শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

প্রধানমন্ত্রীর ন্যায্য ও সময়োচিত বক্তব্য

প্রকাশের সময় : ১৭ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তচিন্তা প্রকাশের নামে কোনো ধর্মের মানুষের অনুভূতিতে আঘাত দেয়া সহ্য করবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার সকালে গণভবনে নববর্ষের শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, মুক্তচিন্তার নামে কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া বিকৃত ও নোংরা রুচির পরিচয়। একটা ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়ে গেছে Ñ ধর্মের বিরুদ্ধে কেউ কিছু লিখলেই তারা হয়ে গেল মুক্তিচিন্তার। আমি এখানে মুক্তচিন্তা দেখি না। প্রধানমন্ত্রী সঙ্গত প্রশ্ন রেখেছেন, আমার ধর্ম আমি পালন করি। কিন্তু আমার ধর্ম সম্পর্কে কেউ যদি নোংরা কথা লেখে, বাজে কথা লেখে, সেটা আমরা কেন বরদাশত করব? তিনি আরো প্রশ্ন রেখেছেন, যাকে আমি নবী মানি, তার সম্পর্কে নোংরা কথা কেউ যদি লেখে, সেটা কখনো আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। নোংরা কথা, পর্ন কথা এগুলো কেন লিখবে? তিনি উল্লেখ করেছেন, এটা সম্পূর্ণ নোংরা মনের পরিচয়। আবার কেউ লিখল বলেই অন্য কেউ তাকে খুন করল, এটাও সমর্থন করেননি প্রধানমন্ত্রী। বলেছেন, একজন লিখলে আরেকজন খুন করে প্রতিশোধ নেবে, এটা ইসলাম ধর্ম বলেনি। বলা বাহুল্য, প্রধানমন্ত্রীর এই গোটা বক্তব্য, অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও সময়োপযোগী। সাম্প্রতিক কালে একশ্রেণীর ‘মুক্তমনা’ নামধারী ব্যক্তি ইসলাম সম্পর্কে এবং মহানবী হযরত মুহম্মদ (স.) সম্পর্কে তাদের ব্লগে এমন সব কথা লিখেছেন, যা উচ্চারণযোগ্য নয়। তারা মুক্তমনা পরিচয়ে ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার সুযোগে ইসলামের সৌন্দর্য ও মহানবী (স.) এবং তার পূত চরিত্রে কালিমা লেপনের চেষ্টা করেছেন। এটা করে তারা গর্হিত অপরাধই করেননি, মুসলমানদের অনুভূতিতে প্রচ- আঘাতও দিয়েছেন। এটা মুক্তমনের পরিচয় নয় এবং তাদের বক্তব্য মত প্রকাশের স্বাধীনতার অংশ বলেও বিবেচিত হতে পারে না। এটা একদিকে বিকৃত মানসিকতার পরিচায়ক, অন্যদিকে এর পেছনে তাদের একটি বিশেষ মতলব আছে বলেও প্রতীয়মান হয়। দেখা গেছে, তাদের অনেকে সামাজিক বিরোধিতার কারণে বা নিরাপত্তার অজুহাতে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। ইতোমধ্যে কিছু দুঃখজনক ঘটনাও ঘটেছে। কিছু মুক্তমনা নামধারী ব্লগার সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হয়েছেন। কে বা কারা তাদের হত্যা করেছে, এখনো তার পূর্ণাঙ্গ হদিস পাওয়া যায়নি। ‘মুসলিম উগ্রবাদীরা’ তাদের হত্যা করেছে, এমন একটি ধারণা প্রচারিত হয়েছে। কোনো কোনো গোষ্ঠীর তরফে ‘দায় স্বীকারের’ খবরও প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু এসব হত্যাকা-ের কূল-কিনারা এখনও হয়নি। এখানে পরিষ্কারই উল্লেখ করা দরকার, ইসলাম কোনো সন্ত্রাসী হামলা ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- সমর্থন করে না।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে এ দুটি প্রসঙ্গই সামনে এনেছেন। মুক্তচিন্তার নামে বা মত প্রকাশের স্বাধীনতার সুযোগে ধর্মীয় অনুভূতিকে আঘাত দেয়ার তিনি বিরোধিতা করেছেন এবং এ নিয়ে কোনো অঘটন ঘটলে তার দায় নিতে অস্বীকার করেছেন। দ্বিতীয়ত, কেউ লিখলেই তাকে হত্যা করা হবে, এটারও তিনি বিরোধিতা করেছেন। এ ধরনের হত্যাকা- ইসলামসম্মত নয় বলে অভিহিত করেছেন। তথাকথিত মুক্তমনা ব্লগারদের বিকৃত ও নিম্নরুচি নিয়ে এবং তাদের কয়েকজনের হত্যাকা- নিয়ে অনেক কথা, অনেক আলোচনা হয়েছে। একশ্রেণীর মিডিয়া তাদের ‘নায়কের’ ভূমিকায় অভিষিক্ত করে যথেচ্ছ প্রশংসা করেছে। তাদের অপকর্মকে মত প্রকাশের স্বাধীনতার সঙ্গে যুক্ত করে দেখানোর চেষ্টা করেছে, এদেশে মুক্তচিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই। পক্ষান্তরে প্রতিটি ধর্মের মানুষই তাদের বিকৃত ও নিম্নরুচির পরিচয়ে ক্ষুব্ধ ও অসন্তুষ্ট হয়েছেন। তাদের এ ধরনের অপকর্ম বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে যে কথা বলেছেন, তাতে প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মানুষের আবেগ-অনুভূতিনির্ভর কথারই প্রতিফলন রয়েছে। এর আগেও তিনি এ প্রসঙ্গে কথা বলেছেন। তবে তার এবারের বক্তব্য অত্যন্ত স্পষ্ট ও বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বত্র এর একটি ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পড়া খুবই স্বাভাবিক। এতে তথাকথিত মুক্তমনারা সতর্ক ও সাবধান হয়ে যেতে পারেন। তারা যদি সংযমী হন, ধর্মীয় অনুভূতিকে আঘাত করা থেকে বিরত থাকেন, তাহলে অঘটন ঘটনার আশঙ্কাও দূরীভূত হবে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর এই ন্যায়সঙ্গত ও সময়োচিত বক্তব্যের জন্য ধন্যবাদ জানাই।
বলাই বাহুল্য, সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে যখন কোনো বক্তব্য রাখা হয়, দিগদর্শন ও নির্দেশনা দেয়া হয়, তখন সমাজ ও জনজীবনে তার অনিবার্য প্রভাব পড়ে। আন্তর্জাতিক পর্যায়েও তা খবর ও আলোচ্য বিষয়ে পরিণত হয়। আশা করা যায়, প্রধানমন্ত্রীর আলোচ্য বক্তব্যও সমাজ ও দেশে যথাযথ ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করবে। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে দেয়া বক্তব্য বা দিগদর্শন কী রকম ত্বরিত ও কার্যকর প্রভাব ফেলতে পারে তার নজিরও সামনেই রয়েছে। ইলিশ রক্ষার স্বার্থে প্রধানমন্ত্রী নববর্ষে ইলিশ খাবেন না বলে জানিয়েছিলেন। তার ফল হাতেনাতেই পাওয়া গেছে। নববর্ষে ইলিশ খাওয়ার যে ধুম পড়ে যায়, এবার সেই ধুম লক্ষ করা যায়নি। ইলিশের দামও শেষ দিকে পড়ে যায়। এখানে স্মরণ করা যেতে পারে, পহেলা বৈশাখে পান্তা-ইলিশের রেওয়াজ পরিহারের আহ্বান জানানো হয় বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী পহেলা বৈশাখে গণভবনের আয়োজনে ইলিশ রাখবেন না, এই ঘোষণা আসে। এ নজির সামনে রেখেই আমরা বলতে চাই, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও ইস্যুতে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বক্তব্য ও দিগনির্দেশনা আসা উচিত। এতে দ্রুত কাক্সিক্ষত ফল পাওয়া সম্ভব। আমরা আশা করি, প্রধানমন্ত্রীর দ্ব্যর্থহীন বক্তব্যের পর তথাকথিত মুক্তমনারা সতর্ক ও সাবধান হবেন, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে এমন বিষয়ের কথা বলা, বক্তব্য দেয়া ও লেখালেখি করা থেকে বিরতি থাকবেন।

 

 

 

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন