বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

শফিক রেহমানের গ্রেফতার ও দেশের ভাবমর্যাদা

প্রকাশের সময় : ১৮ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বর্ষীয়ান সাংবাদিক শফিক রেহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গত শনিবার সকালে রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেন রোডের নিজ বাসা থেকে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তাকে আটক করে নিয়ে যায়। পরে গত বছরে পল্টন থানায় দায়ের করা একটি হত্যা পরিকল্পনার মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র এবং তার তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যার পরিকল্পনা-বিষয়ক ওই মামলা দায়ের করে পুলিশ। দুপুরে শফিক রেহমানকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড চায় পল্টন থানার পুলিশ। বিচারক পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। শফিক রেহমান, বলাই বাহুল্য, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একজন সাংবাদিক ও টিভি ব্যক্তিত্ব। গত বছর থানায় লিপিবদ্ধ জিডির ভিত্তিতে পরে রূপান্তরিত মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো ও রিমান্ডে নেয়ার ঘটনায় দেশে-বিদেশে ইতোমধ্যেই নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে তার গ্রেফতারের প্রক্রিয়া নিয়েও। তার স্ত্রী বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ডেমোক্র্যাসি ওয়াচের নির্বাহী পরিচালক তালেয়া রেহমান অভিযোগ করেছেন, একটি বেসরকারি টিভির সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ডিবি পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। দেশে-বিদেশে সুপরিচিত ব্যক্তি হওয়ায় তার গ্রেফতার ও রিমান্ডের ঘটনা ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। বিভিন্ন মহল থেকে বলা হয়েছে, দেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা যে মারাত্মক প্রান্তিক অবস্থানে এসে পৌঁছেছে শফিক রেহমানের গ্রেফতার ও রিমান্ড তার একটি বড় প্রমাণ। আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় বলা হয়েছে, তার মতো একজন বয়োবৃদ্ধ সাংবাদিকের গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতার দুর্দশার চিত্রই প্রকাশিত হয়েছে। উল্লেখের অপেক্ষা অপেক্ষা রাখে না, শফিক রেহমানের মতামতের সঙ্গে অনেকেরই অমিল রয়েছে, ভিন্নতা রয়েছে। কিন্তু ভিন্নমত প্রকাশের জন্য তিনি এরকম নিষ্ঠুর বাস্তবতার মুখোমুখি হবেন, সেটা মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী কেউ মেনে নিতে পারেন বলে আমাদের বিশ্বাস হয় না। 

তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে সেটার বিশ্বাসযোগ্যতাও প্রশ্নাতীত নয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ সম্পর্কে যা বলেছেন তা যথেষ্ট বলে বিবেচিত হতে পারে না। যদি সত্যিই তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকে তবে সরকারের উচিত অবিলম্বে তা প্রকাশ করা। এতে বিভ্রান্তি দূর হবে। সরকারও সমালোচনা থেকে রেহাই পাবে। অতঃপর আইন তার পথে চলবে। অনেকের মতে, সরকার তার গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে সহিষ্ণুতা ও স্বেচ্ছাচারিতার পরিচয় দিয়েছে। ডিবি পুলিশ ভিন্ন পরিচয়ে তাকে গ্রেফতার করে একটা বেনজির নজির স্থাপন করেছে। ৮১ বছরের বৃদ্ধ মানুষ, যিনি তার বাসাতেই ছিলেন, তাকে সরাসরি গিয়ে পরিচয় দিয়ে গ্রেফতার করা যেত। তিনি গ্রেফতার এড়াতে পালিয়ে যেতেন কিংবা পুলিশের কর্তব্যকর্মে বাধা সৃষ্টি করতেন, এমনটি মনে হয় না। তাছাড়া তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে আনারও খুব প্রয়োজন ছিল বলে বোধ হয় না। রিমান্ডে না নিয়েও জিজ্ঞাসাবাদ করা যায় বা যেত। একজন প্রবীণ ব্যক্তি হিসেবে এই সুযোগটি তিনি পেতে পারতেন। আইনে অনেক কিছুই থাকে। কিন্তু আইন কখনোই সদাচার ও সৌজন্য প্রদর্শনে বাধা হয়ে দাঁড়ায় না।
শফিক রেহমানের গ্রেফতার বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমর্যাদা যে আরো ক্ষুণœ করবে, সহজেই সেটা ধারণা করা যায়। দেশে মত প্রকারের স্বাধীনতা যে হুমকিতে পড়েছে একথা মিডিয়া-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, মানবাধিকার সংস্থা এবং প্রভাবশালী দেশগুলোর বাংলাদেশ সংক্রান্ত বিভিন্ন পর্যবেক্ষণ রিপোর্ট ও প্রতিবেদনে লাগাতার প্রকাশিত হচ্ছে। কে না জানে, এই সরকারের আমলে কয়েকটি প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। একজন সম্পাদক ও একজন সাংবাদিক নেতা জেলে আছেন। বিভিন্ন সময়ে আরো কয়েকজন সম্পাদক-সাংবাদিক জেল, মামলা ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। সরকারি-বেসরকারি উভয় পর্যায় থেকে বহু সাংবাদিক ও মিডিয়াকর্মী নির্যাতিত হয়েছেন। ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২৭ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন বলে সাংবাদিক ইউনিয়ন সূত্রে জানা গেছে। অথচ আজ পর্যন্ত সাংবাদিক হত্যার কোনো একটিরও বিচার সম্পন্ন হয়নি। সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানির ক্ষেত্রেও তেমন কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। সাংবাদিককতা বস্তুত সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় পরিণত হয়েছে। এসব কারণে দেশ ও সরকারের ভাবমর্যাদা অপরিমেয় মাত্রায় ক্ষুণœ ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ দিকটিতে সরকারের বিশেষভাবে নজর দেয়া উচিত। এমন কিছু করা উচিত নয় বা হতে দেয়া উচিত নয় যাতে দেশের ও সরকারের ভাবমর্যাদা আরো অবনত হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন