দিদারুল উল আলম
॥ শেষ কিস্তি ॥
আল্লাহ মানুষকে বাক শক্তি দিয়েছেন কুরআন শিখা ও শিক্ষাদানের জন্য।
৪। প্রকৃত কুরআন বিশ্বাসী : কুরআনের উপর ঈমান আনায়নকারীর সংখ্যা অনেক হলেও আল্লাহর দৃষ্টিতে কুরআনের উপর প্রকৃত ঈমান আনায়নকারী কারা? আল্লাহ বলেন, “আমি তাদেরকে যে ধর্মগ্রন্থ দান করেছি তা যারা সঠিকভাবে সত্য বুঝে তিলাওয়াত করে তারাই এর প্রতি ঈমান রাখে এবং যে কেউ এটা অবিশ্বাস করে ফলত তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে” (সূরা বাকারা আয়াত ১২১)।
৫। শ্রেষ্ঠ হতে হলে : আমরা ছেলে-মেয়েদেরকে অনেক কিছু বানাতে চাই (নিজেরাও অনেক কিছু হতে চাই বৈ কি?) সে বানানোকে শ্রেষ্ঠত্বে পরিণত করতে চাইলে, ছেলে-মেয়েদের সেরা মানুষ ও আলোকিত মানুষ বানাতে চাইলে একমাত্র পন্থা হচ্ছে কুরআন শিখানো। রসূল (সা.) বলেন, “তোমাদের মধ্যে সেই শ্রেষ্ঠ যে কুরআন মাজিদ শিখে এবং অন্যকে শিখায়”। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, অধ্যাপক তখনই সেরা ডাক্তার, সেরা ইঞ্জিনিয়ার, সেরা অধ্যাপক হবে, ছেলে-মেয়েরা সেরাদের সেরা হবে যখন কুরআন শিখে কুরআন অধ্যয়নকারী হবে।
৬। আনন্দ ও পুঞ্জীভূত সম্পদ : আল্লাহর দৃষ্টিতে আনন্দ করতে হবে কুরআনের জন্য। আর কুরআনই হচ্ছে পুঞ্জীভূত সম্পদের চেয়েও সেরা সম্পদ। সেরা আনন্দের জন্য আর সেরা সম্পদের অধিকারী হওয়ার জন্য কুরআন শিখার কোন বিকল্প নেই। আল্লাহ বলেন, “হে মানুষ! তোমাদের কাছে এসেছে উপদেশ (কুরআন) তোমাদের রবের তরফ থেকে এবং অন্তরে যা রয়েছে তার নিরাময় এবং মুমিনদের জন্য হেদায়েত ও রহমত। বল, এ কুরআন আল্লাহর অনুগ্রহে ও তার রহমতে। সুতরাং এতে তাদের আনন্দিত হওয়া উচিত। তারা যা কিছু সম্পদ পুঞ্জীভূত করে তা অপেক্ষা এটা কতই না শ্রেয়!” (সূরা ইউনুস আয়াত ৫৭ ও ৫৮)।
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, “কোন পিতা তার সন্তানকে উত্তম শিষ্টাচার শিক্ষা দেয়ার চেয়ে উত্তম কোন জিনিস দিতে পারে না”। আর উত্তম শিষ্টাচারের মূল উৎস হচ্ছে কুরআন।
কুরআন শিখার অন্তরায় : মানুষ যাতে কুরআন না শিখে, না পড়ে, না বুঝে এ ব্যাপারে শয়তানের রয়েছে প্রচ- বাধা। জিন-শয়তানের বাধা ছাড়াও মানুষের নিজের বাধাগুলো হচ্ছে চক্ষু লজ্জা, সময়ের অভাব, কঠিন মনে করা, কুরআনবিহীন ফায়দা লাভের মাধ্যমে মুক্তির আশা, আলেম-ওলামাদের প্রতি অন্ধ ভক্তি এবং মানুষরুপি শয়তানদের বাধা হচ্ছে মানুষকে কুরআন শিখতে না দিয়ে অন্য ধর্মীয় কাজে মানুষকে ব্যস্ত রাখা। প্রকৃত ঈমানদার মুসলিমকে সব বাধা অতিক্রম করে কুরআন শিখতে হবে, পড়তে হবে, বুঝার ও মেনে চলার চেষ্টা করতে হবে। কারণ কুরআন শিখা ও তেলাওয়াত করা আল্লাহর আদেশ, কুরআন শিখা ফরজ ও কুরআন শিখা সহজ। আল্লাহর আয়াতকে ভুলে থাকলে কিয়ামত দিবসে অন্ধ হয়ে উঠতে হবে (সূরা ত্বোহা আয়াত ১২৪-১২৬), কুরআন পরিত্যাগ করলে বিচারের দিন আল্লাহর রসূল (সা.)-এর অভিযোগে অভিযুক্ত হতে হবে (সূরা ফোরকান আয়াত ৩০)।
কাজেই আসুন কুরআন শিখার কোর্সে অংশ গ্রহণ করে কুরআন শিখি, প্রযোজনে প্রাইভেট বা একাকি হলেও শিখি। সমাজ সেবা ও শিক্ষার অংশ হিসাবে কুরআন শিখার কোর্সের/ক্লাসের ব্যবস্থা করে অন্যদেরকে কুরআন শিখানোর ব্যবস্থা করি এবং দুনিয়ার সফলতা ও আখিরাতের মুক্তি লাভ করি। কুরআন শিখাবিহীন জীবন ও সফলতা ষোল আনা মিছে এ কথা যেন ভুলে না যাই।
পরীক্ষার্থী বন্ধুদের মধ্যে যাদের কুরআন তিলাওয়াত সহীহ তারা এ অবসের কুরআনের পুরো বাংলা অনুবাদ দেখার চেষ্টা করার সুযোগ হাত ছাড়া করা ঠিক হবে না এবং কুরআনের অনুবাদ দেখা এ জন্যও জরুরি যাতে ধর্মের নামে কেউ বিভ্রান্ত করতে না পারে। যারা সহীহ তিলাওয়াত পারে তারা অন্য পরীক্ষার্থীদেরকে কুরআন শিখানোর একটা মহতী উদ্যোগ গ্রহণেরও সুযোগ এখনই।
লেখক : শিক্ষক, সাংবাদিক ও কলামিষ্ট
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন