শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

চিকিৎসাক্ষেত্রে লাগাম টানার উদ্যোগ

ইফতেখার আহমেদ টিপু | প্রকাশের সময় : ২২ জুন, ২০১৮, ১০:৪৪ পিএম

সরকারি চিকিৎসকদের সিংহভাগ সরকারি হাসপাতালের বদলে বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে ব্যস্ত থাকে, এটি ওপেন সিক্রেট। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকের চাকরিটি তারা বজায় রাখে দুটি কারণে। প্রথমত এ চাকরির মাহাত্ম্য অনেক, যা ব্যবহার করে প্রাইভেট প্র্যাকটিস কিংবা বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে দুই হাতে টাকা উপার্জন করা যায়। দ্বিতীয়ত সরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকের ডিউটি মূলত হাজিরার মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
গোটা দেশের সরকারি হাসপাতালের সামনে ও আশপাশে গজিয়ে ওঠা হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো মহাঅরাজকতার আশ্রয়স্থল। সরকারি হাসপাতাল থেকে তাদের নিয়োজিত দালালদের মাধ্যমে রোগী ভাগিয়ে নিয়ে আসার ট্র্যাডিশন চলছে সমানে। কে দেবে তাদের বাধা, কে করবে রোগীকে উদ্ধার? চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে ব্যবসা, জালিয়াতি, প্রতারণা সবই চলছে। ভেতর থেকে দেখলে স্পষ্ট হবে কী ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে চিকিৎসা ক্ষেত্রে।
সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের নিয়ে বাণিজ্য করে অধিকাংশ ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক এবং দালালরা কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে। দালালচক্রগুলোর সহযোগী হিসেবে কাজ করে সরকারি হাসপাতালের কতিপয় নার্স ও কর্মচারী। ক’দিন আগে এক হাসপাতালে আইসিইউতে একটি শিশু মারা যাওয়ার পরও তিনদিন তাকে সেখানে রেখে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হয়। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে এবং ভর্তি থেকে শুরু করে রোগী রিলিজের দিন পর্যন্ত একাধিক বিষয়ের ওপর বিল তৈরি করা হয়। কেউ যদি বিল পরিশোধে অপরাগ হয় তবে রোগীকে আটকে রাখা হয়। লাশ আটকে রাখার ঘটনাও কম নয়।
আবার অনেক চিকিৎসক এসব দালালের সামনে অসহায় বোধ করে। সরকারি হাসপাতালে রোগী হিসেবে চিকিৎসা নিতে যান যারা তারা সাধারণত স্বল্প আয়ের মানুষ। তাদের সঙ্গে যখন প্রতারণা করা হয় তখন তা চরম অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। অথচ এই অপরাধের কোন প্রতিকার হয় না। মাঝে-মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালিয়ে কাউকে কাউকে গ্রেফতার করে বটে, তবে তারা জামিনে বেরিয়ে এসে আবারও শুরু করে অপকর্ম। এই অব্যস্থার কারণে দুর্নামের শিকার হচ্ছে দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থা। চিকিৎসা ব্যবস্থাকে দালাল চক্র এবং তাদের দোসররা যে অবস্থানে নিয়ে গেছে তাদের দমন করে তা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে। চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে ছিনিমিনি খেলা বন্ধ করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। অনিয়ম-দুর্নীতি অবিলম্বে দূর করা না হলে চিকিৎসা ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়তে বাধ্য।
সপ্তাহের বিভিন্ন দিন বিভিন্ন চেম্বার বা প্রাইভেট ক্লিনিকে বসে এমন চিকিৎসকের সংখ্যা কম নয়। কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দিনে একাধিক ক্লিনিকেও বসে। বার বার বিভিন্ন নিয়মকানুন করলেও কোনোভাবেই চিকিৎসকদের একাধিক জায়গায় রোগী দেখার প্রবণতা বন্ধ করতে পারেনি স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়। তাই এবার একটি নির্দিষ্ট বেসরকারি ক্লিনিক অথবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসকদের নিবন্ধন করার নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতর। অটোমেশন বা অনলাইন নিবন্ধনের আওতায় এনে একাধিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্র্যাকটিস করার প্রবণতা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, নার্সিং হোম, ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বøাড ব্যাংকের অনুমোদন প্রক্রিয়া অটোমেশন করার অনুমোদন দিয়ে ইতোমধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় দেশের যে কোনো জায়গায় এসব প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ওয়েবসাইটে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। প্রতিটি জেলার সিভিল সার্জন সংশ্লিষ্ট জেলা থেকে আবেদন করা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিদর্শন করে মতামত পাঠিয়ে দেবে স্বাস্থ্য অধিদফতরে। সে অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন ও মেয়াদ প্রদান করবে স্বাস্থ্য অধিদফতর। পাশাপাশি ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে তাদের প্রতিষ্ঠানে কর্মরত চিকিৎসকদের তালিকাও স্বাস্থ্য অধিদফতরে জমা দিতে হবে। এসব কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে স্বাস্থ্য অধিদফতর আবেদন করা ক্লিনিক, বøাড ব্যাংক ও নার্সিং হোমের অনুমোদন দেবে। এতে একজন চিকিৎসক যে প্রতিষ্ঠানে কাজে আগ্রহী হবে এবং তার নথিপত্র জমা দেবে সেখানেই তাকে সেবা দিতে হবে। একাধিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে তারা সেবা দিতে পারবে না। সরকারি চিকিৎসকদের ঢালাওভাবে একাধিক প্রতিষ্ঠানে দায়িত্ব পালনে বাদ সাধার উদ্যোগ প্রশংসাজনক। তবে এটি যাতে যথাযথভাবে বাস্তবায়ন হয় সেদিকেও নজর রাখতে হবে।
লেখক : সম্পাদক ও প্রকাশক দৈনিক নবরাজ

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন