হজ্ব এমন একটি ইবাদাত যেখানে শারীরিক পরিশ্রম অপরিহার্য। এছাড়া সম্পূর্ণ নতুন একটি পরিবেশে বেশ কিছুদিন অবস্থান করতে হয়। ফরজ হজ্ব ছাড়াও উমরাহ পালন করতে আমাদের দেশ থেকে বিপুল সংখ্যক লোক প্রতিবছর সৌদি আরব গমন করে থাকেন। এদের অধিকাংশের জন্য হয়ত এটাই প্রথম বিদেশ গমন হয়ে থাকে। নাগরিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত এই লোকগুলো প্রথম দিনই তাওয়াফ, সাফা-মারওয়া সায়ী করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এছাড়া ভ্রমন জনিত ক্লান্তি, প্রতিকূল আবহাওয়াতো রয়েছেই। নিজের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি বিভিন্ন বয়সের লোকজন হজ্বে গিয়ে কি কি ওষুধের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। সেটাই আপনাদের সুবিধার্থে লিখছি।
১। মাংসপেশির ব্যাথার ওষুধঃ গাড়ি থেকে হোটেল, ক্বাবা তাওয়াফ, সাফা-মারওয়া সাতবার সায়ী, আবার হোটেলে আসা, প্রথম দিনই হয়ত কমবেশি পাঁচ থেকে ছয় কিলোমিটার হাঁটতে হবে। আমরা সবাই কি এতে অভ্যস্ত ? তীব্র ব্যাথা হলে আপনার দুই ধরনের ওষুধ লাগতে পারে। এক ধরনের ওষুধ জমে যাওয়া পেশি শিথিল করে (বেক্লোফেন, টিজানিডিন প্রভৃতি)। আরেকধরনের ওষুধ ব্যাথার অনুভুতি কমায় (ক্লোফেনাক, ন্যাপ্রোক্সেন প্রভৃতি)। এগুলোর সাথে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ লাগতে পারে। হালকা ব্যাথা, মাথা ব্যাথা, জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল বেশ কার্যকর।
২। ঠান্ডা জাতীয় সমস্যাঃ আমাদের অনেকেই হয়ত শীতাতপ যন্ত্রের সাথে অনভ্যস্ত থাকেন। আবার যাদের সাইনুসাইটিসের সমস্যা আছে তাদের জন্যও এসি কষ্টদায়ক। অথচ উচ্চ তাপমাত্রার এই দেশে সব হোটেল এবং মসজিদে আপনাকে এসি’তেই থাকতে হবে। সর্দি জাতীয় সমস্যার জন্য এন্টি হিস্টামিন জাতীয় ওষুধ এমন হতে হবে যাতে খুব বেশি নিদ্রাভাব হয়ে ইবাদাতে বিঘ্ন না ঘটে। ফেক্সোফেনিডিন, লেভোসেট্রিজিন কিংবা রুপাটাডিন গ্রুপের ওষুধ নিতে পারেন। নাক বন্ধের জন্য নাকের ড্রপ লাগতে পারে।
৩। খাওয়ার স্যালাইনঃ অতিরিক্ত ঘাম, পাতলা পায়খানা’র পরে খাওয়ার স্যালাইন লাগতে পারে। তবে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে স্যালাইন গ্রহনে সতর্ক থাকতে হবে।
৪। পুরনো রোগের নিয়মিত ওষুধঃ আমাদের এক বৃদ্ধ সহযাত্রী মক্কা থেকে মদিনায় গিয়ে দেখলেন তার ইনসুলিন মক্কায় ফেলে এসেছেন। অথচ তার সমস্যা হচ্ছে। পরে মদিনা থেকে এই ওষুধ কিনতে হয় উচ্চমূল্যে। যাদের ডায়াবেটিস, হাঁপানি, উচ্চ রক্তচাপের মত সমস্যা আছে, তারা তাদের ওষুধগুলোর দুইটি সেট দুই ব্যাগে রাখতে পারেন। একটি ব্যাগ হারিয়ে গেলেও যাতে সমস্যায় পড়তে না হয়। ওষুধ নিয়ে আরেকটি মজার অভিজ্ঞতা বলি। আমার আরেক সহযাত্রী ফেরত আসার দিন আমাকে বললেন, ‘ভাই বাংলাদেশে থাকতে একবেলা গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ না খেলে আমার সমস্যা শুরু হয়ে যায়। অথচ এখানে আসার পর এখানকার হোটেলের খাওয়া, ফল খেয়ে খুব ভালো আছি। একদিনও গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ লাগেনি’।
৫। অ্যান্টিবায়োটিকঃ আমাদের মধ্যে অকারণে অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যাবহারের ভয়ংকর অভ্যাস আছে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এন্টিবায়োটিক গ্রহণ করা অনুচিত। তবে এখানে ওষুধের দাম অনেক বেশি। (যেমন পঁয়ত্রিশ টাকার সেফিক্সিম ক্যাপসুল দুইশ টাকাতেও কিনতে হয়েছিল)। যারা চিকিৎসার মধ্যে আছেন, অথবা ঝুঁকিতে আছেন, তারা চিকিৎসকের পরামর্শমতে ওষুধ নিতে পারেন।
৬ অন্যান্যঃ আমাদের সহযাত্রীদের যেসব ওষুধ হঠাৎ করে দরকার হয়ে পড়েছিল সেগুলো জানাচ্ছি। পেট ব্যাথা (হায়োসিন, টাইমোনিয়াম), অ্যালার্জি (উপরে লেখা এন্টি হিস্টামিন), কোষ্ঠকাঠিন্য (ল্যাক্টুলোজ), ভ্রমনজনিত বমি (প্রোমেথাজিন, মেক্লিজিন)অনেকেরই হতে দেখা যায়।
সবশেষে কিছু কথা। অনেকেই বলে থাকেন ইবাদাতের জন্য যাচ্ছি, একটু কষ্ট হবেই। ওষুধ লাগবে কেন? উত্তর হচ্ছে, ওষুধ এজন্য লাগবে, সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় পবিত্র স্থানে আরও বেশি করে যাতে ইবাদাত করতে পারেন। অনেকেই ভাবেন, হজ্বের সময় ফ্রি ওষুধ পাওয়া যায়, ফার্মেসি আছে। দেশ থেকে ওষুধ নিব কেন? ওষুধ নিবেন কয়েকটি কারণে। ফ্রি ওষুধ সব সময় পাওয়া নাও যেতে পারে। ওষুধ সংগ্রহ করতে করতে ইবাদাতের অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায়। আর এখানে ফার্মেসিতে ওষুধের অস্বাভাবিক উচ্চমূল্য।
ওষুধের সাথে সম্পর্কযুক্ত আরেকটি ব্যাপার টিকা। আপনার নিজের সতর্কতার জন্যই টিকা দরকার। আর এজেন্সির কথায় পবিত্র স্থানে ভ্রমনের আগে মিথ্যা টিকার সনদের আশ্রয় নেওয়া গুনাহের কারণ হবে।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে সুস্থ শরীরে মকবুল হজ্ব পালনের তউফিক দান করুন। আমিন।
ষ ডাঃ আহাদ আদনান
রেজিস্ট্রার (শিশু বিভাগ),
আইসিএমএইচ, মাতুয়াইল, ঢাকা।
০১৯১২২৪২১৬৮।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন