শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

এ কেমন সরকারী অফিস?

২৬ জন কর্মকর্তা কর্মচারীর মধ্যে কেউই অফিসে নেই!

ঝিনাইদহ থেকে মোস্তফা মাজেদ | প্রকাশের সময় : ৩১ জুলাই, ২০১৮, ৪:১২ পিএম

ঘড়ির কাটা তখন মঙ্গলবার দপুর ১২টা। ঘটনাস্থল ঝিনাইদহ যুব প্রশিক্ষন কেন্দ্র। অফিসের তিনটি রুম খোলা। ফ্যান ঘুরছে আপন মনে। প্রতিটা রুমে লাইট জ্বলছে। অফিসের কর্মকর্তার সংখ্যা ৭ জন। আর কর্মচারী ১৯ জন। হাজিরা খাতাগুলো টেবিলের উপর রাখা। তাতে সবার সাক্ষর করা। কিন্তু কর্মকর্তা কর্মচারীদের উপস্থিতি নেই। এমন চিত্র শুধু একদিনের নয়, প্রতিদিনের। খোজ নিয়ে জানা গেল, ঝিনাইদহ যুব প্রশিক্ষন কেন্দ্রের ডেপুটি কো-অডিনেটর কৃষিবিদ এম এ খালিদ যোগদানের পর থেকে দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে কর্মস্থলে আসেন না। তিনি গাইবান্ধা থেকে বদলী হলেও থাকেন ঈশ্বরদী শহরে। ঝিনাইদহ যুব প্রশিক্ষন কেন্দ্রের এক নারী প্রশিক্ষকের সাথে যৌন কেলেংকারীর ঘটনা জানাজানি হয়ে গেলে তিনি আর অফিস করেন না। মাসের শেষে বেতন ও অন্যান্য টাকা পৌছে দেওয়া হয় তার নিজস্ব একাউন্টে। অফিসের ফাইল সাক্ষর করেন বাড়িতে বসে। আর হাজিরা খাতায় তার পক্ষে জাল সাক্ষর করেন ক্যাশিয়ার আমজাদ হোসেন ও পিয়ন আনোয়ার হোসেন। অভিযোগ উঠেছে গত বছর ছুটি দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে ঝিনাইদহ যুব প্রশিক্ষন কেন্দ্রের এক নারী প্রশিক্ষককে নিয়ে যান ঈশ্বরদীর নিজ বাড়িতে। সেখানেই তার উপর যৌন নিপীড়ন চালান ডেপুটি কো-অডিনেটর এম এ খালিদ। পরবর্তীতে ওই নারী গর্ভবর্তী হয়ে পড়েন। এ নিয়ে তার স্ত্রীর সাথে ঝগড়া বিবাদের খবরটি ডিপার্টমেন্টে হৈ চৈ ফেলে দেয়। গাইবান্ধা যুব প্রশিক্ষন কেন্দ্রের আরেক ডেপুটি কো-অর্ডিনেটর জাকাত আলী এক লিখিত পত্রে খালিদের নারী কেলেংকারী ও আর্থিক ক্ষতি সাধনের বিষয়টি যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচলককে অবহিত করেন। ওই সময় ডেপুটি কো-অডিনেটর এম এ খালিদ ঝিনাইদহে বদলী হলেও থাকতেন গাইবান্ধার ডরমেটরি ভবনে। ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল ৩৪.০১.৩২০০.০০০.১৮.৪২.২০০৫ নং স্মারকে দেওয়া ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে গাইবান্ধায় একটানা ১২ বছর থাকার সুবাদে এক ছাত্রীর সাথে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন ডেপুটি কো-অর্ডিনেটর এম এ খালিদ। তাছাড়া ঝিনাইদহের ওই নারী প্রশিক্ষকের সাথেতও তিনি মোবাইলে ম্যাসেজ প্রদান ও অশ্লিল আলাপ আলোচনার রেকর্ড খালিদের স্ত্রী জানতে পারেন। এ নিয়ে তার স্ত্রীর সাথে দাম্পত্য কলহ চলছে। ডেপুটি কো-অডিনেটর এম এ খালিদ যে অফিস করেন না তা নিয়ে ঝিনাইদহ যুব প্রশিক্ষন কেন্দ্রের ২১ জন কর্মকর্তা কর্মচারী মহাপরিচালক বরাবর ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর ২০৩ নং স্মারকে লিখিত অভিযোগ করেন। এতো কিছুর পরও যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচলক অফিস নীরব ভুমিকা পালন করছে। মঙ্গলবার দুপুরে অফিসটি পরিদর্শনকালে দেখা গেছে অফিসের সহকারী প্রশিক্ষক জসিম উদ্দীন ও ক্যাশিয়ার আমজাদ হোসন অফিসের বাইরে লুঙ্গি পরে ঘোরাঘুরি করছেন। দুপুর ১২টার সময়েও অফিসে কেও নেই কেন ? এমন প্রশ্ন করা হলে ক্যাশিয়ার আমজাদ হোসেন সোজা উত্তর দেন দুপুরের খাবার খেতে গেছেন। পরক্ষনে তিনি আবার আগের কথা ঘুরিয়ে বলেন জোহরের নামাজ পড়তে গেছেন। এক টানা অফিসে অনুপস্থিতির বিষয়টি জানতে ঝিনাইদহ যুব প্রশিক্ষন কেন্দ্রের ডেপুটি কো-অডিনেটর কৃষিবিদ এম এ খালিদের মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেন নি। এমনকি যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচলক (ডিজি) আ,ন আহম্মদ আলীও ফোন রিসিভ করেন নি। তবে ঝিনাইদহ যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের উপ-পরিচলক শাহিদুল ইসলাম জানান, ডেপুটি কো-অডিনেটর কৃষিবিদ এম এ খালিদ দীর্ঘদিন ধরেই অফিসে আসেন না। অফিসে না আসার কারণে যুব প্রশিক্ষন কেন্দ্রটিতে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। কর্মকর্তা কর্মচারীরা ঠিক মতো অফিসই করেন না। তিনি বলেন এ বিষয়ে মহাপরিচালক বরাবর একাধিকবার পত্র দিয়ে জানানো হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
৩১ জুলাই, ২০১৮, ৫:১৩ পিএম says : 0
Government service lokder kaj toh aktai, office asha, signature dawa, month end salary nawa, but kaj korlay upori pawa, nochat no kaj. Ater protibad ki vabay kora jay tai nea vabun.
Total Reply(0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন