আফজাল বারী : মার্চের তৃতীয় সপ্তায় দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল করতে চায় বিএনপি। সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ১৯ মার্চ শনিবার। ইতোমধ্যে রাজধানীর তিন স্থানের জন্য অনুমতি চেয়ে চিঠি দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে। অনুমতি পাওয়া সাপেক্ষে তারিখ হেরফের হতে পারে।
দলীয় সূত্র জানিয়েছে, দলটির চেয়ারপার্সন পদে বেগম খালেদা জিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। এবারো তিনি শীর্ষ নেতা নির্বাচিত হচ্ছে। ভারমুক্ত করে পূর্ণ মহাসচিবের দায়িত্বে আসছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এদিকে আসন্ন কাউন্সিল ও পুনর্গঠন প্রস্তুতি চালানো হবে সমান্তরাল গতিতে। টার্গেট থাকলেও এর মধ্যে সারা দেশে চলমান পুনর্গঠন কাজ শেষ নাও হতে। এমন শঙ্কা প্রকাশ করেছেন পুনর্গঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বিচারপতি টিএইচ খানকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার করা হয়েছে। স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করবেন। ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলেও টিএইচ খান প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছিলেন। সদ্য ইন্তেকাল করা ড. আর এ গণি ছিলেন রিটার্নিং অফিসার।
বিএনপির গত কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে। ওই কেন্দ্র ছাড়াও এবার রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়ে অনুমতি চাওয়া হয়েছে।
২৩ জানুয়ারি রাতে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করে মার্চে কাউন্সিল করার সিদ্ধান্ত নেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সেখানেই বিস্তারিত আলোচনা হয়।
কাউন্সিলের আগে দল পুনর্গঠন শেষ হবে না বলে মনে করছেন নেতা-কর্মীরা। সেক্ষেত্রে যেসব জেলা/মহানগর/থানা/উপজেলা/পৌরসভার সকল কমিটি পুনর্গঠন সম্ভব হবে না। যে সব ইউনিটে নতুন কমিটি হবে না, সেখানে আগের কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা কাউন্সিলর হিসেবে গণ্য হবেন। আর যেখানে আহ্বায়ক কমিটি থাকবে, সেখানে আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব কাউন্সিলর হবেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, কাউন্সিল ও পুনর্গঠন প্রস্তুতি একসঙ্গে চলবে। তিনি বলেন, পরিবর্তনের জন্য কাউন্সিলর করা হয় না। অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত- এ তিনটি বিষয় বিবেচনা করে দল পরিচালিত করতে কাউন্সিল করা হয়। সব রাজনৈতিক দলে এ চর্চা আছে। বিএনপিতেও তাই করবে।
বিএনপির গঠনতন্ত্রের ৯ (ক) ধারায় বলা আছে, দলের মহাসচিব দলের চেয়ারম্যানের লিখিত পরামর্শক্রমে জাতীয় কাউন্সিলের সভা আহ্বান করতে পারবেন। কাউন্সিলের মোট সদস্য সংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ সদস্য কাউন্সিলের সভার কোরাম গঠন করবে। লিখিতভাবে সাধারণ ডাকে কিংবা পিয়ন মারফত কিংবা সংবাদপত্রের মাধ্যমে সুস্পষ্ট ১৫ দিনের নোটিশে সম্ভব হলে বছরে অন্তত একবার জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। অনুরূপভাবে সুস্পষ্ট ৫ দিনের নোটিশে কাউন্সিলেল জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হতে পারবে। জাতীয় কাউন্সিলেল মোট সদস্য সংখ্যার এক-তৃতীয়াংশের দাবিতে অনুরূপভাবে সুস্পষ্ট ১৫ দিনের নোটিশে কাউন্সিলের ‘দাবি সভা’ অনুষ্ঠান করা যাবে। তবে এ সভার নোটিশে সুস্পষ্ট দাবির বিষয়বস্তু উল্লেখ করতে হবে। এরূপ সভায় মোট কাউন্সিলরদের দুই-তৃতীয়াংশে ভোট দাবির পক্ষে না পাওয়া গেলে দাবিটি বাতিল হয়ে যাবে।
দলের সিনিয়র এক নেতা ইনকিলাবকে বলেছেন, কাউন্সিলের তারিখ চূড়ান্ত হলে নির্বাচন কমিশন নিয়মানুযায়ী চেয়ারম্যান নির্বাচনের কাজ করবেন। যেহেতু বিএনপিতে খালেদা জিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বী কেউ চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য মনোনয়নপত্র কেনেন না, সেক্ষেত্রে কাউন্সিলের অনেক আগেই খালেদা জিয়া ফের চেয়ারপারসন নির্বাচিত হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মইন খান বলেন, সাধারণত কাউন্সিলে দলের কাউন্সিলরা দলীয় চেয়ারপারসনকে জাতীয় নির্বাহী কমিটি গঠনের দায়িত্ব দেন। চেয়ারপারসন কারো কারো সঙ্গে কমিটি গঠনের বিষয়ে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানান। দলের মহাসচিবও দলীয় চেয়ারপারসন নিয়োগ দেন। কাউন্সিলরদের দেয়া ক্ষমতাবলে চেয়ারপারসন যাকে যে পদেই নিয়োগ দেবেন, তিনিই নির্বাচিত বলে গণ্য হবেন।
গত শনিবার রাতে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় দুইটি প্রস্তাব দেন। একটি প্রস্তাব হলো- মন্ত্রী-এমপিরা সংশ্লিষ্ট জেলার সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে থাকতে পারবেন না। দি¦তীয়, এক নেতার এক পদ থাকতে হবে। বৈঠকে স্থায়ী কমিটির এক নেতা বাদে সবাই একমত পোষণ করেন। সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলে এ দুইটি বিষয় গঠনতন্ত্রে অন্তর্ভুক্ত হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন