স্টাফ রিপোর্টার : মূল দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে ওলামা লীগর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়ার পর এবার ওলামা লীগের আরেক অংশ বাংলা বর্ষ পহেলা বৈশাখকে বাঙ্গালীর প্রাণের উৎসব হিসেবে ঘোষণা করেছে।
গত শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধনে পহেলা বৈশাখ উদযাপনকে ‘অনৈসলামিক ও হারাম’ বলে দাবি করে আওয়ামী ওলামা লীগের একাংশ। ক্ষমতাসীন দলের ধর্মীয় সংগঠনের পক্ষ থেকে বাঙ্গালীর সার্বজনিন উৎসবকে কেন্দ্র করে এমন বক্তব্য পর দেশজুড়ে তুমুল বিতর্ক তৈরি হয়। এর প্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার রাতে আওয়ামী লীগের অন্যতম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ ওলামা লীগকে ‘বাটপার’দের সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ওলামা লীগের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো ধরনের সম্পর্ক নেই। এ ধরনের সংগঠনের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এরপর গতকাল বুধবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দলের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদও ওলামা লীগের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ ও বিষোদ্গার করেন। তিনি ঘোষণা করেন, ওলামা লীগের সঙ্গে আওয়ামী লীগের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বাংলাদেশ ওলামা লীগ’ আওয়ামী লীগের কোনো অঙ্গ সংগঠন নয়। ওলামা লীগের নেতারা মাঝে মাঝে বিভ্রান্তিকর কর্মকা- করে থাকে, যা আওয়ামী লীগের নীতির সঙ্গে যায় না। ‘ওলামা লীগ’ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কোনো অঙ্গ-সহযোগী কিংবা ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন নয়। ‘কিছু কিছু নেতা ওলামা লীগের নাম ভাঙায়। আসলে তারা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী কিংবা আওয়ামী ঘরানা কোনো সংগঠন নয়।
এদিকে, ওলামা লীগ নিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কঠোর বক্তব্যর পর ওলামা লীগের একাংশের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাওলানা মুহম্মদ আবুল হাসান শেখ শরীয়তপুরী বলেন, যারা ভুঁইফোড় নেতা তারাই আমাদের সমালোচনা করছেন। আওয়ামী লীগের দুর্দিনে তারা কোথায় ছিলেন।
গত শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে আওয়ামী ওলামা লীগ। সেখানে পহেলা বৈশাখকে অপসংস্কৃতি উল্লেখ করে এই দিবসে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা এবং আর্থিক সহযোগিতা বন্ধের দাবি জানানো হয়। এছাড়াও সংগঠনটি বর্তমান শিক্ষানীতিকে ধর্মহীন উল্লেখ করে শিক্ষা আইন বাতিলসহ ১০ দফা দাবি জানায়। মানববন্ধনে আওয়ামী ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মো. আবুল হাসান শেখ বলেন, ‘পহেলা বৈশাখে মঙ্গল প্রদীপ জ্বালানো, উলুধ্বনি দেয়া, শাঁখ বাজানো, মঙ্গল কলস সাজানো, ঢাকঢোলের ব্যবহার, মুখোশ পরে শোভাযাত্রা, মুসলিম মহিলাদের সিঁথিতে সিঁদুর দেয়া বিধর্মীদের কাজ। মুসলমানদের ইসলামহীন করার লক্ষ্যে অপতৎপরতা চালানো হচ্ছে। তাই এ অপতৎপরতা বন্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবে নববর্ষ উদযাপন বন্ধ করতে হবে।
অন্যদিকে, গতকাল বুধবার বিকালে এক বিবৃতিতে আওয়ামী ওলামা লীগের আরেক অংশের সভাপতি আল্লামা ইলিয়াছ হোসাইন বিন হেলালী ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা দেলোওয়ার হোসেন বলেছেন, আগামিকাল (আজ) বৃহস্পতিবার বাংলা নববর্ষ পহেলা বৈশাখ উৎসব দেশবাসিকে আনন্দের সঙ্গে পালনের আহ্বান জানাচ্ছি। কোটি কোটি বাঙ্গালীর প্রাণের এই উৎসবকে ‘ইসলাম বিরোধী’ ও ‘অনৈসলামিক’ আখ্যায়িত করা যাবে না। যারা এই উৎসবকে বাতিলের দাবি জানিয়েছে তারা মূলত ইসলামের অপব্যাখ্যা দিচ্ছে বলে আমরা মনে করছি।
বিবৃতে তারা বলেন, গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখতে পেলাম ‘ওলামা লীগের ব্যানারে ‘আওয়ামী ওলামা লীগ ও সমমনা ১৩ সংগঠন’ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে সরকারের বিরুদ্ধে এবং বাংলার ইতিহাস ঐতিহ্যকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংসের চেষ্টা করছে। তারা যদি আওয়ামী ওলামা লীগই হতো-তাহলে তো সরকারের বিরুদ্ধে এসব ষড়যন্ত্র করতো না। তাই সকল সাংবাদিকদের প্রতি আহবান জানাচ্ছি তাদের ফাঁদে পা দিবেন না। তারা ওলামা লীগের কেউ নয়। পরিকল্পিত ভাবে ওলামা লীগের নাম ব্যবহার করছে মাত্র। তারা জামায়াত-জঙ্গীদের এজেন্ট হয়ে সরকার এবং দেশের সকল সংস্কৃতি লালনকারিদের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে উঠেছে। এদের প্রতিরোধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
বিবৃতে তারা আরও বলেন, একটি গোষ্টি জামায়াত-বিএনপি, হেফাজতের টাকা খেয়ে আমার সরকারের বিরুদ্ধে ওলামা লীগের ব্যনার ব্যবহার করে অপপ্রচার চালাচ্ছে। কারণ ওই বিশেষ গোষ্ঠিটি চায় দেশের আলেম সমাজকে আওয়ামী লীগ থেকে বিচ্ছন্ন করতে। তারা ওলামা লীগের নাম ব্যবহার করে বিএনপি-জামায়াতের এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন