শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আন্তর্জাতিক সংবাদ

বঙ্গোপসাগর উপকূলে বিপজ্জনক রাসায়নিক বহনকারী জাহাজে আগুন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৭ জুন, ২০১৮, ১২:২৯ পিএম | আপডেট : ২:০৯ পিএম, ১৭ জুন, ২০১৮

বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের উপকূলের দিকে ভেসে আসা একটি জ্বলন্ত রাসায়নিকবাহী জাহাজকে আটকে দিয়েছে ভারতের নৌবাহিনী।
ভারতীয় নৌবাহিনীর কম্যান্ডোরা আকাশপথে দুই দিন ধরে জ্বলতে থাকা জাহাজটির ওপর রশি বেয়ে নেমে আসে এবং জাহাজটিকে নোঙর করাতে সমর্থ হয়।
ভারতের নৌবাহিনী জানিয়েছে, এমভি কলকাতা নামের জাহাজটি বেশ দ্রুত সুন্দরবন হয়ে বাংলাদেশের দিকে ভেসে যাচ্ছিল।
নোঙর করতে পারার ফলে সেটিকে ভারত-বাংলাদেশ সমুদ্র-সীমার ২২ নটিক্যাল মাইল দূরে ধরে রাখা সম্ভব হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত ভারতীয় নৌবাহিনীর কমোডোর সুপ্রভ কুমার দে বলেন, এখন আর জাহাজটি সমুদ্র-সীমা বা সুন্দরবনের কোর এরিয়ার দিকে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে আমরা চেয়েছিলাম যদি ইঞ্জিন কোনোভাবে চালু করে গভীর সমুদ্রের দিকে নিয়ে যাওয়া যায়। কিন্তু যখন নৌ-কমান্ডো আর জাহাজটির একজন অফিসার ইঞ্জিন চালু করার চেষ্টা করেন, তখন আবারো বিস্ফোরণ হয়। আগুন ছড়াতে থাকে। সবাই অপারেশন বন্ধ করে দিয়ে চলে আসতে বাধ্য হয়।
কৃষ্ণাপতনম থেকে রাসায়নিক নিয়ে জাহাজটি কলকাতা বন্দরের দিকে যাছিল। বন্দরে পৌঁছানোর আগে সমুদ্রের যে জায়গায় জাহাজগুলি নোঙর করে থাকে, সেই স্যান্ডহেডে নোঙর করে থাকা অবস্থাতেই ১৪ জুন মাঝরাতে জাহাজটিতে আগুন লাগে।
ভারতীয় কোস্ট-গার্ড জানিয়েছে, এমভি কলকাতা থেকে তারা কোনো বিপদসংকেত পায়নি। পাশ দিয়ে যাওয়া অন্য জাহাজ কোস্টগার্ডকে প্রথমে সতর্ক করে। পরের দিন প্রায় আট ঘণ্টার চেষ্টায় হেলিকপ্টার আর উদ্ধারকারী জাহাজ নিয়ে গিয়ে ২২ জন অফিসার ও নাবিকদের সবাইকেই উদ্ধার করা হয়।
কমোডোর সুপ্রভ কুমার দে জানান, ওই অঞ্চলে বেশ জোরে হাওয়া বইছে। তাতেই জ্বলন্ত জাহাজটি সুন্দরবনের কোর এরিয়া আর বাংলাদেশের দিকে ভেসে যাচ্ছিল। শুক্রবার বিকালে জাহাজ কোম্পানি, ভারত সরকারের বাণিজ্যতরী বিভাগ, কোস্টগার্ড আর কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমরা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে শনিবার সকালে মার্কোজদের নামিয়ে নোঙর করাটাই হবে আমাদের প্রাথমিক টার্গেট। তারপরে চেষ্টা করা হবে জাহাজটিকে যদি গভীর সমুদ্রের দিকে টেনে নিয়ে যাওয়া যায়।
তিনি বলেন, পরিকল্পনা মতো সী-কিং ৪২-সি আর একটা ডর্নিয়ার হেলিকপ্টার রওনা হয় কলাইকুন্ডা এয়ার বেস থেকে। জাহাজের অফিসারদেরও নিয়ে গিয়েছিলাম, কারণ তারাই সবথেকে ভাল চেনেন জাহাজটা। আইএনএস কদমৎ নামের একটি জাহাজকেও ডেকে আনা হয়েছিল।
মার্কোজ নামে পরিচিত নৌবাহিনীর কম্যান্ডোরা জ্বলন্ত জাহাজ থেকে এ ধরনের উদ্ধার অভিযানের জন্য বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত। আরব সাগরে মাঝে মাঝেই পণ্যবাহী জাহাজে আগুন লাগলে এই মার্কোজদেরই পাঠানো হয়।
শনিবার সকালে হেলিকপ্টার থেকে দড়ি বেঁধে জাহাজে নামিয়ে দেয়া হয় কম্যান্ডোদের। নোঙর করার পরে জ্বলন্ত জাহাজের ইঞ্জিন চালু করার সময়ে আবারও বিস্ফোরণ হয়। কম্যান্ডোরা রশি বেয়ে হেলিকপ্টারে উঠে আসতে বাধ্য হন।
তবে কমোডোর সুপ্রভ কুমার দে বলেন, জাহাজটা আরও দূরে সরিয়ে নিয়ে যেতে পারলে ভাল হতো। কিন্তু এটাই সুখবর যে ভেসে যাওয়া থেকে আটকানো গেছে। আর কম্যান্ডোরা খতিয়ে দেখেও এসেছেন যে তেলের ট্যাঙ্ক লিক হয়নি। তাই সমুদ্রে তেল ছড়িয়ে পড়ে দূষণ ছড়ানোর সম্ভাবনা নেই। বিপজ্জনক রাসায়নিক রয়েছে যে কন্টেইনারগুলোতে সেখান থেকেও রাসায়নিক এখনও সমুদ্রে ছড়ায়নি।
তবে সমুদ্রে তেল বা রাসায়নিক ছড়িয়ে পড়ছে কী না, তার ওপর নজর রাখার জন্য কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ ভারতীয় রিমোট সেন্সিং সেন্টারকে জানিয়েছে।
জাহাজ মালিকরা সিঙ্গাপুর থেকে বেসরকারি একটি সংস্থা থেকে উদ্ধারকারী দল নিয়ে এসেছেন। তারা জাহাজে আগুন লেগে গেলে সেটিকে ধ্বংস হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করায় বিশেষজ্ঞ। আগুন সম্পূর্ণভাবে নিভিয়ে জাহাজে উঠে সেটিকে আবারও চালু করে থাকে সিঙ্গাপুরের ওই উদ্ধারকারীরা।
তারাই এবার ‘স্যালভেজ অপারেশন’ চালাবে বলে জানিয়েছে ভারতীয় নৌবাহিনী। সূত্র : বিবিসি

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
জামান ১৭ জুন, ২০১৮, ১:৩২ পিএম says : 1
এই ঘটনাটি নিয়ে আন্তর্জাতিক তদন্ত হওয়া দরকার
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন