স্টাফ রিপোর্টার : স্কুলপড়ুয়া শিশুরা যেভাবে ফাস্টফুড খাচ্ছে, এদের বয়স ৪০ বছর হবার আগেই হার্ট চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই শিশুদের ফাস্টফুডের প্রতি নিরুৎসাহিত করতে অভিভাবক, শিক্ষক, চিকিৎসক, গণমাধ্যমসহ সর্বস্তরের মানুষকে একসঙ্গে কাজ করার আহŸান জানিয়েছেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের সভাপতি ব্রিগেডিয়ার (অব:) আব্দুল মালিক।
গতকাল (রোববার) জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে ‘স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ : তামাক ও অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে সম্ভাবনা ও করণীয়’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে তিনি এ আহŸান জানান। আব্দুল মালিক বলেন, ‘অসংক্রামক রোগ যেমন হার্টের রোগ, ক্যান্সার, ডায়াবেটিস ইত্যাদি একবার হলে তা ক্রনিক ব্যাধিতে পরিণত হয়। এসব ব্যাধি প্রতিরোধ করতে হবে।’
এ জন্য শুধু সরকার নয়, সকল স্তরের জনগণকে একত্রিত হয়ে কাজ করার আহŸান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নিজেদের সন্তান, পরিবার ও সমাজের জন্য সবাইকে যার যার জায়গা থেকে কাজ করতে হবে। চিকিৎসক, নার্স, প্যারামেডিকরা যে যার অবস্থান থেকে নৈতিকতা চর্চা করলে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা যাবে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা ও নৈতিক মূল্যবোধ সৃষ্টি করতে হবে। কেউ আইন ভাঙলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সের উপাচার্য অধ্যাপক লিয়াকত আলী বলেন, ‘স্বাস্থ্য একটি উন্নয়ন ইস্যু। হেলথকেয়ার সার্ভিসের মধ্যে বেসিক সার্ভিসগুলোর চার্জ সাধারণ জনগণকে জানাতে হবে। দেশের হাসপাতালগুলো যে সার্ভিস চার্জ নিয়ে থাকে তার একটিরও সায়েন্টিফিক বেসিস নেই। ফলে জনগণকে বাড়তি টাকা গুনতে হয়। এ ক্ষেত্রে বেসিক কিছু রোগের জন্য সরকার নির্ধারিত একটি গাইডলাইন থাকতে পারে।’
স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ছাড়া জাতীয় উন্নয়ন সম্ভব না উল্লেখ করে পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এম মোজাহেরুল হক বলেন, ‘জীবন এবং সম্পদÑ এ দুটো রক্ষা করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। আমাদের যা সম্পদ রয়েছে তারা সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন করা সম্ভব। কিন্তু এক্ষেত্রে দুর্নীতি একটি বড় বাধা।’
তিনি বলেন, ‘সিগারেট, এনার্জি ড্রিংকস এবং ক্ষতিকর ফাস্টফুড উৎপাদন ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর সরকার সিনট্যাক্স (ক্ষতিকর পণ্য বা খাবার উৎপাদনের জন্য আদায়কৃত বিশেষ ট্যাক্স) আরোপ করে রোগ প্রতিরোধের জন্য অর্থায়নের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।’
সেমিনারে জানানো হয়, চিকিৎসাসেবা করাতে গিয়ে বাংলাদেশে প্রতি বছর ৬৪ লাখ মানুষ দরিদ্র হচ্ছে। অর্থাৎ শতকরা হিসাবে এর হার ৪ শতাংশ। এ ছাড়া তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের কারণে ৩ লাখ ৮২ হাজার মানুষ পঙ্গু হয় এবং ৫৭ হাজার মানুষ মারা যায়।
দক্ষিণ এশিয়ায় মানুষের মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ অসংক্রামক রোগ। এ অঞ্চলে বছরে প্রায় ৭৯ লাখ মানুষ অসংক্রামক রোগে মারা যায়। বাংলাদেশে ৭০ লাখ ডায়াবেটিস রোগী এবং ১২ লাখ ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী রয়েছে। দেশে প্রতি বছর ২ লাখ মানুষ ক্যান্সার আক্রান্ত হয় এবং দেড় লাখ মানুষ মারা যায় বলে জানান অন্য বক্তারা।
স্বাস্থ্যবিষয়ক জার্নাল ল্যানচেটের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালে ১ লাখ ৭৮ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে ওেস্ট্রাকে। ১ লাখ ৬ হাজার মানুষ হার্ট অ্যাটাকে এবং ২৮ হাজার মানুষ উচ্চ রক্তচাপজনিত হৃদরোগে মারা গেছে। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অপর এক জরিপ থেকে জানা যায়, ১৯৯০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েই সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে। ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সীদের মৃত্যুর প্রধান দু’টি কারণের মধ্যে অন্যতম একটি হৃদরোগ।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের মহাপরিচালক মো: আসাদুল ইসলাম। ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশের (ডবিøউবিবি) পরিচালক গাউস পিয়ারী মুক্তির সভাপতিত্বে এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন দি ইউনিয়নের কারিগরি পরিদর্শক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান শামীম পাটোয়ারী প্রমুখ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন