হাজার হাজার শিক্ষার্থীর বিক্ষোভে উত্তাল রাজধানীর খিলক্ষেত থেকে উত্তরা। তারা সড়ক অবরোধ করে বাসচাপায় শিক্ষার্থী নিহতের বিচার ও নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের পদত্যাগ দাবিতে স্লোগান দিচ্ছেন।
অর্ধশতাধিক স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী সড়কে অবস্থান নেয়ায় খিলক্ষেত থেকে উত্তরায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
বিক্ষোভের কারণে আবদুল্লাহপুর-বিমানবন্দর পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক এবং কামারপারা-আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত ঢাকা-উত্তরবঙ্গ মহাসড়কে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় উত্তরা ও খিলক্ষেতে সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে জড়ো হয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করেন।
একপর্যায়ে তারা কয়েকটি গাড়িতে হামলা করে ভাঙচুর চালান। এতে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। পরে সড়ক অবরোধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিন দেখা গেছে, সকাল ১০টা থেকে বিক্ষোভ করছেন রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, উত্তরা হাইস্কুল, উত্তরা কলেজ, উত্তরা কমার্স কলেজ, টঙ্গী সরকারি কলেজ ও বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজসহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা।
এ ছাড়া উত্তরা ইউনিভার্সিটি, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি, শান্ত-মরিয়াম ইউনিভার্সিটি, উত্তরা ইউনিভার্সিটি ও আইইউবিএটি ইউনিভার্সিটিসহ বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীও মিছিল বের করেন।
শিক্ষার্থীরা জসীমউদ্দীন রোড, বিমানবন্দর গোলচত্বর, কাওলা ওভারব্রিজ, খিলক্ষেত, বিএনএস সেন্টারের সামনে হাউস বিল্ডিং নর্থ টাওয়ারের সামনে এবং আইডিয়ালের সামনে রাস্তা অবরোধের চেষ্টা করেন। তবে পুলিশ বারবার ধাওয়া দিয়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দিতে চেষ্টা করে।
পরে জসীমউদ্দীন রোড থেকে খিলক্ষেত পর্যন্ত মহাসড়কের দুই পাশেই অবরোধ করে হাজার হাজার ছাত্র বিভিন্ন গাড়িতে ভাঙচুর চালান। এর ছবি তুলতে গেলে তারা সংবাদকর্মীদের দিকেও তেড়ে আসেন।
বিক্ষোভ সামলাতে সড়কে পাঁচ শতাধিক পুলিশকে অবস্থান করতে দেখা গেছে। তবে পুলিশের চেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি। ফলে বিক্ষোভকারীদের থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখছে পুলিশ।
বিক্ষোভের বিষয়ে জানতে চাইলে উত্তরা হাউস বিল্ডিংয়ের সামনে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ছাত্র যুগান্তরকে বলেন, আমরা সহপাঠী হত্যার বিচার চাই। আমরা রাস্তায় ও গণপরিবহনে নিরাপদে চলার নিশ্চয়তা চাই। আমাদের দাবি বাস্তবায়ন হলেই আমরা ঘরে ফিরে যাব।
উল্লেখ্য, গত রোববার দুপুরে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনের বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম ও একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম ওরফে মীম নিহত হন। বাসচাপায় আহত হন আরও ১৩ জন।
এ ঘটনা কেন্দ্র করে পাঁচ দিন ধরে রাজধানীজুড়ে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় তারা দোষী পরিবহনকর্মীদের বিচার ও নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের পদত্যাগসহ ৯ দফা দাবি জানাচ্ছেন।
এদিকে বুধবার বিকাল ৩টায় সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের ৯ দফা দাবি মেনে নেয়ার ঘোষণা দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তোমাদের বার্তা দেশব্যাপী পৌঁছে গেছে। তোমাদের দাবি মেনে নেয়া হয়েছে। কাজেই তোমরা অবরোধ তুলে নাও, ক্লাসে ফিরে যাও।
এ আহ্বানের আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং নৌপরিবহনমন্ত্রী ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাজাহান খান, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, পুলিশের আইজিপি জাভেদ পাটোয়ারী, ডিএমপি পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া, বাস মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের
সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী প্রমুখ বৈঠক করেন।
পরে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আজ সারা দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
এ সিদ্ধান্ত নেয়ার পর পরই রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার বিষয়টি জানিয়ে অভিভাবকদের কাছে এসএমএস পাঠানো হয়। এমনকি বিভিন্ন কোচিং সেন্টার থেকে এসএমএস দিয়ে আজকের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের জানিয়ে দেয়া হয়।
তবে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই রাজধানীর শাহবাগ, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, লালমাটিয়া, আসাদগেট, কলেজগেট, মহাখালী, খিলক্ষেত, উত্তরাসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানেও বিক্ষোভ হচ্ছে।
মন্তব্য করুন