বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

মহানগর

খুলনার আধুনিক কারাগার নির্মাণে ব্যয় বৃদ্ধি জটিলতা

প্রকাশের সময় : ১৬ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এ.টি.এম. রফিক, খুলনা থেকে : দীর্ঘসূত্রতার কারণে খুলনার আধুনিক কারাগার নির্মাণে ব্যয় বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। প্রথম পর্যায়ের ১৪৪ কোটি থেকে ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮০ কোটি টাকা। অতিরিক্ত অর্থের যোগান মেটাতে ব্যয় পুননির্ধারণ ফাইল মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের জন্য এখন অপেক্ষার প্রহর গুণছে। নতুন প্রকল্পের ফাইল আইজিপি প্রিজন হয়ে এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। এরপর চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে। এতোসব আমলাতান্ত্রিক জঠিলতায় গতি পাচ্ছে না খুলনার আধুনিক কারাগার নির্মাণ কাজের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ভৈরব নদের তীরে ১৯১২ সালে নির্মিত বিভাগীয় শহর খুলনার একমাত্র কারাগারটি শতাব্দী প্রাচীন। এই কারাগারে ধারণ ক্ষমতার ৩/৪ গুণেরও বেশি বন্দী অবস্থান করে। আধুনিক কোন সুযোগ-সুবিধা না থাকায় এখানকার বন্দিদের কষ্টের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার পাশাপশি নানাধরনের সমস্যায় রোগাক্রান্ত হচ্ছে। শুধু কারাবন্দীই নয়, এখানকার কারারক্ষীদেরও কষ্টের যেন শেষ নেই। পরিত্যক্ত ভবনে জীবনহানির আশংকার মধ্যে কাজ করতে হচ্ছে তাদের।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শতাব্দী প্রাচীন কারাগারে জায়গার স্বল্পতা ও অতিরিক্ত বন্দীর কথা ভেবে ২০০৭ সালে তৎকালিন আওয়ামী লীগ সরকার খুলনায় একটি আধুনিক কারাগার নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। আমলাতান্ত্রিক জটের কারণে সেই প্রকল্প আর বেশি দূর এগোতে পারেনি। ২০০৮ সালের ২০ জুলাই খুলনায় ফের কারাগার নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। মহানগরীর উপকণ্ঠ ডুমুরিয়া উপজেলার চক মথুরাবাদের আসানখালি মৌজার ৩০ একর জমিতে নতুন এ কারাগার নির্মাণ প্রকল্পের প্রাথমিক ব্যয় নির্ধারণ করা হয় প্রায় ১৪৪ কোটি টাকা। এদিকে, গণপূর্ত বিভাগ সূত্র জানায়, সময় মতো অর্থ ছাড় না পাওয়ায় প্রকল্প গ্রহণের দীর্ঘ ৮ বছর অতিবাহিত হলেও কারাগার নির্মাণের কাজ শুরু করা যায়নি। এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণ এবং মাটি ভরাট কাজের কার্যাদেশ ছাড়া আর কোন কাজই এগোয়নি। এ জন্য মাত্র ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে।
গণপূর্ত বিভাগ খুলনা-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, বিগত ২০০৮ অর্থ বছরে প্রাক্কলিত (এষ্টিমেট) অনুসারে প্রকল্প ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল। এরপর সরকারীভাবে দু’দফায় নতুন প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে। এই দীর্ঘ ৮ বছরে প্রায় শতকরা ৫০ শতাংশ মূল্য বেড়েছে। কিন্তু কারাগার নির্মাণ প্রকল্প ব্যয় পুনরায় নির্ধারণ করা যায়নি। ফলে ৮ বছর পূর্বের এষ্টিমেট অনুসারে কারাগার নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে কারণে ২০১৪ সালের এষ্টিমেট অনুসারে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রায় ২৮০ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। বর্তমানে আরো বেশি অর্থের প্রয়োজন। এ অবস্থায় খুলনা কারাগার নির্মাণে নতুন করে অন্তত ২৮০ কোটি পুনব্যয় নির্ধারণ করে প্রকল্পটি পুনরায় অনুমোদনের জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আইজিপি প্রিজন নতুন প্রকল্প অনুমোদন করেছেন। এখন ফাইলটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আছে। সেখান থেকে অনুমোদন শেষে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন হয়ে আসলে মূল ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করা যাবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আধুনিক এই কারাগারটি নির্মাণ হবে দুই হাজার বন্দির ধারণ ক্ষমতা বিশিষ্ট সিলেটে কেন্দ্রীয় কারাগার প্রকল্পের আদলে। নতুন কারাগারে বন্দিদের জন্য ১০০ বেডের একটি হাসপাতাল থাকবে। এছাড়া মহিলাদের জন্য ২০ বেডের একটি ও বন্দি টিবি রোগীদের জন্য ২৫ বেডের আলাদা আরেকটি টিবি হাসপাতাল থাকবে। কারাগারটিতে বন্দিদের লেখাপড়ার জন্য স্কুল, উন্নতমানের লাইব্রেরি, খাবারের জন্য ডাইনিং রুম, আধুনিক সেলুন ও লন্ড্রি থাকবে। কারাগারে শিশুদের জন্য থাকবে পৃথক ওয়ার্ড ও ডে-কেয়ার সেন্টার। সেখানে শিশুদের জন্য লেখাপড়া, খেলাধুলা, বিনোদন ও সংস্কৃতি চর্চার জন্য সুব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া শিশুসহ মা বন্দিদের জন্যও থাকবে আলাদা আরেকটি ওয়ার্ড। এ ওয়ার্ডটিতে সাধারণ মহিলা বন্দি থাকতে পারবে না। কারাগারে পুরুষ ও মহিলা বন্দিদের হস্তশিল্পের কাজের জন্য আলাদা আলাদা ওয়ার্কশেড, বিনোদন কেন্দ্র ও নামাজের ঘর থাকবে। পুরুষ ও মহিলা বন্দিদের সঙ্গে দেখা করতে আসা দর্শনার্থীদের জন্যও থাকবে আলাদা সাক্ষাৎকার কক্ষ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ১৯১২ সালে নির্মিত খুলনা জেলা কারা ভবনের বয়স বোঝা যায় দর্শনার্থীদের কক্ষে গেলে। কারাগারের বাইরের অবয়বে যতটা চাকচিক্য, ভেতরে ততোটাই করুণ। পলেস্তারা খসে পড়েছে অনেক আগে। রডও খুলে পড়তে যাচ্ছে। এক কারারক্ষী জানালেন, ঈদের আগে ছাদের একটি অংশ খসে পড়ে এক নারী আহন হন। কারাগারের দক্ষিণ পাশে দেয়ালের অবস্থাও নাজুক। নোনার কারণে পলেস্তারা খসে ইট বের হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে ওই স্থান। মূল কারা ভবনের ছাদে লেখা, ‘রাখিব নিরাপদ, দেখাবো আলোরপথ’।
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা খুলনার কো-অর্ডিনেটর এ্যাড. মোমিনুল ইসলাম বলেন, কারাগারে বন্দীদেরও যে মানবাধিকার আছে-এটা সবাই ভুলে যায়। কারাগার হচ্ছে সংশোধনের জায়গা। সেখানে অপরাধীদের সংশোধনের মাধ্যমে আলোর পথ দেখাতে হয়। কিন্তু নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তা’ সম্ভব হয় না। কয়েক জন বন্দী জানান, ওয়ার্ডে ফ্যান নেই। গরমকালে সারারাত বসে থাকতে হচ্ছে। স্যারদের বললে নিজেদের ফ্যান কিনে নিতে বলেন। বৃষ্টির সময় সমস্যা আরও বাড়ে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন