আমেরিকার প্রধান স্বাস্থ্য উপদেষ্টা তথা সার্জেন জেনারেল ডা. রেগিনা বেনজামিন বলেন সিগারেট, বিড়িতে টান দেয়া মাত্রই শরীরের কোষগুলোর উপর ধ্বংসাত্মক প্রতিক্রিয়া হতে থাকে। যার ধারাবাহিকতার জেরে পরে ক্যানসার হয়। ¯্রফে একটা বিড়ি বা সিগারেট টেনেছেন কী, তার জেরেও ধমনি রুদ্ধ হয়ে হতে পারে হার্ট অ্যাটাক! এভাবেই দুনিয়াবাসীকে সর্তক করেছেন। তিনি বলেন, প্রতিটি সুখটানেই শরীরের মধ্যে শয়ে শয়ে বিষ রাসায়নিক ঢোকে। ধূমপানবাহিত এইসব বিষ সুখটান দেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রক্ত টেনে নেয়। সমস্ত দেহযন্ত্রে ছড়িয়ে পড়ে। এখনকার সিগারেট বড় দ্রুত নিকোটিন আত্মসাৎ করায়। রক্তের মধ্যে রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটিয়ে এমন হাল করে যে রক্ত আঠালো হয়ে জমাট বাঁধতে থাকে। ইতিমধ্যে সংকুচিত হয়ে থাকা ধমনি এই রক্ত জমাট বাঁধার কারণে অবরুদ্ধ হয়ে হার্ট অ্যাটাক হয়। আর এই অ্যাটাকটা হয় কিছু বুঝে উঠার আগেই। যারা ভাবছেন সিগারেট/বিড়ি টেনে এখনও তো খুব ভালো আছি, তারা ভুল করছেন। আবার যারা ভাবছেন, অনেকদিন তো ধূমপান করি না, আর এই একবারই না হয় ধূমপান করলাম। এদের জন্য ডা. বেনজামিনের হুঁশিয়ারি, ওই এক সিগারেট ধূমপানের বিপদ সম্পর্কে ৭০০ পৃষ্ঠার রিপোর্ট দাখিল করেছেন রাষ্ট্রপতি ওবামা নিযুক্ত এই সার্জেন জেনারেল। রিপোর্টে উল্লেখ করেছেন, পুয়েবলো, কলোরাডোতে নিষিদ্ধ করা হয় ২০০৩ সালে। ঠিক তার ৩ বছর বাদে দেখা গেল সেখানে হার্টের রোগভোগের কারণে হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যা ৪১ শতাংশ কমে গেছে। নিকোটিন বিশেষজ্ঞ ডা. কে মাইকেল কামিংস সার্জেন জেনারেলের ৭০০ পৃষ্ঠায় রিপোর্ট খাতিয়ে দেখার পর ক্ষোভের সঙ্গে মন্তব্য করেছেন, ধূমপান তথা তামাকজাত যে কোনও নেশাই যে অবিলম্বে নিষিদ্ধ হওয়া উচিত তা বোঝাতে দেশের আইনসভায় আর কত রিপোর্ট দাখিল করতে হবে? দেশে যত মানুষ এখন হাসপাতালে ভর্তি, তার এক তৃতীয়াংশই ধূমপানজনিত রোগের শিকার। ডা. বেনজামিনের রিপোর্ট পরিসংখ্যান পেশ করে বলা হয়েছে ফি-বছর আমেরিকায় যত লোক মারা যান, তাদের মধ্যে প্রতি ৫ জনে একজনের মৃত্যুর কারণ ধূমপানজনিত রোগভোগ। এরপরই ডা. বেনজামিনের পরামর্শ, আপনার বয়স যদি ৭০ থেকে ৮০-র মধ্যে হয়, আপনি ধূমপায়ী হয়ে থাকেন, সিগারেট-বিড়ি ছেড়ে দিন। বেশিদিন সুস্থ থাকবেন, কিছুদিন বেশি বেঁচে থাকার আনন্দ পাবেন। ধূমপান এবং তামাকজাত নেশা ছেড়ে দিতে পারলে কী লাভ তারও তালিকা দিয়েছেন তিনি। সেখানে জানিয়েছেন: ব্লাড প্রেসার এবং নাড়ির স্পন্দন গতি স্বাভাবিক হয়ে আসে ধূমপান ছাড়ার ২০ মিনিট বাদেই। রক্তে নিকোটিন এবং কার্বন মনোক্সাইডের পরিমাণ অর্ধেক কমে যায় ৮ ঘণ্টার মধ্যে। অক্সিজেনের মাত্রা স্বাভাবিক হয়ে আসে। সিগারেট-বিড়ি টানা ছাড়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কার্বন মনোক্সাইড শরীর ছেড়ে পালিয়ে যায়। ফুসফুস শ্লেষ্মা বের করে দিতে থাকে। ধূমপানের কারণে যে সমস্ত আবর্জনা জমেছিল অন্দরে সেসব বেরিয়ে যেতে থাকে। ৪৮ ঘণ্টা বাদে নিকোটিন-বিষমুক্ত হয়ে যায় শরীর। জিভের স্বাদ গ্রহণের যোগ্যতা বাড়ে। গন্ধ শোঁকার যোগ্যতাও বাড়ে। ৭২ ঘণ্টা বাদে শ্বাস টানার সমস্যা দূর হতে থাকে। ফুসফুস ভালোভাবে কাজ করতে পারায় ৩ থেকে ৯ মাসের মধ্যে কফকষ্ট, সাঁই সাঁই করে নিশ্বাস নেয়ার কষ্ট দূর হয়। ৫ বছর ধূমপান ছেড়ে থাকতে পারলে ধূমপায়ীদের তুলনায় হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা অর্ধেক কমে যায়। ধূমপান ছাড়ার ১০ বছর বাদে ধূমপায়ীদের তুলনায় ফুসফুসের ক্যানসারে ভোগার আশঙ্কা কমে। ডা. বেঞ্জামিন তার রিপোর্টে আরও জানিয়েছেন, ডায়াবেটিকরা যারা সিগারেট খান তাদের ব্লাডসুগার নিয়ন্ত্রণে রাখার সমস্যা হয়। গর্ভাবস্থায় ধূমপান করলে গর্ভপাত হয় কিংবা আগেভাগে ভূমিষ্ট হয়ে যায় শিশু। যে মহিলারা ধূমপানে অভ্যস্ত তাদের সন্তান না হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়। পরবর্তীতে জীবনের পাঁচটি বসন্ত যেতে না যেতেই ওই শিশুর মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে বেশি। অনেক শিশুই মারা যায় সেই সাডেন ইনফ্যান্ট সিনড্রোম ডেথ-এ। এই রিপোটের সারাংশ আগেভাগেই পেয়ে গিয়েছিলেন বারাক ওবামা। গত ৯ মাসে তাই মার্কিন রাষ্ট্রপতি একটিও সিগারেট টানেননি। না, একটিও নয়। জানাচ্ছেন হোয়াইট হাউসে রাষ্ট্রপতির মুখপাত্র রবার্ট গিবস। উল্লেখ্য, তামাকের ধোঁয়ায় সাত হাজারেরও বেশি রাসায়নিক এবং যৌগ ক্যানসার সৃষ্টিকারী। সিগারেটের চেয়ে বিড়িতে কার্বন মনোক্সাইড এবং অন্যান্য বিষ যৌগ বেশি পরিমাণে থাকে । তাই বিড়ি বা সিগারেট ফুঁকেই মৃত্যুর হার বেশি।
ষ আফতাব চৌধুরী
সাংবাদিক-কলামিস্ট।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন