কূটনৈতিক সংবাদদাতা : ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাংলাদেশ মিশনে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করা হয়। এসব অনুষ্ঠানে প্রবাসী বাংলাদেশী এবং তাদের সন্তানরাসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা অংশ নেন।
জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনেও পহেলা বৈশাখ উদযাপন করা হয়। এ উপলক্ষে মিশনকে বাঙালি সাজে সাজানো হয়। দেশের ঢাক-ঢোল-একতারা, তালপাতার পাখা, নকশী কাঁথা, আলপনা, নানা-বর্ণের ব্যানার- ফেস্টুন-বেলুন দিয়ে বর্ণিল করে তোলা হয় মিশনের বঙ্গবন্ধু অডিটরিয়ামকে। এ উপলক্ষে বিকেলে এক অভ্যর্থনার আয়োজন করা হয়। স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন বিদেশি অতিথিদের স্বাগত জানান। বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরাও বর্ণিল পোশাক পড়ে অনুষ্ঠানে আসেন। বাঙালির নববর্ষের সঙ্গে একাত্ম হন। প্রবাসী বাংলাদেশীরাও রঙ-বেরঙের দেশীয় পোশাক পড়ে যোগ দেন উৎসবে। বহুমাত্রিক পরিবেশে অনুষ্ঠান সূচিত হয় জামদানি শাড়ি ও পায়জামা পাঞ্জাবি পরিহিত পঞ্চাশ জন বিদেশি নারী পুরুষের সমন্বয়ে গাওয়া ‘এসো হে বৈশাখ’ সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে। নিউজার্সির সৃষ্টি একাডেমির শিল্পীরা বিভিন্ন ঋতুকে স্বাগত জানিয়ে সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশন করে। লালনগীতি, নজরুলগীতি, ভাওয়াইয়া সব ধরনের সঙ্গীত দর্শকদের মুগ্ধ করে। বিদেশি অতিথিদের মিশনের কর্মকর্তা কর্মচারীদের ঘরে তৈরি পিঠা-পুলি-পায়েস, ভাত-মাছ তরকারি দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। অনুষ্ঠানে নিউইয়র্ক সফররত স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে বড় পরিসরে পয়লা বৈশাখ উদযাপন করল মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস। গত বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল ৯টার দিকে কুয়ালালামপুরের অভিজাত হোটেল রেনেসাঁয় বৈশাখ উদযাপন শুরু হয়। এবারের আয়োজনের বিশেষত্ব ছিল বেশ কয়েকটি দেশের কূটনীতিকদের আগমন।
অনুষ্ঠানে মালয়েশিয়াপ্রবাসী বাংলাদেশি শিশুরা বিদেশি কূটনীতিকদের স্বাগত জানাতে বাহারি রঙের ফুল ও ফুলের পাপড়ি ছিটাতে থাকে। শিশুদের পাশাপাশি বিদেশিদের অভ্যর্থনা জানাতে যোগ দেন কুয়ালালামপুর দূতাবাসের হাইকমিশনার মোহাম্মদ শহীদুল ইসলামসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সাদা রঙের শাড়ি আর মাথায় বেলি ফুলের খোঁপা পরে মালয়েশিয়া প্রবাসী নারীদের উৎসব ছিল চোখে পড়ার মতো। কুয়ালালামপুর দূতাবাসের কনস্যুলার (রাজনৈতিক) রইস হাসান সারোয়ার ও দ্বিতীয় সচিব (রাজনৈতিক) তাহমিনা ইয়াসমিনের উপস্থাপনা আর হাইকমিশনার শহীদুল ইসলামের সভাপতিত্বে শুরু হয় এক মনোজ্ঞ সাস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি কুয়ালালামপুর দূতাবাস আয়োজন করে বাংলাদেশি খাবারের। পিঠা-পায়েশ-সন্দেশ খেয়ে বিদেশিরা সন্তোষ প্রকাশ করেন। এত সুন্দর অনুষ্ঠানে আসতে পেরে বিদেশিরা কুয়ালালামপুর দূতাবাসের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। দূতাবাসের আয়োজনে অংশ নিতে সমবেত হন মালয়েশিয়ার শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান, ভেনিজুয়েলা, কিউবা, আফগানিস্তান, কোরিয়া, রাশিয়া ও ভারতের রাষ্ট্রদূতরা।
অন্যদিকে শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোতে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে দূতাবাস প্রাঙ্গণে বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে শ্রীলংকায় বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশীসহ মিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রঙিন পাঞ্জাবি ও শাড়ি পড়ে সপরিবারে অংশ নেন। এসময় একক ও সমবেত সংগীত, কবিতা আবৃত্তি, বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ও সমকালীন পোশাক প্রদর্শন করা হয়। হাইকমিশনার তারিক আহসান তার স্বাগত বক্তব্যে সবাইকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে নৈশভোজের আয়োজন করা হয়। বাংলা সংগীতের আবহে আর বাংলাদেশি হস্তশিল্প দিয়ে সাজানো পরিবেশে পরিবেশন করা হয় বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন খাবার। যা রান্না করে দূতাবাসের পরিবারগুলো। অনুষ্ঠানে অংশ নেন প্রায় ৭০ জন অতিথি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন