জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েই শেষ হলো এসডিজি বাস্তবায়ন পর্যালোচনা বিষয়ক জাতীয় সম্মেলন। তিন দিনের এ সম্মেলনে সরকারের সংশ্লিষ্ট সবগুলো মন্ত্রণালয় ও দপ্তরগুলোর উন্নয়ন পর্যালোচনা করা হয়। আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ জাতিসংঘের দেওয়া ১৭টি উন্নয়ন শর্ত পূরণের লক্ষ্যও নির্ধারণ করা হয়। সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী ও কর্মকর্তারা এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে রোডম্যাপ অনুযায়ী কাজ করার পরামর্শ রাখেন সংশ্লিষ্টদের প্রতি।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কনফারেন্স সেন্টারে সমাপনী সেশনে পর্যালোচনায় অংশ নেয় শিল্প মন্ত্রণালয়, সড়ক যোগাযোগ ও মহাসড়ক বিভাগ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও বিদ্যুৎ বিভাগ।
অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়নে বর্তমান রাজনৈতিক সরকার ২০১০ সালে মেগা প্রকল্প হাতে নেয়। যে কারণে আমরা এ খাতের সুফল পাচ্ছি।’ তার মতে, জ্বালানি খাত উন্নত হলে তা পুরো মানব উন্নয়ন সূচককে উন্নত করে। ২০৪১ সালে প্রবৃদ্ধি ১০ ভাগ হবে উল্লেখ করে নসরুল হামিদ আরো বলেন, ‘২০৪০ সাল নাগাদ সরকারের লক্ষ্য ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন। এটি হলে বিনিয়োগে বড় ধরণের অগ্রগতি হবে।’
এর আগে গত দুই দিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, নারী ও শিশু বিষক মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ, কৃষি মন্ত্রণালয়, মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সামগ্রিক উন্নয়ন পর্যালোচনা করা হয়।
এসব পর্যালোচনায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট দপ্তর, দেশি-বিদেশি উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা আলোচনায় অংশ নিয়ে ১৭টি বিষয়ের ওপর নিজ নিজ দপ্তরের উন্নয়ন ফিরিস্তি, সমস্যা, সম্ভাবনা এবং প্রতিবন্ধকতার চিত্র তুলে ধরেন। জানা গেছে, ২০০০ সালে ঘোষিত জাতিসংঘ সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এমডিজি) সবগুলো সূচকেই কাঙ্খিত উন্নয়ন ঘটে বাংলাদেশের। ২০১৫ সালে এটি শেষ হওয়ার পর টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে জাতিসংঘ। এ লক্ষ্যমাত্রায় নির্দিষ্ট করে ১৭টি বিষয়ে ২০৩০ সালের মধ্যে কাক্সিক্ষত উন্নতি ঘটানোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
জাতিসংঘ সারাবিশ্বের উন্নয়ন টেকসই করতে ১৭টি লক্ষ্য (এসডিজি) নির্ধারণ করেছে। প্রতিটির ক্ষেত্রে রয়েছে আবার একাধিক সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাগুলো (এসডিজি) হচ্ছে- সব দেশ থেকে সব ধরনের দারিদ্র্য দূরীকরণ, খাদ্য নিরাপত্তা ও টেকসই কৃষি উন্নয়ন নিশ্চিত করে ক্ষুধামুক্ত পৃথিবী গড়ে তোলা, স্বাস্থ্যকর জীবন নিশ্চিত করা এবং সব বয়সী মানুষের জন্য সমৃদ্ধ জীবনের প্রণোদনা প্রদান, সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে ন্যায্য ও মানসম্মত শিক্ষা এবং সবার জন্য আজীবন শেখার সুযোগ সৃষ্টি করা, লিঙ্গসমতা অর্জন এবং কন্যাশিশু ও নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা, সবার জন্য পানি ও স্যানিটেশন সহজলভ্য করা এবং এর টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা, সবার জন্য সহজলভ্য, নির্ভরযোগ্য, টেকসই ও আধুনিক শক্তিপ্রাপ্তি (বিদ্যুৎ ও জ্বালানি) নিশ্চিত করা, সবার জন্য মানসম্মত কাজ ও উৎপাদনমুখী কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার মাধ্যমে টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নকে উৎসাহ প্রদান।
এছাড়া সহজ অবকাঠামোর মাধ্যমে বৃহৎ, টেকসই শিল্পায়ন ও উদ্ভাবনী প্রযুক্তিকে উৎসাহ প্রদান, বিভিন্ন দেশের মধ্যে এবং দেশের অভ্যন্তরে বৈষম্য কমিয়ে আনা, শহর ও মানুষের বসবাসকে একীভ‚ত, নিরাপদ, প্রাণবন্ত এবং টেকসই করা, সম্পদের উৎপাদন এবং সেবন/ব্যবহারকে টেকসই করা, জলবায়ুর নেতিবাচক পরিবর্তন ও এর প্রভাব রোধে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ, সাগর, মহাসাগর ও সমুদ্রসম্পদের টেকসই উন্নয়ন এবং ব্যবহার নিশ্চিত করা, প্রকৃতি ব্যবস্থাপনার টেকসই ব্যবহারকে উৎসাহ ও সুরক্ষা প্রদান, বনসম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনা ও মরুময়তা প্রতিরোধ, বনজসম্পদের সুরক্ষা ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি বন্ধ করা, টেকসই উন্নয়নে সমাজের সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করে শান্তি প্রতিষ্ঠা, সবার জন্য ন্যায়বিচার প্রাপ্তির নিশ্চয়তা, সবক্ষেত্রে কার্যকর ও জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, এসডিজির বাস্তবায়নে এবং টেকসই উন্নয়নে বৈশ্বিক অংশীদারিত্ব সৃষ্টি করা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন