নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের পদত্যাগ ও ঘাতক বাসচালকের ফাঁসিসহ ৯ দফা দাবিতে রাজধানীর কয়েকটি স্থানে বাসে আগুন এবং যানবাহন ভাঙচুরের কারণে বাস সরিয়ে নিয়েছেন পরিবহন মালিকরা।
বুধবার সকালে মিরপুর, শ্যামলী, মহাখালী, বিজয় সরণি, উত্তরা, ফার্মগেট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, হাজার হাজার মানুষ বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছেন। কয়েকটি বাস এলেও তাতে সবাই উঠতে পারছেন না।
বিক্ষোভে সড়ক আটকে থাকায় রাজধানীবাসীর চলাচল যেমন থমকে গেছে, তেমনি পথে পথে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
সকালে অফিসমুখী যাত্রী, স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের পায়ে হেঁটে ও রিকশায় যেতে হচ্ছে। রাজপথের সড়ক ছিল ফাঁকা। তবে দূরপাল্লার বাস ও ট্রেন চলতে দেখা গেছে।গত রোববার ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর বিমানবন্দর সড়কে গাড়ি ভাঙচুর করে রাস্তা আটকে বিক্ষোভ করেছিল শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থীরা।
সোমবার তাদের পাশাপাশি ধানমণ্ডিতে কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা সড়কে নেমে বিক্ষোভ দেখায়। মঙ্গলবার শিক্ষার্থীরা মতিঝিল শাপলা চত্বরসহ যাত্রাবাড়ী থেকে উত্তরা পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সড়কের ২০টি পয়েন্ট অবরোধ করে। এতে ভাঙচুর হয় কিছু গাড়ি।
সকালে ইসিবি চত্বরে বাসের অপেক্ষায় থাকা মো. আলামিন বলেন, সকাল ৭টা থেকে দাঁড়িয়ে থেকেও কোনো বাস পাচ্ছি না। এতে চরম ভোগান্তিতে রয়েছি।
এদিকে উত্তরার স্কলাস্টিকা, উত্তরা ইউনিভার্সিটি, বিজিএমইএ ফ্যাশন ডিজাইন অ্যান্ড টেকনোলজি, মাইলস্টোন কলেজ, উত্তরা কমার্স কলেজ, উত্তরা হাইস্কুলসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর আজ সকাল থেকেই সড়কে নেমে বিক্ষোভ করার কথা রয়েছে। তারা উত্তরা নর্থ টাওয়ার ও বিএনএস সেন্টারের সামনে অবস্থান নিচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
সকাল থেকে পুলিশ রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নিয়েছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীরা আবারও জড়ো হতে শুরু করেছে।
উত্তরা ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা আমাদের ভাইবোন হত্যার বিচার চাই। যারা শিক্ষার্থীদের মৃত্যু নিয়ে বিদ্রূপ করে তাদের পদত্যাগ চাই। বিচারের নিশ্চয়তা না পেলে আমরা রাজপথ ছাড়ব না।
মঙ্গলবার শিক্ষার্থীরা মতিঝিল শাপলা চত্বরসহ যাত্রাবাড়ী থেকে উত্তরা পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সড়কের ২০টি পয়েন্ট অবরোধ করে। এদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত অবরোধ ও বিক্ষোভ চলে। এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা উত্তরা এবং নিউমার্কেট এলাকায় তিনটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয়।
এর পাশাপাশি তারা বিভিন্ন সড়কে যানবাহন ভাঙচুরও করে। মিরপুর ও উত্তরায় বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ শিক্ষার্থীদের সড়ক থেকে সরিয়ে দিতে লাঠিপেটা করে। মিরপুরে পুলিশের লাঠিপেটায় তিন শিক্ষার্থী আহত হয়।
রাজপথে নেমে আসা বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, নৌমন্ত্রীর পদত্যাগ ও ঘাতক চালকের বিচারের নিশ্চয়তা না পেলে তারা রাজপথ ছাড়বে না।
রোববার বাসচাপায় শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। আহত হয় আরও ১৫ শিক্ষার্থী। এ ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার তৃতীয় দিনের মতো শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমে এলে পুরো ঢাকা স্থবির হয়ে পড়ে।
দুপুর ১টা থেকে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত উত্তরার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা জসীমউদ্দীন রোডে বিক্ষোভ করে। তাদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীদের ইটপাটকেল নিক্ষেপে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পিছু হটতে বাধ্য হন। এ সময় শিক্ষার্থীরা শতাধিক বাস ভাঙচুরের পাশাপাশি দুটি বাসে অগ্নিসংযোগ করে। এর আগে দুপুরে সায়েন্স ল্যাব এলাকায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা একটি বাসে আগুন দেয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন