পুলিশের অভিযানের মধ্যেই কুমিল্লায় বিক্রি হচ্ছে মাদক। আগে কিছুটা প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি হলেও এখন তা চলছে অনেকটা গোপনে। খুচরা আকারে বিক্রি হচ্ছে ইয়াবা ও গাঁজা। এসব খুচরা মাদক বিক্রেতা ও মাদকসেবীরা বলছেন, র্যাব ও পুলিশের চলমান মাদক বিরোধী অভিযানের কারণে আগের মতো মাদক বিশেষ করে ইয়াবা সহজে মিলছে না। একটু দাম বেশি দিয়ে ইয়াবা কিনতে হচ্ছে। দাম বেড়ে যাওয়ায় মাদক সেবীরাও এখন বেকাদায়। গতকাল বৃহস্প্রতিবার ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দিতে হানিফ পরিবহনের একটি বাসে তল্লাশি চালিয়ে ২৪ হাজার পিস ইয়াবাসহ ৩ জন নারীকে আটক করেছে দাউদকান্দি মডেল থানা পুলিশ ।
পুলিশ জানায়, গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮ টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা- গোমতী সেতুর দাউদকান্দি টোলপ্লাজায় গোপন সংবাদের ভিত্তিত্বে দাউদকান্দি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আলমগীর হোসেনের নেতৃত্বে এস, আই মোস্তফা কামাল সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী হানিফ পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস ( ঢাকা মেট্রো-গ- ১৪-৭৮০০) তল্লাশী চালিয়ে সাদা পলিথিনের ভিতরে ভিজা সুপারির খোসায় অভিনব কায়দায় লুকিয়ে ২৪ হাজার পিস ইয়াবাসহ ৩ বেঁদে মহিলাকে আটক করে পুলিশ। আটককৃতরা হলো মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার খড়িয়া গ্রামের সোহেল মিয়ার ন্ত্রী সোনিয়া (৩০), একই গ্রামের রাজিবের স্ত্রী রাজ দুলালী (২৮) ও আশিকের ন্ত্রী দিলরুবা। পুলিশ জানায়, বহনকৃত ইয়াবা গুলো মুন্সিগঞ্জের লৌহজেং নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। এ ব্যাপারে দাউদকান্দি মডেল থানায় মাদক আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এদিকে কুমিল্লা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লিখিত পাওয়া তথ্যনুসারী জানা যায়, গত ছয় মাসে কুমিল্লার বিভিন্ন স্থানে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, পুলিশ, র্যাব-১১, বিজিবি, রেলওয়ে পুলিশ অভিযান চালিয়ে প্রায় ৩২ কোটি ২৭ লাখ ২৫ হাজার ২৭২ টাকা মূল্যের বিভিন্ন ধরনের চোরাচালান ও মাদকদ্রব্য আটক করেছে কুমিল্লার আইনশৃখলা বাহিনা। এ সময় মাদক পাচারসহ অন্যান্য চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগে গত ছয় মাসে ১ হাজার ৪ শ’ ৭৭ টি মামলায় ১ হাজার ৪২৩ জনকে গ্রেফতার করে থানায় সোপর্দ করা হয়। ছয় মাসে জব্দকৃত মাদকদব্যের মধ্যে রয়েছে ২ লাখ ৫ হাজার ৯৫১ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট যার বাজার মূল্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রে মতে ১০ কোটি ২৯ লাখ ৭৫ হাজার ৫শ’ টাকা, ৪৪ হাজার ৫৮৭ বোতল ফেনসিডিল যার বাজার মূল্য ৪ কোটি ৪৫ লাখ ৮৭ হাজার টাকা, ৭ হাজার ৬৮৭ কেজি গাঁজা, যার বাজার মূল্য ৭৬ লাখ ৮৬ হাজারর ৯২০ টাকা, এছাড়াও ৬৩ বোতল বিদেশি মদ, ২ হাজার ২৬৮ লিটার বাংলা মদ, ৪৭৪ ক্যান বিয়ার, ২৮ হাজার ২৮০টি নেশাজাতীয় ইনজেকশন এবং ১ কোটি ৬৭ লাখ ৪৫ হাজার ২৫১টি অন্যান্য ট্যাবলেট। আটককৃত চোরাচালান দ্রব্যের মধ্যে রয়েছে ২ লাখ ৫৩ হাজার ৯০৮ টি শাড়ি, ৫০ হাজার ৫৯০টি থ্রিপিস/শার্টপিস, ৪৭ হাজার ১৩ মিটার থান কাপড়, ১৮ হাজার ৪০১টি তৈরি পোশাক, ২ লাখ ৪২ হাজার ৫৬০ সিএফটি কাঠ। অনুসন্ধানে জানা যায়, কুমিল্লায় মাদকের আস্তানা শাসনগাছ, বালুতুপা, পালপাড়া এলাকায় মাদক আড়তদারি খুলে বসেছে। গত ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তাদের খোলামেলা মাদক আড়তের রমরমা বাণিজ্য চললেও বাধা দেওয়ার যেন কেউ ছিল না। থানা পুলিশ, গোয়েন্দা বিভাগ, স্থানীয় মাস্তান, নেতা থেকে শুরু করে মাদক নিয়ন্ত্রণ বিভাগের বিভিন্ন স্তরে নিয়মিত মাসোয়ারা দিয়েই বহাল ছিল তাদের আস্তানা। সেখানে একাধারে খুচরা ও পাইকারিভাবে হরদম মাদক কেনাবেচা চলতো। ইয়াবা, ফেন্সিডিল, গাঁজা, হেরোইন কী নেই সেখানে ? আছে বাংলা মদেরও ছড়াছড়ি। সম্প্রতি মাদক বিরোধী অভিযানে শাসনগাছা, বালুতুপা, পালপাড়া এলাকায় মাদক ব্যবসায়ীদের বাড়িবাড়ি কয়েকবার অভিযান চালাল পুলিশ। অভিযানে ১২ মামালার আসামী পাখীকে ও হিজড়া সুমন গ্রেফতার করা হয়। জানতে চাইলে কুমিল্লার সহকারি পুলিশ সুপার মো.মহিদুল ইসলাম দৈনিক ইনকিলাব বলেন, মাদক বিরোধী অভিযান জোরদার করা হয়েছে। পুলিশ প্রতিদিনই জেলার কোন না কোন এলাকা থেকে মাদকসহ গ্রেফতার করছে মাদক ব্যবসায়ীদের। তিনি বলেন, অভিযান শুরুর আগেই স্পট থেকে এরা পালিয়ে যায়। কারণ মোবাইলের মাধ্যমে মাদক ব্যবসায়ীদের সোর্সরা আগেই খবর পৌঁছিয়ে দেয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন