এক ধরণের পিচ্ছিল চর্বি জাতীয় জিনিস যা নতুন কোষ তৈরি করে ও অন্যান্য কাজে আমরা কলেস্টেরল বলে জানি। যদি কেউ উচ্চ কলেস্টরলযুক্ত খাবার বা বেশি মাত্রায় স্যাচুরেটেড ফ্যাট-যুক্ত খাবার খায়, কিংবা তার শরীরে কলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকবে। কলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকলে ধমনী বা রক্তবাহী নালীগুলো শক্ত হয়ে যায়। এটি ঘটে যখন চর্বি (কলেস্টেরল) এবং ক্যালসিয়াম ধমনীর ভেতরে জমতে শুরু করে। জমতে জমতে তারা ধমনীর মধ্য দিয়ে রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি শুরু করে অন্তিম ক্ষেত্রে চলাচল রুদ্ধ করে দেয়। এর ফলে করোনারি আর্টারি রোগে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে।
দেহে কোলেস্টেরল আসে দুটি জায়গা থেকে: আমাদের খাবার থেকে আর দেহের যকৃত যা সৃষ্টি করে তার থেকে দেহের জন্য প্রয়োজনীয় প্রায় আশি ভাগ কলেস্টেরলই যকৃত সৃষ্টি করতে পারে।
রক্ত পরীক্ষা করে কলেস্টেরলের পরিমাণ মাপা যায়। সেখান থেকে বোঝা যায় কলেস্টেলের পরিমাণ মাত্রারিক্ত কিনা। কলেস্টেরল মাপা হয় প্রতি ডেসিলিটারে কত মিলিগ্রাম আছে এই হিসেবে (সম/ফষ)। অনেক সময় প্রতি লিটারে কত মিলিমোল আছে (সসড়/ষ) সেই হিসেবেও মাপা হয়।
কলেস্টেরল রক্তের মধ্যে বাহিত হয় প্রোটিনের সঙ্গে যুক্ত অবস্থায় এই সংযুক্ত কলেস্টেরল প্রোটিনকে বলা হয় লিপোপ্রোটিন। লিপ্রোপোটিনকে তিনভাগে ভাগ করা হয়: বেশি ঘনত্বের (ঐরময ফবহংরঃু), কম ঘনত্বের (খড়ি ফবহংরঃু) বা খুব কম ঘনত্বেও (াবৎু ষড়ি ফবহংরঃু)।
লিপ্রোপোটিন কোনও শ্রেণিতে পড়বে তা নির্ভর করে প্রোটিনের তুলনায় চর্বি কতটা। যদি প্রোটিনের তুলনায় চর্বির পরিমাণ বেশি থাকে তা হলে তাকে ষড়ি ফবহংরঃু (খউখ) কলেস্টেরল বলা হয়। খউখ হল ‘খারাপ’ কলেস্টেরল, কারণ এইট রক্তবাহী ধমনীর দেয়ালে জমে নালী পথ রুদ্ধ করে দিতে পারে। খউখ এর পরিমাণ কমাতে পারলে হার্ট অ্যাটাক, ষ্ট্রোক ইত্যাদির সম্ভাবনা কমানো যায়।
ঐরময ফবহংরঃু ষরঢ়ড়ঢ়ৎড়ঃবরহ পযড়ষবংঃবৎড়ষ (ঐখউ) কে অনেক সময় ‘ভাল’ কলেস্টেরল, কারণ এটি রক্তবাহী নালীতে কলেস্টেরল না জমতে সাহায্য করে। এতে ফ্যাটের তুলনায় প্রোটিন বেশি থাকে। ঐখউ কলেস্টেরল পরিমাণ বেশি থাকাটা যাদের হার্টের রোগী বা যাদের হাার্টের অসুখের সম্ভাবনা আছে তাদের জন্য ভাল।
ট্রাইগিøসারাইড হল আরেক ধরণের চর্বি জাতীয় পদার্থ যেটি খুব কম ঘনত্বের লাইপোপ্রোটিনের মাধ্যমে রক্তে প্রবাহিত হয়। রক্তে খুব অল্প পরিমানেই ট্রাইগিøসারাইড থকে, বেশির ভাগই জমা থাকে টিস্যুর মধ্যে। খউখ যখন বেশি আছে, তখন ট্রাইগিøসারাইডও বেশি থাকলে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
নানা কারণে কলেস্টেরল বেশি হতে পারে; কিছু কারণ নিয়ন্ত্রণযোগ্য, কতগুলো নয়। যেগুলো নিয়ন্ত্রণ করা যায়, সেগুলো হল: অতিরিক্ত ওজন, ধূমপান, এক্সারসাইজের অভাব, বেশি কলেস্টেরল ও স্যাচুরেটেড ফ্যাট যুক্ত খাবার। এগুলো বাজে কলেস্টেরল (খউখ) ও ট্রাইগিøসারাইডকে বাড়ায়, ঐখউ-কমায়।
যেগুলো নিয়ন্ত্রাধীন নয়, তার মধ্যে একটি হল জন্মগত সমস্যা, ‘লিপিড ডিসর্ডার’। এছাড়া বয়স, পুরুষ না স্ত্রীÑএগুলোরও কলেস্টেরলের উপর প্রভাব আছে। যেমন, ২০ বছরের পর দেহে কলেস্টেরলের মাত্রা নারীদের বেশি থাকে; কিন্তু ৫০ বা তার কাছাকাছি বয়স থেকে নারীদের কলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়। বয়ঃসন্ধির পর নারীদের ভাল কলেস্টেরলের মাত্রা পুরুষের থেকে সাধারণত বেশি থাকে, ইত্যাদি। এছাড়া কলেস্টেরলের উপর ওষুধেরও কিছু প্রভাব আছে।
রক্ত পরীক্ষা করে কলেস্টেরলের মাত্রা নিরুপণ করা যায়। যদি কলেস্টেরলের পরিমাণ অত্যাধিক হয়, তা হলে ডাক্তাররা জীবনযাত্রার পরিবর্তন করার (যেমন, কম চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম করা, ধূমপান কমানো বা অন্ধ করা) নির্দেশ দেন। শুধু জীবনযাত্রার পরিবর্তন কলেস্টেরল না কমাতে পারলে ডাক্তাররা ওষুধ ব্যবহার করেন।
ষ আফতাব চৌধুরী
সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন