মালেক মল্লিক : দীর্ঘ ১৫ বছরেও চূড়ান্ত রায় হয়নি রমনার বটমূলে বোমা হামলার ঘটনায় দায়ের করা (হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে) দু’টি মামলার। বোমা হামলার ঘটনার হত্যা মামলায় আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিল হাইকোর্টে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। এছাড়া বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা মামলাটি নিম্ন আদালতে বিচার কার্যের শেষ পর্যায়ে এসে সাক্ষী আসছেন না মামলা প্রমাণ করার জন্য। এদিকে হত্যা মামলায় আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিল হাইকোর্টের অবকাশ শেষে শুনানি শুরু হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার সাব্বির ফয়েজ সাংবাদিকদের বলেন, নিম্ন আদালতের রায় ও মামলার নথিসহ ডেথ রেফারেন্স শাখায় পৌঁছার পর রায়ের পেপারবুক তৈরি করা হয়েছে। আগামী মাসে শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।
২০১৪ সালের ২৩ জুন ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ রুহুল আমিন বোমা হামলার ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে আটজনকে মৃত্যুদÐ দেয়া হয়। এ ছাড়া ছয় আসামিরই হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন দÐ হয়েছে। মৃত্যুদÐাদেশ প্রাপ্ত আটজনের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। যাবজ্জীবন কারাদÐাদেশ প্রাপ্তদেরও একই অর্থদÐ দেয়া হয়। অনাদায়ে তাঁদের অতিরিক্ত এক বছর সাজা ভোগ করতে হবে। এ মামলায় ১৪ জন আসামির মধ্যে পাঁচজন শুরু থেকে পলাতক। বাকি আসামিরা বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন। পেপারবুক ও কার্যতালিকা থেকে দেখা যায়, আসামিদের ডেথ রেফারেন্সের সঙ্গে সাতজনের করা ছয়টি আপিল শুনানির জন্য রয়েছে। এর মধ্যে মুফতি হান্নান, আকবর হোসেন, সুমন, শাহদাতউল্লাহ ও আবু তাহের পৃথক আপিল করেছেন। শেখ ফরিদ ও মো. ইয়াহিয়া মিলে করেছেন একটি আপিল। সঙ্গে রয়েছে মুফতি হান্নান, আকবর হোসেন ও সুমনের জেল আপিল। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডেপুটি এটর্নি জেনারেল মনিরুজ্জামান কবীর বলেন, ১৪ আসামির মধ্যে মৃত্যুদÐ প্রাপ্ত পাঁচ আসামি এখনও পলাতক। তারা হলেন- তাজউদ্দিন, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, আবু বকর, শফিকুর রহমান ও আবদুল হাই। মৃত্যুদÐপ্রাপ্ত হান্নান, আকবর ও আরিফ বোমা হামলার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন। বিচারিক আদালতে রায়ের সময় ওই তিন আসামিসহ কারাগারে থাকা নয়জনকে আদালতে হাজির করা হয়।
বিস্ফোরক মামলায়: বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে করা মামলাটির কার্যক্রম ঢাকার দ্রæত বিচার আদালতে চলছে। বিস্ফোরক মামলায় সাক্ষী মিলছে না। এ মামলায় ৮৪ জন সাক্ষীর মধ্যে নয়জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গঠনের পর দুই বছরে সাক্ষ্যগ্রহণের ২৫টি তারিখেও তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। দফায় দফায় অজামিনযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হলেও সাক্ষী আসছেন না মামলা প্রমাণ করার জন্য। ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবু আবদুল্লাহ ভূইয়া বলেন, একই ঘটনার হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দেয়ার পর সাক্ষীরা আর আদালতে আসতে চাচ্ছেন না।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০০১ সালের ১৪ এপ্রিল রমনা বটমূলে বর্ষবরণে বোমা হামলা চালানো হয়। ঘটনাস্থলেই নয়জনের মৃত্যু হয়। পরে হাসপাতালে মারা যান একজন। এ ঘটনায় সার্জেন্ট অমল চন্দ্র ওই দিনই রমনা থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করেন। ঘটনার প্রায় আট বছর পর ১৪ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ। ২০০৮ সালের ৩০ নভেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। দুটি মামলারই অভিযোগপত্র একসঙ্গে দাখিল করা হয়। পরে বিচারের জন্য মামলা দুটি ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে যায়। ওই আদালতে একই বছরের ১৬ এপ্রিল পৃথকভাবে মামলা দুটিতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেলের সিদ্ধান্তে হত্যা মামলাটি দ্রæত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৩ এবং বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের মামলাটি দ্রæত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এ পাঠানো হয়। ১৩৫ কার্যদিবসে বিচার শেষ না হওয়ায় হত্যা মামলা দায়রা আদালতে ফেরত যায়। ফলে হত্যা মামলাটি আবার দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা আদালতে স্থানান্তর হয়। ২০১৩ সালের ২৩ অক্টোবর রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্য শেষ হয়। এরপর ২০১৩ সালের ১০ নভেম্বর আসামিরা আত্মপক্ষ সমর্থন করে ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারায় জবানবন্দি দেন। মামলার নথিতে ৮৪ জন সাক্ষীর নাম উল্লেখ থাকলেও রাষ্ট্রপক্ষে মোট ৬১ জন সাক্ষ্য দেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন