রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে পুলিশের বাথরুমে সন্তান প্রসবকারী ভারতীয় নাগরিক রোখসানার স্বামী আব্দুল হককে আটক করেছে রেলওয়ে থানা (জিআরপি) পুলিশ। গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে আব্দুলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল এলাকা থেকে আটক করা হয়। জিআরপি থানার ওসি ইয়াসিন ফারুক মজুমদার বলেন, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পরে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। দেড় বছর আগে ভারতে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় আব্দুল ও রোখসানার। ক্যান্সারে আক্রান্ত আব্দুলের মাকে দেখার কথা বলে স্ত্রীকে নিয়ে গত ২ জুন বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে দেশে এসেছেন। তাদের কাছে কোনো পাসপোর্ট বা বৈধ কাগজপত্র নেই। রোখসানার দেয়া তথ্য অনুযায়ী আজিমপুর কবরস্থান থেকে ননদের স্বামী সোলেমানের খোঁজ পাওয়া যায়। পরে তার মাধ্যমে রোখসানার স্বামীকে আটক করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আব্দুলের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে ওসি জানান, ঘটনার দিন রোখসানাকে নিয়ে নারায়নগঞ্জে যাওয়ার উদ্দেশ্যে কমলাপুর এসে ট্রেনে চড়েন। আব্দুলের বাড়ি নারায়নগঞ্জে। ট্রেনে চড়ার আগ মুহূর্তে রোখসানা পানি পান করতে চান। এ সময় আব্দুল স্ত্রীর জন্য দোকান থেকে পানির একটি বোতল কেনেন এবং নিজে একটি সিগারেট খান। এরই মধ্যে ট্রেন ছেড়ে দিলে রোখসানা ট্রেন থেকে নেমে স্বামীর জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। আর আব্দুল ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে এবং রোখসানা ট্রেনে আছে ভেবে কমলাপুর থেকে চলে যান।
হাসপাতালে রোখসানা সাংবাদিকদের জানান, দেড় বছর আগে ভারতে তাদের বিয়ে হয়েছে। ভারতের বেঙ্গালুরুতে আব্দুল আসবাবপত্রের দোকানে কাজ করতেন। বিয়ের আগে আব্দুল রোখসানার বাড়িতে আসবাবপত্র মেরামতের কাজ করতে যান। সেখান থেকেই তাদের পরিচয়। তিন মাস প্রেম করার পর পারিবারিকভাবেই বিয়ে হয়। বাংলাদেশে আসার পর রোখসানার ভারতীয় পাসপোর্ট আব্দুলের কাছেই ছিল। রোখসানার কাছে আব্দুলের কোনো ছবি নেই, এমনকি কোনো ফোন নম্বরও নেই। রোখসানা জানান, তার ননদের নাম নিলু। ননদের স্বামীর নাম সোলেমান। আজিমপুর কবরস্থানের কাছেই ননদের বাসা। ঘটনার দিন ননদের বাসা থেকেই ননদ এবং স্বামী আবদুলের সঙ্গে তিনি বের হন। সোলেমান সাংবাদিকদের জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে আব্দুল চট্টগ্রামে এক বিয়ে করেন। সেই ঘরে কোনো সন্তান নেই। তারপর আব্দুল ভারতের বেঙ্গালরুল যান এবং সেখানে বিয়ে করেন। স¤প্রতি দ্বিতীয় স্ত্রী রোখসানাকে নিয়ে বাংলাদেশে আসেন। গত ১৮জুন সোমবার রাতে ঢাকা রেলওয়ে থানার বাথরুমে এক ছেলে সন্তান প্রসব করেন রোকসানা। পরে মা-ছেলেকে উদ্ধার করে মুগদা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। রোখসানার সন্তান বর্তমানে ঢামেক হাসপাতালের স্পেশাল কেয়ার বেবি ইউনিটে (স্ক্যাবু) রয়েছে। হাসপাতালের নবজাতক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তোফাজ্জল হোসেন সাংবাদিকদের জানান, মাত্র ১ কেজি ৭শ’ গ্রাম ওজন নিয়ে নবজাতকের জন্ম হয়েছে। জন্ডিসসহ কিছু জটিলতা দেখা দিয়েছে। প্রথম দিকে নল দিয়ে খাবার দিলেও এখন খাবার বন্ধ আছে। এই মুহূর্তে এ নবজাতককে আশঙ্কামুক্ত বলা যাচ্ছে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন