‘রাখিব নিরাপদ দেখাবো আলোর পথ’ এ ভিশনে দেশের ৭০ কারাগার চললেও বর্তমানে মাত্রাতিরিক্ত বেশি বন্দির চাপে মানবিক বিপর্যয় চলছে। ধারণ ক্ষমতার চেয়ে কোন কোন কারাগারে তিন থেকে চারগুণ বন্দি রয়েছে। কারা কর্তৃপক্ষের রেকর্ড অনুযায়ী ৭০ কারাগারে বন্দির ধারণ ক্ষমতা হচ্ছে প্রায় ২৭ হাজার। অথচ আছে প্রায় ৭০ হাজার বন্দি।
স¤প্রতি জেল থেকে বেরিয়েছেন এমন কয়েকজন বন্দির সাথে কথা বলে জানা গেছে, ধারণ ক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি বন্দি নিয়ে মারাত্মক সঙ্কটে রয়েছে কারা প্রশাসন। কারা অভ্যন্তরে দেখা দিয়েছে মারাত্মক বিপর্যয়। বন্দির অতিরিক্ত চাপে অধিকাংশ কারাগারে খাবার, চিকিৎসা, পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ও শোয়ার জায়গার সঙ্কট রয়েছে। একজনের শোয়ার জায়গায় আছেন ৫ থেকে ৭ জন। অনেক সেলে বন্দিদের রাত কাটে না ঘুমিয়ে। এছাড়া মশার উপদ্রব চরম আকার ধারণ করেছে।
কারা প্রশাসনের একটি সূত্র জানায়, বিপুলসংখ্যক বন্দি থাকলেও ব্যবস্থাপনায় কোনো সমস্যা হচ্ছে না। সম্প্রতি রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, কারাগারে থাকা ৩৯ শতাংশ বন্দি মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। বর্তমানে সেখানে ৮৬ হাজার ৩৩৯ বন্দি রয়েছেন। এদের ৩৯ শতাংশই মাদকের সঙ্গে জড়িত।
বন্দির সংখ্যা বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে একাধিক জেল সুপার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, রাজনৈতিক সহিংসতায় বন্দির সংখ্যা বেড়েছে। কারাগারে মাত্রাতিরিক্ত বন্দির জন্যে কোনো ধরনের সমস্যার কথা তারা অস্বীকার করেন।
কারাগার সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা বিভাগের ২৩টি কারাগারে অনুমোদিত ধারণক্ষমতা ১৩ হাজার ৯০২ জন। রাজশাহী বিভাগের ৮টি কারগারের ধারণক্ষমতা ৪ হাজার ১৬৪ জন। রংপুর বিভাগের ৮টি কারাগারে ধারণক্ষমতা ৪ হাজার ৪৪৭ জন। চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি কারাগারে ধারণক্ষমতা ৫ হাজার ৭২৯ জন। এ ছাড়া সিলেট বিভাগের ৪টি কারাগারের ধারণক্ষমতা ২ হাজার ৩৪৬ জন। খুলনা বিভাগের ১০ কারাগারের ধারণক্ষমতা ৪ হাজার ৭৬০ জন। বরিশাল বিভাগের ৬টি কারাগারে ধারণক্ষমতা ১ হাজার ২৯৬ জন।
গত মাসের শেষ সপ্তাহের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, কাশিমপুর-১ কারাগারের ধারণক্ষমতা ৮৫০ জন। অথচ সেখানে রয়েছে ১ হাজার ৬০০ জন বন্দি। নারায়ণগঞ্জ কারাগারের ধারণক্ষমতা ২০০ জন। আছে ১ হাজার ৭০০ জন। রাজশাহী কারাগারের ধারণক্ষমতা ১ হাজার ৪৫০ জন। রয়েছে ৩ হাজার ২০০ জন বন্দি। কুমিল্লা কারাগারের ধারণক্ষমতা পৌণে দুই হাজারের স্থলে আছে ২ হাজার ৭০০ জন বন্দি। কক্সবাজার কারাগারের ধারণক্ষমতা ৫৫০ জন। আছে তিন হাজার বন্দি। পাবনা কারাগারের ধারণক্ষমতা ৬০০ জনের জায়গায় রয়েছে ১ হাজার ৪০০ জন। রংপুর কারাগারের ১ হাজার ৩০০ জনের জায়গায় রয়েছে ১ হাজার ৫৫০ জন। গাইবান্ধা কারাগারে ২০০ জনের স্থলে রয়েছে এক হাজার বন্দি। ময়মনসিংহ কারাগারের ধারণক্ষমতা ১ হাজার। অথচ বন্দি রয়েছে ১ হাজার ৭০০ জন। সিলেট কারাগারে ১ হাজার ২০০ জন থাকার কথা। অথচ সেখানে রয়েছে ২ হাজার বন্দি। বগুড়া কারাগারে ৭০০ জনের জায়গায় রাখা হেয়ছে ২ হাজার ১০০ জন বন্দি। খুলনা কারাগারে ৬০০ জনের স্থলে আছে ১ হাজার ১০০ জন। চট্টগ্রাম কারাগারের ধারণক্ষমতা ১ হাজার ৮৫০ জন। বন্দি রয়েছে ৭ হাজার। কুষ্টিয়া কারাগারে ৬০০ জন থাকার কথা। অথচ রয়েছে ১ হাজার ৭০০ জন।
কারা অধিদফতরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, দেশের কারাগারগুলোতে বন্দির সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় কিছু সমস্যা রয়েছে। তবে বর্তমান সরকারের সময় বেশ কিছু নতুন কারাগার তৈরি করা হয়েছে। তার পরেও বন্দির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সার্বিক ব্যবস্থাপনায় অনেকটাই হিমশিম খেতে হচ্ছে কারা কর্তৃপক্ষকে এমন মন্তব্য করেন ওই কর্মকর্তা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন