শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মহানগর

সিলেট নার্সিং কলেজের ছাত্রী নিবাসে ফাটল

প্রকাশের সময় : ১৬ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ফয়সাল আমীন : সিলেট নার্সিং কলেজের ছাত্রী নিবাসে কয়েকটি ফাটল দেখা দিয়েছে। এতে ওই ছাত্রী নিবাসটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। তবুও বাধ্য হয়ে ওই হোস্টেলে ৩৭৪ জন ছাত্রী বসবাস করছেন। পরীক্ষা ও সংশ্লিষ্টদের সান্ত¦নায় ছাত্রীরা ওই হোস্টেলে রয়েছেন। তবে রাতের বেলা অন্যত্র গিয়ে রাত যাপন করছেন। গতকাল সিলেট নার্সিং হোস্টেলে বসবাসরত ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।
সিলেট ুনার্সিং কলেজ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮২ সালে সিলেট নার্সিং ট্রেনিং সেন্টার নামে ওই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম শুরু হয়। চারতলাবিশিষ্ট ওই প্রতিষ্ঠানের নিচতলায় চলত একাডেমিক কার্যক্রম। আর বাকি তলাগুলোতে ৫০ জন করে ১৫০ ছাত্রীর আবাসনের ছিল। কিন্তু মাত্র ১৫০ জন ছাত্রী বসবাসের কথা থাকলেও সেখানে শুরু থেকেই নির্ধারিত আসনের চেয়ে বেশি ছাত্রী থাকতেন। পরবর্তীতে ২০১১ সালে ওই ট্রেনিং সেন্টারটি সিলেট নার্সিং কলেজে রূপান্তরিত হয়, করা হয় নতুন ভবনও। একপর্যায়ে পুরো চারতলা ভবনটিতে ছাত্রীদের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়। তাই ওই ছাত্রী হোস্টেলে ১৫০ থেকে আসনের সংখ্যা বেড়ে গিয়ে দাঁড়ায় ২৫০ আসনে। কিন্তু সেখানে বর্তমানে ৩৭৪ জন ছাত্রী বসবাস করছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
ছাত্রীদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, গত বুধবার রাতে ভ‚মিকম্পে সিলেটের নার্সিং কলেজের একটি ছাত্রী নিবাসে শতাধিক স্থানে ফাটল দেখা দেয়। এ সময় তাড়াহুড়া করে হোস্টেল থেকে বের হতে গিয়ে শিলা, ববী দাস, শিল্পী নামের তিন ছাত্রী অজ্ঞান হয়ে যান। পরে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। অপরদিকে ভূমিকম্পে ফাটল দেখা দেওয়ায় রাতেই সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের পরিচালকসহ কয়েকজন ঊধ্বতর্ন কর্মকর্তা হোস্টেল পরিদর্শনে যান। এ সময় তারা ওই ফাটলে তেমন কোনো সমস্যা হবে জানিয়ে ছাত্রীদের হোস্টেলে থাকার পরার্মশ দেন। এছাড়াও কেউ যদি বাহিরে কোন আত্মীয়-স্বজনের বাসায় থাকতে পারেন তা হলেও কোনো সমস্যা নেই বলে জানান।
কর্তৃপক্ষের এমন নির্দেশনা পাওয়ার পর হোস্টেলের ছাত্রীরা সবাই যার যার মতো করে অন্যত্র গিয়ে রাত যাপন করেন। পরদিন সকালে তারা ফের হোস্টেলে ফিরেন। কিন্তু পরীক্ষা থাকার কারণে অনেকেই বাড়ি যেতে পারছেন না। তবে যাদের পরীক্ষা নেই তারা বৃহস্পতিবার হোস্টেল ত্যাগ করে বাড়ি ফিরেছেন।
শুক্রবার দুপুরে হোস্টেলে গিয়ে দেখা গেছে, চারতলাবিশিষ্ট হোস্টেলের প্রায় শতাধিক স্থানে ফাটল ধরেছে। এছাড়াও ভূমিকম্পে নিচতলার বারেন্দা অনেকটা দেবে গেছে। একাধিক ওয়ালে ফাটল দিয়েছে। ছাত্রীদের রুমের মধ্যে বই-খাতা, কাপড়ের ব্যাগগুলো গুটানো রয়েছে। নিচতলার দিক্ষণ-পশ্চিমের একটি রুমে গিয়ে দেখা গেছে, রুমের দেয়ালে বড় ধরনের ফাটল রয়েছে। এটা গত বুধবারের ভূমিকম্পে হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই রুমে থাকা ছাত্রীরা। এছাড়াও গত বুধবারের ভূমিকম্পে ওই হোস্টেলে প্রায় শতাধিক ফাটল নিয়েছে বলে জানান তারা। সরজমিন ঘুরেও তাদের এমন তথ্যের প্রমাণ মিলেছে। ছাত্রীরা জানিয়েছেন, এর আগে ওই হোস্টেলে কোনো ফাটল ছিল না। গত বুধবার ভ‚মিকম্পে ওই হোস্টেলের প্রায় প্রতিটি দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। তাই তারা সব সময় আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। এমনকি তারা দিনের বেলা হোস্টেলে অবস্থান করলেও রাতের বেলা অন্যত্র গিয়ে রাত যাপন করছেন।
হোস্টেলে বসবাসরত স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভানেত্রী হাসনা আলম অমি জানান, হোস্টেলে ৩৭৪ জন ছাত্রী থাকেন। তাদের মধ্যে অনেকেই পরীক্ষা থাকার কারণে বাধ্য হয়ে হোস্টেলে থাকতে হচ্ছে। কিন্তু গত বুধবার ভূমিকম্পে তাদের হোস্টেলে একাধিক দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। তাই বুধবার রাতে অন্যত্র গিয়ে রাত্রী যাপন করেছেন তারা। এছাড়াও এখনো তাদের মধ্যে ভূমিকম্প আতঙ্ক রয়েছে। আমি আরো জানান, বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে। এরপর ওসমানী হাসপাতালে পরিচালকের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল হোস্টেল এসে পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শন শেষে তাদের ওই হোস্টেলে বসবাস করলে কিছুই হবে বলে জানিয়েছেন।
হোস্টেলে থাকা জুই ও তানিয়া নামের দুই ছাত্রী জানিয়েছেন, তাদের পরীক্ষা চলছে। তাই তারা বাড়ি যেতে পারছেন না। এছাড়াও সিলেট নগরীতে তাদের কোন আত্মীয়-স্বজনের বাসাও নেই। তাই বাধ্য হয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ওই হোস্টেলে রয়েছে। তারা জানান, পরীক্ষা চলছে ঠিক, কিন্তু ভূমিকম্প আতঙ্কে পড়ার টেবেলি মন বসছে না তাদের। তাই তারা পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতেও হিমশিম খাচ্ছেন। এমতাবস্থায় তাদের কি করণীয় তাও ভেবে উঠছে পারছেন না তারা। হোস্টেলে দায়িত্বে থাকা দুই শিক্ষিকা কল্পনা দেবী ও সানজিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘ভবনটি পুরোনো হওয়াতে ভূমিকম্পে ওই অনেকগুলো ফাটল দেখা দিয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। তারা বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।’এদিকে, সিলেট ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অফিসের কর্মকর্তারা গতকাল দুপুরে গিয়ে ভবনটি পরিদর্শন করেছেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন