বছরজুড়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু রাখা ও প্রশ্নফাঁস বন্ধে পৃথক পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। পাবলিক ও নিয়োগ পরীক্ষার জন্য ক্লাস যেন বন্ধ না থাকে এজন্য প্রত্যেক উপজেলায় স্বতন্ত্র পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপন করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে পরীক্ষা পরিচালনার জন্য নিয়োগ দেয়া হবে পৃথক জনবলও। তারা শুধু পাবলিক নয়, স্বতন্ত্র যে কোন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নিয়োগসহ অন্যান্য পরীক্ষা পরিচালনা করবেন। জেলা প্রশাসকদের সুপারিশের ভিত্তিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই প্রস্তাবনাটি পর্যালোচনার জন্য ইতোমধ্যে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান মোহাম্মদ হানযালাকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটিও করা হয়েছে। এই কমিটিকে দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি প্রস্তাবনা তৈরি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে জমা দিতে বলা হয়েছে। সরকারের নীতি নির্ধারনী পর্যায়ে সে প্রস্তাব অনুমোদন পেলেই তা বাস্তবায়নে যাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়,
গত বছর জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে পরীক্ষা গ্রহণের পরিবর্তে পৃথক পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপনের জন্য তারা সুপারিশ করেন। এর পেছনে তারা যুক্তি হিসেবে তুলে ধরেন, প্রতিবছর জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসির মতো বড় তিনটি পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এই তিন পরীক্ষার সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রায় পৌনে দুই মাস বন্ধ থাকে। এতে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হয় এবং পাঠদান সূচিতেও তার প্রভাব পড়ে। জেলা প্রশাসকদের সুপারিশের প্রেক্ষিতে বিষয়টি বিবেচনায় নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় সমাধান হিসেবে প্রত্যেক উপজেলায় স্বতন্ত্র পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপানের উদ্যোগের বিষয়ে আলোচনা শুরু করে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, শুধু পাবলিক নয় স্বতন্ত্র পরীক্ষা কেন্দ্র কোন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নিয়োগসহ অন্যান্য পরীক্ষাও নিতে পারবে। তবে সেটি যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে। সরকারের এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি সময়ের দাবি। যা দীর্ঘমেয়াদী ভাল ফলাফল আসবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে। শিক্ষাবোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, শুধু জেএসসি, এসএসসি ও এইচএসসি এ তিনটি পাবলিক পরীক্ষার জন্য বছরের পৌনে দুইমাস ক্লাস বঞ্চিত থাকে শিক্ষার্থীরা। এতে ওইসব প্রতিষ্ঠানের সারা বছরের শিক্ষাসূচি এলোমেলা হয়ে যায়। কেন্দ্র পড়া প্রতিষ্ঠানগুলো পিছিয়ে পড়ে অন্যান্য স্কুলের পাঠদান সূচি থেকে। এমন বাস্তবতায় প্রত্যেক উপজেলায় আলাদা পরীক্ষা কেন্দ্র করার সুপারিশ করেন জেলা প্রশাসকরা। তাদের প্রস্তাবের ভিত্তিতে ইতোমধ্যে বৈঠকও করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর (ইইডি), মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) এবং শিক্ষাবোর্ডের প্রতিনিধিদের ওই বৈঠকে শিক্ষা প্রকৌশল আধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান মোহাম্মদ হানযালাকে আহ্বায়ক করে কমিটি করা হয়েছে। কমিটিতে মাউশি ও শিক্ষাবোর্ডের প্রতিনিধি রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান মোহাম্মদ হানযালা বলেন, গত বছর ডিসি সম্মেলনে এমন একটি প্রস্তাব তারা দিয়েছিল। সে প্রেক্ষিতে আমরা প্রথম বৈঠকে বসেছিলাম। বৈঠকে একটি কমিটি করে দেয়া হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে পরবর্তী কার্যক্রম অগ্রসর হবে। তবে এখনও চূড়ান্ত কিছু হয়নি।
বৈঠকে সূত্রে জানা গেছে, কমিটি সারাদেশে উপজেলার শিক্ষার্থী, অবকাঠামো, পরীক্ষার সময় কতগুলো কেন্দ্র আছে, ভেন্যু কেন্দ্র কতটি ইত্যাদি বিষয়টি পর্যালোচনা করে একটি চ‚ড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিবে। ঢাকা মহানগরসহ অন্যান্য মহানগর, বেশি জনসংখ্যা অধ্যুষিত জেলা শহরে কয়টা কেন্দ্র হবে তাও যাচাই বাছাই করবে কমিটি। এছাড়া দীর্ঘ সময় পাবলিক পরীক্ষা চলার ফলে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কী পরিমাণ পাঠবঞ্চিত হয় তাও উপস্থাপন করা হবে।
এদিকে চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় ব্যাপক হারে প্রশ্নফাঁস হওয়ার পর বেশ কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থা ঝুঁকিপূর্ণ পরীক্ষা কেন্দ্র, ভেন্যু কেন্দ্র বন্ধসহ বেশ কিছু সুপারিশ করেন। সেখানেও পরীক্ষা নেয়া জন্য আলাদা কোন ব্যবস্থা করা যায় কী সেটি সরকারের কাছে তুলে ধরেন। শিক্ষা বোর্ডগুলোর তথ্যমতে, এসএসসি, দাখিল ও সমমানের পরীক্ষার সময় ফেব্রুয়ারি-মার্চ, এইচএসসি, আলিম পরীক্ষা সময় মে-জুন এবং জেএসসি- জেডিসির সময় নভেম্বর মাসে কয়েক হাজার প্রতিষ্ঠানের অঘোষিত ছুটি থাকে।
শিক্ষকরা জানান, পরীক্ষা সময় পরীক্ষাকেন্দ্রের কাছাকাছি থাকা অন্য একাধিক বিদ্যালয় থেকে বেঞ্চ আনা হয়। এতে অন্যান্য স্কুলে পরীক্ষার কেন্দ্র না থাকার পরও পাঠদান বিঘিœত হয়। এ সুযোগে শিক্ষকরা কোচিং করাতে চাপ প্রয়োগ করে। স্কুল বন্ধ তাই কোচিং-এ পড়িয়ে তা পুষিয়ে দেয়া হবে এমন কথা বলে শিক্ষার্থীদের চাপ দিয়ে আসতে বাধ্য করেন শিক্ষকরা। পরীক্ষার সময় অনেক অভিভাবক স্ব উদ্যোগে তাঁদের সন্তানকে কোচিংয়ে পাঠান। কিন্তু দরিদ্র অভিভাবকেরা টাকার অভাবে সন্তানকে কোচিং করাতে পারেন না। ফলে তাঁদের সন্তানেরা শ্রেণিপাঠ থেকে পিছিয়ে থাকে। এমন প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও) বিভিন্ন সময় উপজেলা পর্যায়ে কেন্দ্রীয় বহুতল ভবন নির্মাণ করে বছরের সব পরীক্ষা সেখানে নেয়ার জন্য বলে আসছিলেন। এতে পাঠদান বিঘিত হবে না বলে লিখিত সুপারিশ করেন তারা। এ ব্যাপারে আন্তঃশিক্ষাবোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মু. জিয়াউল হক বলেন, এটা সময়ের দাবি। উপজেলা পর্যায়ে পরীক্ষা কেন্দ্র হলো পরীক্ষা নেয়ার চাপ অনেকাংশে কমে যাবে বোর্ডগুলোর। পরীক্ষাও একটি স্বচ্ছতা চলে আসবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন