শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইসলামী জীবন

প্রেক্ষিত ইসলাম : এসএসসি পরীক্ষার অবসরে

প্রকাশের সময় : ১৭ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

দিদারুল উল আলম

॥ এক ॥
সদ্য সমাপ্ত এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ গ্রহণকারী পরীক্ষার্থীদের সার্বিক সফলতা ও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করে একটি অতিব গুরুত্বপূর্ণ বাধ্যতামূলক(ঙনষরমধঃড়ৎু/ফরয) করণীয় সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণের উদ্দেশ্যে এ লেখা। শ্রদ্ধেয় অভিভাবকদের, সম্মানিত শিক্ষক, শিক্ষানুরাগী ও সমাজ সেবক এবং ভবিষ্যৎ কর্ণধারদের মঙ্গল কামানায়ও এ লেখা। কারণ দ্বীন ইসলাম হচ্ছে পরস্পরের মঙ্গল কামনা, কল্যাণ কামনা। মুসলিম শরীফে বর্ণিত হাদিস হচ্ছে রসূল (সা.) বলেছেন, “দ্বীন হল কল্যাণ কামনা করা। আমরা (সাহাবীগণ) আরজ করলাম কার জন্য কল্যাণ কামনা? তিনি বললেন আল্লাহর জন্য, তাঁর কিতাবের জন্য, তাঁর রাসূলের জন্য, মুসলিম শাসকের জন্য ও সাধারণ মুসলিমদের জন্য (হাদিস নাম্বার ১০২ ইসলামিক ফাউন্ডেশন)।
ভাল ফলাফলের প্রত্যাশায় এবং প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকার জন্য কাক ডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ব্যস্ত থাকতে হয় শিক্ষার্থীদের। এসএসসি পর্যায়ের অনেক শিক্ষার্থী শৈশবে কুরআন শিখলেও অধ্যায়ন ব্যস্ততায় কুরআন না পড়ায় কুরআন ভুলে গেছে আবার এমন অনেক যারা কুরআন শিখার সুযোগই পায় নাই। পরীক্ষা শেষে অবসর সময়ে নানা পরিকল্পনার সাথে, নানা কোর্সে অংশগ্রহণের পাশাপাশি কুরআন শিখারও একটা সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। যারা কুরআন তিলাওয়াত শিখেনি তাদের জন্য সর্ব প্রধান ও সর্ব প্রথম দায়িত্ব হল কুরআন তিলাওয়াত শিখা। এ শিখা কঠিন নয় সহজ। এসএসসি পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন আধাঘণ্টা থেকে একঘণ্টা সময় ব্যয় করলে ৩০-৪০ দিনে ৩০/৪০ ঘণ্টা ব্যয়ে কুরআন শিখা সম্ভব। পবিত্র কুরআনে আল্লাহর ঘোষণা হচ্ছে, “অবশ্যই আমি এ কুরআনকে তোমার বাক প্রক্রিয়ায় সহজ করে দিয়েছি, যাতে করে লোকেরা সহজে শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণ করতে পারে” (সূরা দুখান আয়াত ৫৮), সূরা ক্বামার-এর ১৭,২২,৩২ ও ৪০ আয়াতে বর্ণিত হয়েছে “আমারা এ কুরআনকে বুঝার ও উপদেশ গ্রহণের জন্য সহজ করে দিয়েছি। এমতাবস্থায় এটি বুঝার এবং এ থেকে শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণ করার কেউ আছে কি”? কুরআন শেখা জরুরি কেন?
১। আল্লাহর দৃষ্টিতে শিক্ষিত হওয়া : অনেক কিছু শিখলেও, অনেক ডিগ্রি বা পদবী বা মর্যাদার অধিকারী হলেও যারা কুরআন শিখেনি, যাদের মাঝে কুরআনের জ্ঞান নেই, তাদেরকে আল্লাহ শিক্ষিত না বলে নিরক্ষর বলেছেন। আল্লাহ বলেন, “তাদের মধ্যে এমন কিছু নিরক্ষর লোক আছে, যারা মিথ্যা আশা ছাড়া কিতাবের (কুরআনের) কিছুই জানে না, তারা শুধু ধারণাই পোষণ করে” (সূরা বাকারা ৭৮ আয়াত)। ব আর ভ এর পার্থক্য জানলাম, ব এর স্থলে ভ দিলে, ঢ় এর স্থলে ঋ দিলে অর্থ পাল্টে যায় জানলাম কিন্তু দুই নুকতাওয়ালা ক্বফ আর মধ্যখান পেঁচানো কাফ এর পার্থক্য জানার চেষ্টা করলাম না, বাংলা ৫০ টি বর্ণ শিখলাম, ইংরেজী শিখলাম ২৬টি কিন্তু ২৯টি হরফ শিখলাম না, আমি শিক্ষিত হলেও কুরআনের জ্ঞান না থাকায় আল্লাহ কি আমাকে শিক্ষিত বলেছেন?
২। সর্ব প্রথম ও সর্ব প্রধান আদেশ : আমি আল্লাহ বিশ্বাসী, নামাজ আদায় করি, যাকাত দেই, রোজা রাখি, হজ্জ্ব পালন করি কিন্তু কুরআন তিলাওয়াত শিখিনি, কুরআন তিলাওয়াত করি না, আল্লাহর অনেক আদেশ পালনকারী হলেও আমি কি আল্লাহর সর্ব প্রথম আদেশ লঙ্ঘনকারী নই? আল্লাহর সর্ব প্রথম আদেশই হচ্ছে, “পড় তোমার প্রভুর নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন” (সূরা আলাক আয়াত-১)। কুরআন না শিখে, না পড়ে, না বুঝে থাকার কোন সুযোগ কি ঈমানদারের জন্য আছে? মুসলিম হিসেবে আমরা যে নামাজ আদায় করি সে নামাজ কবুল হওয়ার জন্যও সর্বাগ্রে প্রয়োজন সূরা ক্বীরাত শিখা, কুরআন শিখা। একই আয়াতে আল্লাহ আগে কুরআন তিলাওয়াতের এবং পরে নামাজ কায়েমের নির্দেশ দিয়েছেন, “ওহী যোগে যা নাযিল করা হয়েছে তা পড় এবং নামায কায়েম কর” (সূরা আনকাবুত আয়াত ৪৫)।
৩। বাক শক্তি কুরআনের জন্য : কুরআন শিখার এবং শিক্ষা দান করার গুরুত্ব কত বেশি তা সূরা আররহমানের প্রথম ৪ আয়াতে আল্লাহ মানুষকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন এভাবে, “পরম দয়ালু আল্লাহ। তিনি কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। তিনি কথা বলতে শিখিয়েছেন। আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন বাক্যটির পূর্বে কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন কথাটি অত্যন্ত তাৎপর্যম-িত, গুরুত্ববহ ও চিন্তা-গবেষণার বিষয়। আসলে মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব নিরূপনের মাপকাঠি কুরআন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন