৎকার দিয়ে বলবে, “হে আমীরুল মু’মিনীন। আমি কি সন্তানদেরকে পরিত্যাগ করব? আমি কি তাদের বাবা নই? তাদের ধন সম্পদ সরবরাহ করার চেয়ে তাদের পশুর ঘাস সরবরাহ করা আমার পক্ষে সহজ”। ‘উমরের রা. উল্লিখিত নির্দেশে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা রয়েছে। এ নির্দেশে তিনটি বিষয় পাওয়া যায়।
প্রথমত: মুসলিম সরকারের জন্য আবশ্যক যে, সকল কম সম্পদ ও কম আয়ের নাগরিকদের প্রতি বিশেষভাবে খেয়াল রাখবে এবং তাদের জন্য এমন সুযোগ সৃষ্টি করবে, যাতে তারা কাজ করে রোজগার করে এবং স্বাবলম্বী হয়ে যেতে পারে। এ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য যদি ধনী ও বিত্তশালীদের উন্নয়নের প্রশ্নটি খাটোও করতে হয় এবং তাদের সম্পদ লাভের ও আয়ের কিছু কিছু মাধ্যম থেকে বঞ্চিতও করতে হয় এবং তাদের আয় বৃদ্ধি ও উন্নয়ন বিঘœত হয়, তাহলে তাই করতে হবে।
দ্বিতীয়ত: ইসলামী রাষ্ট্রে বসবাসকারী প্রত্যেক ব্যক্তির এ অধিকার রয়েছে যে, যদি তার আয়ের মাধ্যম ধ্বংস হয়ে যায় এবং রুটি রুজির কোন মাধ্যম না থাকে, তাহলে সে তৎকালীন শাসকের সামনে হাজির হয়ে নিজের ও নিজের সন্তানদের জন্য চিৎকার দিতে পারবে। ইসলামী রাষ্ট্রের সাধারণ কোষাগার থেকে সাহায্য প্রদানের দাবিও সে করতে পারবে। শাসক অথবা সরকারের তার দাবি পূরণ এবং তার ও তার পরিবারের প্রয়োজন পূরণ ছাড়া কোন গত্যন্তর নেই।
তৃতীয়ত: এখান থেকে বাস্তবসম্মত হিকমত লাভ করা যায়। সে হিকমত হল, অসহায় দরিদ্রদের মধ্যে যারা কাজ করার ক্ষমতা রাখে, তাদেরকে কোন কাজের বন্দোবস্ত করে দিতে হবে। কম আয়ের মুসলিমের আয়ের মাধ্যমের উন্নয়ন ঘটাতে হবে। যাতে দরিদ্র ও কম আয়ের মানুষ নিজের প্রচেষ্টায় এবং শ্রমের কারণে সরকারি সাহায্য-সহযোগিতার মুখাপেক্ষী না থাকে ও বায়তুলমালের ওপর বোঝা হয়ে না যায়। এ কথা ’উমর রা. এর সেই বক্তব্য থেকে স্পষ্ট হয় যে, “ধন সম্পদের চেয়ে ঘাস সরবরাহ করা আমার পক্ষে সহজ”।
ইসলামে খলীফার দায়িত্ব শুধু এতেই সীমাবদ্ধ নয় যে, ধনসম্পদ, মানুষের অধিকার ও রাষ্ট্রের স্বাধীনতাকে অভ্যন্তরীণ এবং বাইরের হামলা থেকে হিফাযত করবে; বরং তার দায়িত্বের পরিধি আরো ব্যাপক ও বিস্তৃত। বস্তুত ইসলামে খলীফা বা রাষ্ট্রপ্রধান হলেন পরিবারের পিতা বা অভিভাবকের ন্যায়।

রাসূলুল্লাহ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ উদ্দেশ্যে হযরত আমর ইবনুল আস রা. কে মনোনীত করেন। তার দাদী ছিলেন বালা গোত্রের মহিলা। মুতার যুদ্ধের পর অষ্টম হিজরীর জমাদিউস সানিতে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আমর ইবনুল আস রা. কে প্রেরণ করেন। বলা হয়ে থাকে যে, গুপ্তচরদের মাধ্যমে খবর পাওয়া গেছে যে, বনু কাজাআ গোত্র হামলা করতে মদীনার উপকণ্ঠে বহু সৈন্য প্রস্তুত করেছে। এসব কারণে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমর ইবনুল আস রা. কে প্রেরণ করেন।

আর রাহীতুল মাখতুম, মূল : আল্লামা সফিউর রহমান মোবারকপুরী, অনুবাদ: খাদিজা আখতার রেজায়ী

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন