আইয়ুব আলী : চট্টগ্রামে ভেজাল মিনারেল ওয়াটারের ব্যবসা এখন রমরমা। নগরীর অলিতে গলিতে গজিয়ে উঠেছে মিনারেল ওয়াটার নামে ভেজাল কারখানা। লাইসেন্সবিহীন এসব কারখানায় নেই কোন ল্যাব বা কেমিষ্ট। দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে দিব্যি এসব ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে একটি দুষ্ট চক্র। মাঝেমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে দু’একটি কারখানায় তালা দেয়া হলেও ফের তারা ভেজালের ব্যবসা শুরু করে।
মিনারেল ওয়াটারের নামে এ অবৈধ বাণিজ্য চালিয়ে চক্রটি আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ বনে যাচ্ছে এবং জনস্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। গত ফেব্রæয়ারী থেকে চলতি মাসের ৩ এপ্রিল পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত ১২টি অবৈধ মানহীন ও লাইসেন্সবিহীন মিনারেল ওয়াটার কারখানাকে ৪ লাখ টাকা জরিমানা করেছে এবং কয়েকটি কারখানা সীলগালা করে দিয়েছে। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রুহুল আমীন ইনকিলাবকে জানান, জনস্বাস্থ্যের প্রতি হুমকিস্বরূপ এসব অবৈধ মিনারেল ওয়াটার কারখানার বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
প্রশাসন ও বিএসটিআইকে ফাঁকি দিয়ে চট্টগ্রামসহ সারাদেশেই চলছে এ প্রতারণার ব্যবসা। মানুষ টাকা দিয়ে বোলতজাত মিনারেল ওয়াটারের নামে এ দূষিত পানি পান করে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। শহর থেকে গ্রামাঞ্চলের হাটবাজার পর্যন্ত এগুলো দেদারছে বিক্রি হচ্ছে। বিএসটিআই সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বিভাগের ১১ জেলায় মাত্র লাইসেন্সধারী ৩০টি ড্রিংকিং ওয়াটার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ২০টি প্রতিষ্ঠান মান লাইসেন্স পাওয়ার জন্য আবেদন দাখিল করেছে। ৭-৮টি প্রতিষ্ঠান মান লাইসেন্স নবায়ন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। চট্টগ্রামে প্রায় দুই শতাধিক লাইসেন্সবিহীন অবৈধ ড্রিংকিং ওয়াটার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
চিটাগাং ড্রিংকিং ওয়াটার ম্যানুফ্যাক্চারার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি এএসএস ইসমাইল খান বলেন, অবৈধ ড্রিংকিং ওয়াটার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কারণে মান লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। তারা মানবিহীন দূষিত পানি বোতলজাত করে বাজারে কমদামে সরবরাহ করছে। কিন্তু আমরা মানসম্মত ড্রিংকিং ওয়াটার বাজারে সরবরাহ করতে গিয়ে হোঁচট খাচ্ছি। ভোক্তারা মান যাচাই না করে কমদামে বোতলজাত পানি ক্রয় করছে। মানবিহীন এ বোতলজাত পানি ব্যাংক-বীমা, অভিজাত হোটেল, রেস্টুরেন্ট, অফিসপাড়ায় বিপণন করা হচ্ছে।
প্রশাসনের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ভোক্তারা সচেতন হয়ে মানবিহীন বোতলজাত পানি পরিহার করলে আস্তে আস্তে এসব দুষ্টচক্রের অপতৎপরতা বন্ধ হয়ে যাবে। তিনি বলেন, মাইক্রোবায়োলজিক্যাল পরীক্ষার জন্য নিয়ম অনুযায়ী নমুনা সংগ্রহের পর যথাযথ সময়ের মধ্যে নমুনা পরীক্ষা করা আবশ্যক। তাই অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের ড্রিংকিং ওয়াটার পণ্যের নমুনা পরীক্ষার জন্য বাণিজ্যিক রাজধানী হিসাবে চট্টগ্রামে ড্রিংকিং ওয়াটার পণ্য পরীক্ষার ল্যাব স্থাপন করা অত্যন্ত জরুরি।
চট্টগ্রামসহ সারাদেশে আনুমানিক ৭শ’ এর ঊর্ধ্বে ড্রিংকিং ওয়াটার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তৎমধ্যে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান লাইসেন্সবিহীন এবং মেয়াদ উত্তীর্ণ। এ সকল প্রতিষ্ঠানসমূহ থেকে সরকার বছরে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি বিএসটিআই’র বাইরে থাকায় মানসম্মত ড্রিংকিং ওয়াটার উৎপাদন ও বিপণন নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া ব্যবসায়ীদের মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা এবং বৈষম্য দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের বিশ্বাস ড্রিংকিং ওয়াটার পণ্যের মান বিডিএস-১২৪০ সংশোধনপূর্বক লাইসেন্স প্রক্রিয়া যুগোপযোগী করা হলে এ সকল প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্সের আওতায় আনা সহজ হবে এবং সরকার বড় অংকের রাজস্ব আদায়ের পাশাপাশি মানসম্মত ড্রিংকিং ওয়াটার উৎপাদন ও বিপণন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
চট্টগ্রাম মহানগরসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামের বিশাল জনগোষ্ঠী সারা বছরই ডায়রিয়া, টাইফয়েড, আমাশয়সহ নানা রোগে ভুগছে। মিনারেল ওয়াটারের নামে বিষপান সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিষয়টি ব্যাপকভাবে প্রচার হওয়ার প্রয়োজন। একইসঙ্গে মুনাফালোভী মানুষরূপী দানবদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন